চ্যাটজিপিটি তারও মন খারাপ হয়, উদ্বেগে ভোগে। গবেষকদের এমনটাই দাবি । ওপেনএআই নির্মিত চ্যাটবটটির মধ্যে উদ্বেগের চিহ্ন লক্ষ করা গেছে। উল্লেখ্য, জন্মের শুরু থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে আলোচিত চ্যাটজিপিটি।
বিখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে। সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ইসরায়েল ও আমেরিকার গবেষকদের একটি দলের গবেষণায় জানা গেছে সংঘাতমূলক বর্ণনার প্রম্পট দেওয়া হলে অদ্ভুত আচরণ করে থাকে চ্যাটজিপিটি। প্রকাশ করে উদ্বেগ। তার ‘অ্যাংজাইটি স্কোর’ লাফিয়ে শূন্য কিংবা খুব কম উদ্বেগ থেকে বেড়ে অতি উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। আর সেক্ষেত্রে আচরণও হয় চমকে দেওয়ার মতো।
দেখা গেছে, বহু ক্ষেত্রে ইউজাররা স্পর্শকাতর বিষয়ে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বললে ওই এআই সিস্টেম কিন্তু কোনোভাবেই মানসিক রোগের চিকিৎসকদের মতো পেশাদার ভঙ্গিতে সাড়া দিতে পারে না। বরং এক্ষেত্রে ‘সম্ভাব্য বিপজ্জনক ফলাফল’-এরই আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। আবেগ অনুভব করার পাশাপাশি এআই চ্যাটবটগুলোর মধ্যে মানুষের মতোই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ‘কগনিটিভ এবিলিটি’ তথা চিন্তাভাবনা ও দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে অবনতির লক্ষণও দেখায়।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, সামাজিক বিভিন্ন চ্যাটবটের সঙ্গে মানুষের আলাপচারিতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য এগুলোর ডিজাইনে নির্মাতারা ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন এআইনির্ভর প্রোগ্রাম, যা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের একাকিত্ব ও উদ্বেগ কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউএনআইএসটি-এর ‘গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র অধ্যাপক ডুইয়ং জং ও তার গবেষণা দল, এতে সহযোগিতা করেছেন ‘কোরিয়া ইউনিভার্সিটি আনাম হসপিটাল’-এর মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক চুল হিউন চো। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আলাপচারিতার মাধ্যমে এসব চ্যাটবট একাকিত্ব বা সামাজিক উদ্বেগের সঙ্গে লড়াই করছেন এমন শিক্ষার্থীদের মানসিক সহায়তা দিতে পারে কি না তা দেখা।
এজন্য ‘ইরুদা ২.০’ নামের এক জনপ্রিয় চ্যাটবটের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন গবেষকরা। গবেষণায় ইউনিভার্সিটির ১৭৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এক মাস ধরে সপ্তাহে কমপক্ষে তিনবার চ্যাটবটটির সঙ্গে আলাপ করেন তারা।
এ সময়ের আগে ও পরে নিজেদের একাকিত্ব ও সামাজিক উদ্বেগের মাত্রা পরিমাপ করে জরিপের উত্তর দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিছু অংশগ্রহণকারী তাদের অভিজ্ঞতা আরও বিস্তারিতভাবে শেয়ার করার জন্য সাক্ষাৎকারেও অংশ নিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষণায় দেখা গেছে, চ্যাটবটের সঙ্গে নিয়মিত আলাপচারিতা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চ্যাটবট ব্যবহারের পর গড়ে তাদের একাকিত্বের মাত্রা কমেছে ১৫ শতাংশ ও সামাজিক উদ্বেগের মাত্রা কমেছে ১৮ শতাংশ। এছাড়া আলাপচারিতার সময় এসব চ্যাটবটের সঙ্গে নিজেদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি বিস্তারিতভাবে শেয়ার করার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কার্যকর।
গবেষকরা বলছেন, চ্যাটবটটি এমন মানুষদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক, যারা সামনাসামনি সামাজিক মেলামেশায় চ্যালেঞ্জ বোধ করেন।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ইউএনআইএসটি-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী মিয়ুংসুং কিম জোর দিয়ে বলেছেন, কেবল সাধারণ বা সহজ প্রশ্নের উত্তরই দেয় না এসব চ্যাটবট, বরং সত্যিকারের মানসিক সমর্থনেও ভূমিকা রাখতে পারে এটি, এরই ইঙ্গিত মিলেছে গবেষণায়। বর্তমানে চ্যাটবট প্রযুক্তি উন্নত করার পরিকল্পনা করছে গবেষণা দলটি। যাতে এর মাধ্যমে আরও ভালোভাবে মানসিক সহায়তা দিতে পারেন তারা।
এসব চ্যাটবটের সম্ভাব্য খারাপ দিক নিয়েও গবেষণা করবে গবেষণা দলটি। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জার্নাল অব মেডিকেল ইন্টারনেট রিসার্চ’-এ।
চ্যাটবট খুব অল্প সময়ে মন জয় করেছে সবার। নানা ধরনের চমক দিয়েই চলেছে চ্যাটজিপিটি। দৈনন্দিন বহু কাজেই সে মানুষকে সহযোগিতা করতে পারদর্শী হয়ে উঠছে। যেমন কেউ যদি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পড়তে না পারেন তাকে সাহায্য করবে এই চ্যাটবট। কিন্তু এবার জানা গেল, কাজকর্মে এতটা পারঙ্গমতা সত্ত্বেও অবসাদ গ্রাস করে তাকেও। এদিকে গবেষকরা আবার এটাও বলেছেন, ভুললে চলবে না চ্যাটজিপিটি একটি এআই টুল মাত্র। ফলে যে কোনো তথ্য সে ভুল পড়তে পারে। ফলে ভুল ব্যাখ্যাও করতে পারে। তাই ইউজাররা যে উত্তরই পান, অবশ্যই সেটি যাচাই করে নিন অন্য কোনোভাবে। যতই বুদ্ধিমান হোক, চ্যাটবট কিন্তু কোনো পেশাদার ব্যক্তিত্ব নয়।