সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের সমীকরণ

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৯ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইউক্রেন মেনে নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিয়েছে রাশিয়াও। যদিও এর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে নানা শর্ত। যদিও এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, আদতে ট্রাম্প যেমন চেয়েছিলেন, ঠিক তেমন নয়। ৩০ দিনের এই প্রস্তাব মূলত ইউরোপীয় নেতাদের জেলেনস্কির হোয়াইট হাউজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরপরই লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে উঠে এসেছিল। তারপরও বলতে হয়, এই উদ্যোগটি সম্ভব হয়েছিল ট্রাম্পের শান্তি-উদ্যোগ নেওয়ার ফলেই। ইউরোপ, ট্রাম্পের আগে, এই প্রস্তাবটি কখনো দিতে চায়নি গত তিন বছরেও। এখন আলোচনা হতে পারে যুদ্ধবিরোধীদের এই উদ্যোগ কতটা অগ্রসর হয়ে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতিতে রূপান্তরিত হবে। অবশ্য ইউরোপের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, বিশেষ করে ইউক্রেন, এখনই এই শান্তি চুক্তি হোক তা চায়নি। এর বড় কারণ ঠিক এই শান্তি উদ্যোগকে ভেস্তে দেওয়া নয়, বরং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে অভাবনীয় বন্ধুত্ব হওয়ার সম্ভাবনাটাই তাদের জন্য অনেকটা ভয়ের কারণ। ভয়টি অবশ্য ঐতিহাসিক কারণে। যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৮০ বছর পর এই প্রথম এতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে প্রায় একই সুরে কথা বলছে, সেটি মেনে নেওয়া কঠিন। বিশেষ করে সেই দেশ বা দেশগুলোর জন্য যেসব দেশ এতদিন ধরে, একচেটিয়াভাবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যুক্তরাষ্ট্রের পরম বন্ধু ছিল। যে ইউরোপ সব কাজে, সব সিদ্ধান্তে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অপকর্মেও, ইরাকে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার যারা সামান্যটুকু বিরোধিতা পর্যন্ত করেনি, সে ইউরোপ হঠাৎ করেই যেন প্রিয় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে বসেছে এর মাধ্যমে, ভয়টি সে কারণেই। শুধু হারাচ্ছেই না, বরং যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে এতদিনকার গুপ্তচরবৃত্তি ও সব রকমের সাংগঠনিক উদ্যোগ ও নানা রকমের নীতি ঢেলে দিয়েছিল, সেই রাশিয়ার ধারেই ভিড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটি যেন এক দুঃস্বপ্নের মতো। তার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ, কানাডীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ, ন্যাটো থেকে সরে আসার হুমকি বা ইউরোপকে ন্যাটো-নিরাপত্তা পাওয়ার প্রতিদানস্বরূপ অনেক অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ দাবিÑ সবকিছুই যেন এ যাবৎকালের সব হিসাব-নিকাশকে ভুল প্রমাণ করছে।

পর্তুগাল যদিও আর সব ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিশালী নয় অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাথা নয়, তবু অর্থ, প্রযুক্তি, সামরিক শক্তি বা রাষ্ট্রীয় শক্তিতে ফ্রান্স বা জার্মানির মতো, তবুও ট্রাম্প ও পুতিনের কাছে আসাকে আর দশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশের মতোই হুমকিস্বরূপ দেখতে হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার মতো আর্থসামাজিক রাজনৈতিক কোনো সামর্থ্য পর্তুগালের নেই। কিন্তু  ট্রাম্প বরাবরই যেমন রূপক অর্থে ‘কার্ড’ শব্দটি ব্যবহার করে আসছেন, ইউরোপের হাতেও এখন সেই রহস্যময় ও অঘটন-ঘটনপটিয়সী সর্বশক্তিমান ‘কার্ড’টি হাতে নেই, যাতে করে পর্তুগাল বা ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে রাশিয়ার কাছে তার ভেড়ানোকে ঠেকাতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এক হয় এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে উপনীত হয়, ৮০ বছরের শত্রুতাকে দূরে ঠেলে তাহলে কার লাভ? কেন লাভ? এবং কী-ই বা লাভ? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সারা পৃথিবীকে দুটি বলয়ে ভাগ করে নিয়েছে। একটি দেশ হয় যুক্তরাষ্ট্রপন্থি, না হলে রাশিয়াপন্থি যেন হতেই হবে। গত ৮০ বছরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি, তারা সবসময় অন্য কোনো দেশকে ব্যবহার করেছে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন ও স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। আফ্রিকা মহাদেশে, মধ্যপ্রাচ্যে, দক্ষিণ এশিয়ায়, লাতিন আমেরিকার মতো উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দাঁড়িয়ে প্রায় সমভাবে শোষণ করেছে এবং করে আসছে বহু বছর ধরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শিকার হয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ।  ইউরোপও বাদ যায়নি। জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে ভাগাভাগি করে নিয়েছে পশ্চিম ও পূর্ব জার্মানিকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এশিয়ায় কোরিয়াকে দুভাগ করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। হাঙ্গেরি, চেকোসেøাভাকিয়া, পোল্যান্ড রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র দুইয়েরই শিকার। এশিয়ায় শিকার ভিয়েতনাম, চায়না, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান, ইরাক, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, ইসরায়েলের মতো দেশ দুই শিবিরে বিভক্ত। এই সবকিছুর পেছনে রয়েছে হয় রাশিয়া, না হয় যুক্তরাষ্ট্রের হাত। এ ছাড়া সারা বিশে^র অনেক দেশ হয় রাশিয়া, না হয় যুক্তরাষ্ট্রের মদদের বা রোষের শিকার।

এক একটা দেশের ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য যেন এই বলয় সূত্রে গাঁথা। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে মুদি দোকানদারি, পাড়ার খেলোয়াড়, চিত্রকর, লেখক, চলচ্চিত্রকার, অর্থনীতিবিদ, মনোবিজ্ঞানী, ডাক্তার, শিক্ষক কেউ বাদ যায়নি এ থেকে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শগত ভিন্নতার জন্য সারা বিশ্ব অমানবিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। পৃথিবীর যেখানেই কোনো বড় রকমের বিরোধ রয়েছে, সেখানে নিয়তির মতো হাজির হয়েছে হয় রাশিয়া, না হয় যুক্তরাষ্ট্র। এ দুই পক্ষ মিলিতভবে কখনো কোনো একটি পক্ষকে সাহায্য করেছে তার নজির নেই। তারা যেন দুই মেরু, যা কখনো এক হওয়ার নয়। এবং সেভাবেই তারা পৃথিবীর সব লড়াই-সংগ্রামে আন্দোলনে-অভ্যুত্থানে-আগ্রাসনে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে সাহায্য করে এসেছে। বলছি ‘সাহায্য’ বটে, অথচ সাহায্যের নামে প্রকৃত অর্থে সমরাস্ত্র বিক্রি করে, মারণাস্ত্র বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করে এসেছে ও আসছে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সংবাদমাধ্যম ভয়ানকভাবে দুই শিবিরে বিভক্ত। পশ্চিমা প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম মোটামুটি রকম যুক্তরাষ্ট্রপন্থি।  ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত পশ্চিমা মিডিয়া কখনো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করেনি।  যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকারপ্রধানকে তারা প্রকাশ্যে একজোট হয়ে সমালোচনা করেছে তার নজির পাওয়া যায়নি। অথচ ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই এমনকি ক্ষমতা আসার আগেই ট্রাম্প ক্ষমতায় যেন না আসতে পারেন, সেই চেষ্টায় ন্যক্কারজনকভাবে বিরোধিতা করে এসেছে পাশ্চাত্য গণমাধ্যম। 

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সরকার গঠনের সময় তখনো প্রভাবশালী পাশ্চাত্য গণমাধ্যম প্রাণপণে চেষ্টা করছে যেন ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় না আসে। এবার নির্বাচনপূর্ব পশ্চিমা মিডিয়া প্রচার করে এসেছে ট্রাম্প হেরে যাচ্ছেন, কমলা ক্ষমতায় আসছেন, যা কেবল অল্প সময়ের ব্যাপার মাত্র। পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের চালানো সব জরিপেই দেখা গেছে, ট্রাম্প কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসছেন না। অথচ স্মরণকালের সেরা ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএন, বিবিসি, এপি, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, এবিসি, সিবিএস ও এনবিসি ট্রাম্পবিরোধী প্রচারণায় ভয়ানকভাবে জড়িত ছিল। শুধু ওই সময়ে এসব মিডিয়ার সংবাদ বিশ্লেষণ করলে অনেকের হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে, পাশ্চাত্য সংবাদমাধ্যম কতটা পক্ষপাতমূলক হতে পারে। এবং কীভাবে তারা তার দলের সদস্যদের পক্ষে থেকে বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে, সাংবাদিকতার সব মহত্ত্ব ও নিরপেক্ষ থাকার চরিত্রকে বিসর্জন দিয়ে, কোমর বেঁধে ন্যক্কারজনকভাবে লেগে থাকতে পারে। হলিউডের বড় বড় অভিনেতা-অভিনেত্রী সবার প্রিয় লিওনার্দো ডি-ক্যাপ্রিও, স্কারলেট জোহানসান, ব্রাড পিট, স্যামুয়েল জ্যাকসনের মতো কত বড় বড় মুখ ট্রাম্পবিরোধী ছিল। এরা সবাই এমনিতেই রিপাবলিকানবিরোধী। আর ট্রাম্পের কারণে তারা শুধু রিপাবলিকান বিরোধী নয় বরং আরও একধাপ এগিয়ে ট্রাম্পবিরোধী। ট্রাম্প ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে নির্বাচন করলেও তারা ট্রাম্পের বিরোধিতা করতেন। নিজ দেশে ট্রাম্পের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দেশকে কতটা ক্ষতির মুখে ফেলেছে তা তারা ভালো জানেন। নিজ দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতি কেমন, অবশ্য তা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়। আমাদের আলোচনার বিষয় বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি কতটা প্রভাব ফেলছে আর ঠিক সেটি আমাদের মতো দেশগুলোর ওপর কতটা নেতিবাচক বা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে তার বিচার করা।

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যদি রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র এক হয় বা সুসম্পর্কে উপনীত হয় তাহলে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গাজায় প্যালেস্টাইন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম শুরু হয়েছে, এর কারণ শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা শুধু ট্রাম্প নয়, রাশিয়াও তাতে সম্মত হয়েছে বলে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধেও যুদ্ধবিরতির অবস্থান তৈরি হয়েছে শুধু একটি কারণে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্প প্রশাসন এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেন সরকারকে মদদ দিতে চায়নি। ট্রাম্প প্রশাসন আরও পরিকল্পনা করছে রাশিয়া থেকে সব রকমের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে। তা গত ৮০ বছরের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে একটি বিস্ময়কর ব্যাপার বলেই মনে হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে উপনীত হলে এত বছর ধরে যারা এই দুই ঘরানার বিপরীতে সুবিধা ভোগ করে আসছিল, তাদের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হবে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স ভয়ানক সমস্যায় পড়বে। কারণ রাশিয়া ইউরোপের প্রায় সব দেশেই জ্বালানি সরবরাহ করে। রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র এক হলে রাশিয়া চাইলে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে ইউরোপে জ্বালানি সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। এ ছাড়া রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ফলে রাশিয়ার বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রাশিয়ান পণ্য সরবরাহ বেড়ে যেতে পারে। ফলে যুক্তরাজ্য, জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো দেশগুলো যুক্তরাজ্যে তাদের বাজার হারাতে পারে। এটি লক্ষণীয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ করার ফলে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির বাজার অনেকটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে । এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়াকে আর হুমকি হিসেবে না দেখে তাহলে ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসতে চাইতে পারে সম্পূর্ণরূপে। এর ফলে ইউরোপ সাময়িক সময়ের জন্য বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলো তারা তাদের সামরিক ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া এক হলে পর্তুগালে যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা বলা যায় না। প্রথমত পর্তুগাল রাশিয়া থেকে কোনো জ্বালানি ক্রয় করে না, তার জ্বালানি আসে আলজেরিয়া ও নাইজেরিয়া থেকে। এ ছাড়া পর্তুগাল পর্যটননির্ভর। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে উপনীত হলে পর্তুগালের পর্যটনশিল্প রাশিয়ান পর্যটনের জোয়ার বইতে পারে। তবে ইউরোপের সাময়িক অসুবিধা বাদ দিলে বাকি বিশ্ব, বিশেষ করে যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ-লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের মুখে পড়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার শামিল, সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। পৃথিবী জুড়ে গত ৮০ বছর ধরে, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকাসহ এই তালিকায় রয়েছে প্রায় ২৮টির মতো দেশ। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে উপনীত হয়, তাহলে সেসব দেশগুলোতে প্রায় ৮০ বছর ধরে চলে আসা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বিরোধের ফলে যারা প্রায় নিঃস্ব হতে চলেছে, সেখানে বিকল্প সম্ভাবনা তৈরি হবে। সত্যিই হবে তো?

লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক লিসবোয়া, পর্তুগাল

[email protected]

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত