জাতীয় দলে আপনার জার্সি নম্বর কত হবে? প্রশ্নটা শুনেই তাৎক্ষণিক হামজা চৌধুরীর জবাব, ‘৮ নম্বর জার্সি।’ ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে হামজার অভিষেক হবে ৮ নম্বর জার্সিতে। যে জার্সি পরে টানা ১১ বছর দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। তারও আগে এই ৮ ছিল দেশের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার আরমান মিয়ার। হামজা ৮ পরবেন শুনে আনন্দে উদ্বেল মামুনুল। বলেছেন, হামজাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা না বলে উচিত সবার তাকে বরণ করে নেওয়া। মামুনুল মনে করেন, হামজার এখন আর নিজেকে প্রমাণের কিছু নেই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যে ফুটবলার দীর্ঘ সময় ধরে খেলে, তার মান নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, মামুনুল মনে করেন তাদের উচিত আয়নায় নিজেদের মুখ দেখা।
খেলা শুরুর পর থেকেই আরমান মিয়াকে আইডল হিসেবে নিয়েছেন মামুনুল। এখনো খেলা চালিয়ে যাওয়া এ মিডফিল্ডার প্রায় ১৫ বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। ২০২১ সালে জাতীয় দল ছাড়ার আগ পর্যন্ত ছয় বছর ছিলেন অধিনায়ক। আরমান মিয়ার ৮ নিজের করে নিতে পারা তার জন্য বিশেষ কিছু। আর এখন যখন শুনলেন হামজা ৮ পরে খেলবেন তখন ভীষণ খুশি হয়ে বললেন, ‘আটের চেয়ে আমার বেশি দুর্বলতা ছিল সাত নিয়ে। তবে আমার আইডল (আরমান মিয়া) ৮ পরে খেলতেন। তাই সেই জার্সিটা ২০১০ সালে যখন কোচ জোরান জর্জেভিচ আমাকে দিলেন, সাদরে গ্রহণ করলাম। ঠিক তখন থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই জার্সি পরেই খেলেছি। এখন এ জার্সি হামজা পরবেন। ফুটবলে জার্সি কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখবেন, দলের সেরারাই ৮ পরে খেলেছেন। হামজা দেশের ফুটবলের তর্কাতীত সেরা। আমি তাকে মহাতারকাই বলব। তার মতো ফুটবলার যে বাংলাদেশে খেলতে রাজি হয়েছেন, সেটাই অনেক কথা। অথচ অনেককেই তাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতে শুনছি। এটা মোটেই ঠিক নয়। তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক করার সুযোগই নেই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেকে প্রমাণ করেই বছরের পর বছর খেলছেন তিনি। আমি তো মনে করি, হামজা দলে আসা মানে দেশের ফুটবল নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। হামজার তারকাখ্যাতি, ব্র্যান্ড ভ্যালু এখন আমাদের কাজে লাগাতে হবে ইতিবাচকভাবে। হামজা জানেন, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কী রকম সুযোগ-সুবিধা। সুতরাং আমি মনে করি এখানেও তাকে সে রকম সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। আর হামজা সুযোগ-সুবিধা পেলে দলের অন্যদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়বে।’ মামুনুল মনে করেন হামজার মাধ্যমে বিদেশের লিগে খেলার একটা দরজা উন্মোচিত হবে স্থানীয়দের সামনে, ‘হামজা যখন আমাদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলা শুরু করবেন, মিশবেন, এ দেশের ফুটবল সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানবেন, তখন নিশ্চয়ই তিনি দুই-একজনের ব্যাপারে দেশের বাইরের লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। হোক সেটা নিচের সারির লিগ, তিনি তো অন্তত ক্লাবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পারবেন। আমি শুধু ভারত ম্যাচ নিয়ে ভাবছি না। আমি ভাবছি হামজাকে নিয়ে, জাতীয় দলের আগামীর ৮-১০ ম্যাচ পর দলের পরিস্থিতি কেমন হয়। আমি তো মনে করি, হামজা আমাদের জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের ফুটবলাররাও নিজেদের সেরাটা দেবেন।’
সম্প্রতি হামজাসহ প্রবাসী ফুটবলারদের জাতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে অনেক সাবেক ফুটবলার নেতিবাচক কথা বলতে শুরু করেছেন। মামুনুল তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এসব আলোচনা বন্ধ করতে। হামজাসহ অন্যদের প্রতি ইতিবাচক হতে বলেছেন তিনি। তাতে আদতে ভাবনা থেকে শুরু করে দেশের ফুটবলে সবকিছুতেই আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন, যা ভীষণভাবে প্রয়োজন।