রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

মস্তিষ্কে ঢুকে যাওয়া টেঁটা অপসারণ

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৫ এএম

মুখে টেঁটাবিদ্ধ এক জটিল রোগীর সফল অস্ত্রোপচার করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিপজ্জনকভাবে বিদ্ধ টেঁটা রোগীর মুখমণ্ডল থেকে সফলভাবে অপসারণ করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের ছয় দিন পর গত মঙ্গলবার কোনো রকম মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর অক্ষমতা ছাড়াই রোগীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।

গত ১২ মার্চ ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিট প্রধান ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাতের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি চিকিৎসকদল এ জটিল অস্ত্রোপচার করে। অস্ত্রোপচার দলে ছিলেন ডা. ইরফান সোবহান, ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ, ডা. শুভ্র সাহা, ডা. হাসান, ডা. পুনম রায় এবং অ্যানেস্থেশিওলজিস্ট ডা. আল বিরুনী। আক্রান্ত রোগী মো. আশরাফুল (২৬) নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। সংঘর্ষে তিনি টেঁটাবিদ্ধ হয়েছিলেন।

গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজে এ অস্ত্রোপচারের তথ্য জানানো হয়।

এ ব্যাপারে অস্ত্রোপচার দলের প্রধান ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার আমাদের প্রায়ই করতে হয়। তবে এই রোগীর বিদ্ধ টেঁটার অবস্থানটা ছিল খুব বিপজ্জনক জায়গায়। সেখান থেকে টেঁটা অপসারণ করা ছিল খুব কঠিন। আমরা সেটা পেরেছি।

অস্ত্রোপচার দলের চিকিৎসকরা বলেছেন, ওই ব্যক্তির মুখমণ্ডলের হাড় ভেদ করে টেঁটার ফলা মস্তিষ্কের পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরে ঢুকে গিয়েছিল। বিদ্ধ টেঁটার অবস্থান ছিল একেবারে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তনালি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি থেকে কয়েক মিলিমিটার দূরে, মাস্টারগ্লান্ড পিটুইটারির ঠিক নিচে। রক্তনালিতে আঘাত হলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দাঁড়াত শূন্যের কোঠায়। এমন বিপজ্জনকভাবে বিদ্ধ সেই টেঁটা অপসারণ করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানান, গত ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে এক ব্যক্তি টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিটে আসেন। তার ডান চোখের নিচ দিয়ে টেঁটার একটি ফলা প্রবেশ করে মুখমণ্ডলের হাড় এবং বায়ু কুঠুরি ভেদ করে মস্তিষ্কের মাস্টারগ্লান্ড পিটুইটারির ঠিক নিচে অবস্থান করছিল। সিটিস্ক্যান পরীক্ষার মাধ্যমে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তনালি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি থেকে কয়েক মিলিমিটার দূরে এর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এই রক্তনালির ইনজুরিতে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটা শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। এমন জটিল একটা পরিস্থিতিতে রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগ এবং চক্ষু বিভাগ রোগীটির অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কোনো রকমের মস্তিষ্ক, রক্তনালি কিংবা চোখের ইনজুরি ছাড়াই সফলতার সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়। গত মঙ্গলবার রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে অস্ত্রোপচার দলের সদস্য ও শিশু নিউরোসার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি ফলা চোখের ঠিক নিচ দিয়ে মস্তিষ্কের ভেতরে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার ঢুকে গিয়েছিল। এর প্রান্তটা ছিল একেবারে মস্তিষ্কের কেন্দ্রের কাছে। টেঁটা মূলত মাছ ধরার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়। এজন্য এর ফলার মাথায় বড়শির মতো একটি অংশ থাকে, মাছকে বিদ্ধ করার পর টান দিলে যেন খুলে চলে না আসে। ফলার এই প্রান্তটি রোগীর মস্তিষ্কে প্রবেশের পর একটি হাড়ের সঙ্গে আটকে গিয়েছিল। এর কারণে এটি একটু জটিল আকার ধারণ করে। যদিও ফলা গোল হলে সহজেই বের করা যেত।

এ চিকিৎসক আরও বলেন, দুপুর ১২টার দিকে রোগী নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিটে আসেন। অস্ত্রোপচার শুরু হয় বিকেল পৌনে ৬টায় মিনিটে। অপারেশন থিয়েটারেই ইফতার সারেন সার্জনরা। রোগী এখন ভালো আছেন। মস্তিষ্কের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।

এ চিকিৎসক জানান, এর আগেও ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অন্য একটি ইউনিটেও এ ধরনের অস্ত্রোপচার হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের অত্যন্ত জটিল অপারেশন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়ে থাকে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত