বহিরাগতের হাতে টানা ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) সহযোগী অধ্যাপক ডা. অনিন্দিতা দত্ত। সকাল আটটা থেকে দুপুর প্রায় দুইটা পর্যন্ত ক্যান্সার ভবনের চার তলার নিজ কক্ষে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় সেনা ও পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন।
ডা. অনিন্দিতা দত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ ব্লকে, ক্যান্সার ভবনে। তার বাবা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা জানান, গতকাল রবিবার সকাল ৮টায় অফিসে আসার পর থেকেই কিছু বহিরাগত লোক ডা. অনিন্দিতা দত্তকে ক্যান্সার ভবনে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের বিরুদ্ধে ঢাকা ও কুমিল্লায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। সেসব মামলায় আসামি করা হয়েছে অনিন্দিতা দত্তকেও। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ডা. অনিন্দিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছিলেন না। দুদিন ধরে তিনি আসা শুরু করেছেন। আমাদের ধারণা এটা ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের কুমিল্লার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাজ।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সকালে এক দল লোক এসে ক্যান্সার ভবনের চার তলার একটি কক্ষে অনিন্দিতাকে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে শাহবাগ থানা পুলিশ ও বেলা দেড়টার দিকে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, এরা সবাই বাইরের লোক। ভেতরের কোনো লোক না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে প্রক্টরসহ আমি ভিসির পিএসকে নিয়ে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে গিয়েছি। প্রাণ গোপাল দত্ত স্যারের মেয়েকে গাড়িতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। তাকে (ডা. অনিন্দিতা দত্ত) বাসায় পৌঁছানোর পর আমি ফিরেছি।
এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পুরোটা পালন করেছি। অবরোধকারীদের কাউকে চিনতে পারিনি। সবাই বহিরাগত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ডা. অনিন্দিতা অবরোধকারীদের মধ্যে কাউকে কাউকে চেনেন। একজন কুমিল্লার আছেন, হিন্দু ধর্মের। উনি এটা অর্গানাইজ করেছেন। বিষয়টা কুমিল্লার। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী কেউ জড়িত নন। এমনকি সহকর্মী হিসেবে সবাই ডা. অনিন্দিতাকে রক্ষা করেছেন। আমরা সবাই মিলে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আরও বলেন, সর্বশেষ আমরা সেনাবাহিনীর সেগুনবাগিচার ক্যাম্পে ফোন করি। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন আর্মির তিনটা গাড়ি নিয়ে সেনা সদস্যসহ আসেন। পরে সেনা সদস্যরা তাদের গাড়িসহ ডা. অনিন্দিতাকে বাসায় পৌঁছে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, আমরা তাদের চিনি না। কিছু কুমিল্লার লোক। কিছু এখান থেকে জোগাড় করেছে। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা চাঁদাবাজি বা এমন কিছু একটা ধান্দা করছিল। এটা অভ্যুত্থানের পর থেকেই করে আসছিল। তাদের ধান্দাটা সফল হয়নি। কারণ ডা. অনিন্দিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সুতরাং তার দায়িত্ব আমাদের।