শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চোখ বৃহত্তর শান্তি পরিকল্পনায়

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫৭ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইস্টার্ন ডেলাইট টাইম অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ১০টা (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা) থেকে তারা টেলিফোনে কথা শুরু করেছিলেন। দেড় ঘণ্টার এই ফোনালাপে পুতিন ৩০ দিনের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেননি, যা ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থায়ী শান্তির প্রথম ধাপ হিসেবে আশা করেছিলেন। তার পরিবর্তে সাময়িকভাবে ইউক্রেনের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় হামলা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ জানায়, ফোনালাপে ট্রাম্প-পুতিন ইউক্রেনে শান্তি এবং যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন। উভয় নেতা একমত হয়েছেন যে, স্থায়ী শান্তির মাধ্যমে এই সংঘাতের অবসান হওয়া দরকার। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ট্রাম্পের একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরের শক্তি অবকাঠামোতে আঘাত হানবে না এবং এই বিষয়ে ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। পুতিন এ সংক্রান্ত আদেশ রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে দিয়েছেন বলেও ক্রেমলিনের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাইরে থেকে ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পুতিন। যদিও, ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা এর আগেও এই শর্তকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যে রক্ত ঝরেছে এবং সম্পদ ব্যয় করেছে, তা উভয় দেশের জনগণের প্রয়োজনে ব্যয় করলে আরও ভালো হতো। তিনি আরও বলেন, এই সংঘাত কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না এবং আন্তরিক ও সরল বিশ্বাসে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় অনেক আগেই এর অবসান হওয়া উচিত ছিল। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান জানিয়েছেন, জ্বালানি ও অবকাঠামোগত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু হবে। পাশাপাশি কৃষ্ণ সাগরে সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি, পূর্ণ যুদ্ধবিরতি এবং স্থায়ী শান্তি বাস্তবায়নের কৌশলগত সমঝোতার বিষয়ে অবিলম্বে আলোচনা শুরু হবে। আর এই আলোচনার সম্ভাব্য স্থান হতে পারে মধ্যপ্রাচ্য। ক্রেমলিন বলেছে, কৃষ্ণ সাগরে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে খুব দ্রুত আলোচনা শুরু হবে। পাশাপাশি বুধবার রাশিয়া এবং ইউক্রেন ১৭৫ জন যুদ্ধবন্দি বিনিময় করবে এবং রাশিয়ায় চিকিৎসা নেওয়া ২৩ জন গুরুতর আহত ইউক্রেনীয় সৈন্যকে স্থানান্তর করা হবে।

ইউক্রেনে শান্তি আলোচনার পাশাপাশি  যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন দুই নেতা। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে উন্নত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু বয়ে আনবে। অসংখ্য অর্থনৈতিক চুক্তি এবং শান্তি অর্জিত হলে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করছেন উভয়েই। ট্রাম্প ও পুতিনের দীর্ঘ ফোনালাপের পর অবিলম্বে বৃহত্তর শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরুর কথা জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। তবে এই আলোচনায় ইউক্রেন থাকবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে এই আলোচনায় ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তা নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর সরকারি সফরে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে পৌঁছান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন শান্তি আলোচনা থেকে ইউরোপকে বাদ দেওয়া উচিত নয়। জেলেনস্কি আরও বলেন, তার দেশ ৩০ দিনের জন্য জ্বালানি স্থাপনায় হামলা বন্ধের প্রস্তাবকে সমর্থন করবে।

তবে ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পরই একে অন্যের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। জেলেনস্কি জানান, মঙ্গলবার রাতে রাশিয়া ৪০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর ফলে সুমি অঞ্চলের একটি হাসপাতাল এবং কিয়েভ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, আজ পুতিন কার্যত পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এর প্রতিক্রিয়ায় পুতিনের যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করা। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ৫৭টি ইউক্রেনীয় ড্রোন প্রতিহত করেছে। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চল ক্রাসনোদারের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় একটি তেলের ডিপোতে আগুন ধরে যায়। জার্মান মার্শাল ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন বারজিনা বলেন, এই আলোচনা স্পষ্ট করেছে, রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করা কতটা কঠিন এবং তারা এই যুদ্ধ বন্ধে বাস্তব অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। তিনি সীমিত যুদ্ধবিরতিকে একটি খুব ছোট অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছেন। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক মারিয়া স্নেগোভায়া বলেছেন, জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধের যুদ্ধবিরতিতে মূলত রাশিয়ারাই বেশি উপকৃত হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত