রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বাস্তবতা বিবর্জিত মন্তব্য

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি-অর্থনীতি নিয়ে, অনেক দেশের কর্তাব্যক্তি বিভিন্ন সময় কথা বলেন। গত বছরের আগস্ট অভ্যুত্থানের আগে-পরেও বলেছেন। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র সম্পর্কে একটি দেশ ভুল মন্তব্য করবে, আবার সেই মন্তব্য যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, তখন সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা একটি প্ল্যাটফর্মে আসবেন দেশের প্রশ্নে, এটাই গণতন্ত্রের শিক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান ভারতের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রতি যা বলেছেন, তা রীতিমতো বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। যে কারণে বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সচেতন মহলে বিস্ময়, বিতর্ক ও সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্যাথলিক ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র।’ বাংলাদেশে ‘ইসলামি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদী উপাদানের’ উত্থান নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে; কিন্তু এটি উদ্বেগের মূল জায়গাগুলোর একটি।’ সাক্ষাৎকারে ‘ইসলামি খেলাফতের’ আদর্শ এবং তার প্রতিরোধের বিষয়েও কথা বলেন তিনি। এনডিটিভিকে বাংলাদেশ নিয়ে অন্য প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা নানা দেশে ‘ইসলামি খেলাফত’-এর আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরে বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘নিপীড়ন ও হত্যা’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো, ইসলামপন্থি খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা। তার এই মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।’ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মার্কিন জাতীয়  গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। প্রভাব পড়বে না অর্থনৈতিক সম্পর্কেও। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়  যে প্রতিক্রিয়া (তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের) জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ওটাই। ওনার বক্তব্য গুরুতর।’ 

মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্স (ডি-এমআই) সাক্ষাৎ করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি নাগরিকের বর্ণ, ধর্ম, জাতি এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে মানবাধিকার রক্ষায় তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে, তা ধর্মীয়ভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তবে সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।’ আলোচনায় সিনেটর গ্যারি পিটার্স বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ব্যাপক ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।’ তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ভারতীয় প্রোপাগান্ডানির্ভর এবং সত্যের অপলাপ বলে মনে করছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল এবং কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারাও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম-নির্ভর হয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় প্রোপাগান্ডার সুরে তাল মিলিয়েছেন। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য শুধু বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অংশ, যেখানে নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। কাজেই সরকারকে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। বিশ^কে জানাতে হবে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বিশেষ উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে, কারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত