বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা বেড়ে ২৪০

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪৮ এএম

বাংলাদেশের আরও তিনটি পোশাক কারখানাকে সবুজ কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। কারখানাগুলো হলো ইকোটেক্স লিমিটেড, এলিট গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইউরো নিট স্পিন লিমিটেড। তিনটি কারখানাই গাজীপুরে অবস্থিত। আর এর মাধ্যমে দেশে পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার সংখ্যা বেড়ে ২৪০টিতে দাঁড়িয়েছে। নতুন সনদ পাওয়া কারখানা তিনটির মধ্যে ইকোটেক্স লিমিটেড ৯০ নম্বর নিয়ে প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে। এলিট গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইউরো নিট স্পিন লিমিটেডও প্ল্যাটিনাম সনদ পেয়েছে। এ দুটি কারখানাই নম্বর পেয়েছে ৮৫।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০ পরিবেশবান্ধব কারখানার ৬৬টি বাংলাদেশে অবস্থিত।

বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে বর্তমানে লিড সনদ পাওয়া পরিবেশবান্ধব কারখানা বেড়ে হয়েছে ২৪০টি। এর মধ্যে ৯৮টিই লিড প্লাটিনাম সনদধারী। এ ছাড়া ১২৮টি গোল্ড, ১০টি সিলভার ও ৪টি কারখানা সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। ইউএসজিবিসি থেকে পরিবেশবান্ধব সনদ পাওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হয়। মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনো কারখানা ৮০-এর বেশি পেলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ পেলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ নম্বর পেলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ নম্বর পেলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ দেওয়া হয়।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে। উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় তিনটি। ২০১৫ সালে ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ ও ২৪টি। ২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরও ৪৮টি কারখানা গড়ে ওঠে দেশে। ২০২২ সালে আরও ৩০টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২৩ সালে ২৪টি ‘গ্রিন’ কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে। ২০২৪ সালে ‘গ্রিন’ কারখানার সনদ পায় ২৬টি। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৮টি কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে। এভাবে সব মিলিয়ে দেশে মোট পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ২৪০টিতে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়া ৫৫০টি পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সনদ পেতে ইউএসজিবিসির অধীনে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ। বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল-ইউএসজিবিসি। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দেয়। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’।

সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

সাধারণত অন্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল মেলে। ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। এর মধ্যে আছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এজন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানি সাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়।

স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ ও ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব। তার মানে দেশে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই তা পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত