রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হলেও দাম বেড়ে যায়, তবে লভ্যাংশ যায় না চাষির ঘরে। সংরক্ষণ না করে অনেকেই আলু বিক্রি করেন। হিমাগারে আলু রাখতে যে ব্যয়, তা পুষিয়ে ওঠা যায় না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে আলুর বহুমুখী ব্যবহার সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হয়েছে অহিমায়িত মডেল ঘর। যেখানে মাচা পদ্ধতিতে বিনা খরচে বাড়িতেই প্রাকৃতিকভাবে আলু সংরক্ষণ করে চাষিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখবে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, আলু উৎপাদনে সারাদেশের অন্যতম বগুড়া জেলায় এ বছর ৬০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমি থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১২ লাখ টনের বেশি। জেলায় চাহিদা ৩ লক্ষাধিক টন। বাকি আলুর মধ্যে সংরক্ষণের জন্য ৪২টি হিমাগারে ধারণক্ষমতা প্রায় ৪ লাখ টন। এদিকে বিশাল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের অভাবে এবং আর্থিক সংকট মোকাবিলায় অনেক চাষি কম দামে বিক্রি করেন। মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়িয়ে দেয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ ভোক্তা। এবার চাষিদের আশার আলো দেখাচ্ছে সরকারি খরচে নির্মিত কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অহিমায়িত মডেল ঘর। জেলার সাত উপজেলায় ৬৩টি অহিমায়িত মডেল ঘরে প্রায় দেড় হাজার চাষি তাদের উৎপাদিত প্রায় ২ হাজার ২০০ টন আলু বিনা খরচে সংরক্ষণ করবেন। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩৫ টন করে আলু সংরক্ষণ করা যাবে ৩ থেকে ৪ মাস, আবহাওয়া ভালো থাকলে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত রাখা যাবে।
বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া এলাকার চাষি তৌহিদুল জানান, তারা ইচ্ছামতো আলু সংরক্ষণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিক্রি করে লাভবান হবেন। এখানে আলু রাখার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যখন ইচ্ছা রাখা যাবে যখন ইচ্ছা বের করে পারিবারিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি হাটে-বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। শেখেরকোলা এলাকার উদ্যোক্তা আলফাজ জানান, এমন মডেল ঘর পেয়ে তারা উপকৃত, কোল্ড স্টোরের সঙ্গে তেমন কোনো পার্থক নেই, স্টোরে বৈদ্যুতিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, এখানে প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হবে। ভবিষ্যতে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মডেল ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বগুড়ার সিনিয়র কর্মকর্তা মমতা হক জানান, আলু সংরক্ষণে জায়গার অভাব ও নগদ টাকার প্রয়োজনে অনেকে আলু বিক্রি করে দেন। অহিমায়িত মডেল সংরক্ষণাগারে কৃষকরা বিনা খরচেই আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন। আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশ, কাঠ, ঢেউটিন, সিমেন্টের পিলার, ককসিট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে ২৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ১৫ ফুট প্রস্থের মডেল ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে কৃষকদের জমিতেই। আলু বিক্রি করে দেওয়ার পর পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, কচুরমুখিসহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণ করা যাবে। কাটা, ফাটা, অপরিপক্ব, রোগযুক্ত ও ছাল ওঠা আলু রাখা যাবে না। সংরক্ষণাগারে যাতে সূর্যের আলো ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক শাহানা আখতার জাহান জানান, আলু সংরক্ষণের ঘর পেয়ে প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হবেন। যারা অল্প পরিমাণে আলু চাষ করে, তারা এ ঘরে হিমাগার ভাড়া, লোড-আনলোড ও পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন খরচ ছাড়াই আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।
আলুর বহুমুখী ব্যবহার সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক জানান, বিগত বছরে যারা ঘর পেয়েছেন তারা লাভবান হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন, এতে কৃষক উৎসাহিত হচ্ছেন। এ প্রকল্প অব্যাহত থাকলে আলুর দাম একেবারে কমে যাওয়া আবার একেবারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। বাজারে প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি।