সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার নামে রাজধানীর ৭৯ নম্বর সেগুনবাগিচার ইস্টার্ন হাউজিংয়ে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসে ফ্ল্যাটটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (সম্পত্তি ভোগ দখল, রক্ষণাবেক্ষণ, কেনাবেচার জন্য কাউকে ক্ষমতা) দেওয়া হয়েছে আলোচিত মঈন গণিকে। যে মঈন গণি শেখ রেহানার মেয়ে সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। বিষয়টি দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনা-শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ ক্রোক করতে গিয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদানের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নজরে এসে। দুদকের তথ্যমতে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি (মোট ৬০ কাঠা) আয়তনের প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ছয়টি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার তদন্তকালে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সম্পদের সন্ধানকালে শেখ রেহানার নামে সেগুনবাগিচার ৭৯ নম্বর হোন্ডিংয়ের ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের নির্মিত ‘ইস্টার্ন ভিলায় ২০৬ নম্বর ফ্ল্যাট ক্রয়ের তথ্য পাওয়া যায়। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের একজন পরিচালক চিঠি দিয়ে দুদককে এতথ্য জানান।
ইস্টার্ন হাউজিংয়ের চিঠিতে বলা হয়, শেখ রেহানা ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০০ টাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। তিনি ওই ফ্ল্যাটটি গত বছরের ৩১ মার্চ আইনজীবী মঈন গণির নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে ইস্টার্ন হাউজিং কর্র্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। এরপর হাউজিং কর্র্তৃপক্ষের তাদের নির্ধারিত ফরমপূরণ করে ফ্ল্যাটের স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
তথ্য বলছে, শেখ রেহানা রাজধানী সেগুনবাগিচার ফ্ল্যাটটি মঈন গণিকে দিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে মেয়ের জন্য মঈন গণির কাছ থেকে ফ্ল্যাট নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের বসবাস করা একাধিক ফ্ল্যাট নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। চলতি বছরের শুরুতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়, লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে টিউলিপের মালিকানায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তাকে ২০০৪ সালে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাটটি দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের একজন আবাসন ব্যবসায়ী। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল তার।
পরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আরেক সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসের খবরে বলা হয়, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের বোনকে বিনামূল্যে আরেকটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন মঈন গণি নামের এক আইনজীবী। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। হ্যাম্পস্টেডের ওই ফ্ল্যাটে একসময় বসবাস করেছিলেন টিউলিপ।
সানডে টাইমস আরও বলছে, মঈন গণি নামে বাংলাদেশি আইনজীবী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে মামলায় লড়েছেন। ২০০৯ সালে ফিঞ্চলে রোডের সম্পত্তিটি টিউলিপের ছোট বোন আজমিনার কাছে হস্তান্তর করেন। জমি রেজিস্ট্রি নথিগুলো থেকে জানা গেছে যে, তিনি বিনামূল্যে ওই ফ্ল্যাটটি আজমিনাকে দিয়ে দেন। সে সময় আজমিনার বয়স ছিল ১৮ বছর। পরে ২০২১ সালে তিনি ফ্ল্যাটটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারে বিক্রি করে দেন। ওয়ার্কিং মেনস কলেজের পরিচালক এবং ২০১২-১৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থার ট্রাস্টি থাকাকালে অফিশিয়াল নথিতে এই সম্পত্তিকে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ।
শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর মাঠে নামে দুদক। অনুসন্ধান শেষে চলতি বছরের ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি ২৫ জনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এপিএস-২ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী কে শরীফ আহমদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের দুজনসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে গত ১০ মার্চ চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেয় কমিশন। চার্জশিটে শেখ হাসিনা-শেখ রেহানাসহ তাদের পরিবারের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।