বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

তিস্তাপাড়ে আদিগন্ত ভরপুর বোরোতে

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৭:০০ এএম

নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক পাঁচ জেলার প্রতিটি উপজেলার বোরো ক্ষেতে এখন আদিগন্ত সবুজের সমারোহ। চলতি বছর বোরো আবাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দেশ। ধান উৎপাদনও হবে বাম্পার। আশাবাদী কৃষককুল। এবার বোরো আবাদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন, বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

এবার দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি খরা মৌসুমে বোরো চাষে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। প্রতিটি সেচ খালে ভরপুর পানি। সেই পানিতে চলছে বোরো ক্ষেতে সেচ কার্যক্রম। নদীতেও এখন পানি প্রবাহ প্রায় ৫ হাজার কিউসেক। ফলে তিস্তার সেচে বোরো আবাদে পানির কোনো ঘাটতি নেই। কাকডাকা ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে চাষিদের। সার, বীজসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণ হাতের নাগালে থাকায় দুশ্চিন্তাও নেই।

গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের খাল নীলফামারীর ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু হয়ে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলায় বিস্তৃত। মোট সেচ খালের দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার। প্রধান খাল, সেকেন্ডারি খাল, মেজর খাল ও সবশেষে টারশিয়ারি খালের মাধ্যমে বোরো জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। নীলফামারী সদর উপজেলার রামনগর এলাকার বোরো চাষি তৈয়ব আলী (৪২) দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিস্তার সেচে ৭ একর জমিতে বোরো আবাদ করছি। ফসলি জমিতে ইতিমধ্যে বোরোর চারা রোপণ শেষ। এখন পরিচর্যা চলছে। বোরো শ্রমিক রফিক উদ্দিন (৩৫) জানান, বোরোতে শুধু কৃষকই নয়, শ্রমিকরাও লাভবান হয়। এ সময় কাজের কোনো অভাব থাকে না। প্রতিদিন কৃষকের ক্ষেতে শ্রম দিলে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দিন মজুরি মেলে।

রংপুর কৃষি অঞ্চলের উপপরিচালক কার্যালয় থেকে দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো চাষ হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৮ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারীতে ৮১ হাজার ৮৫৯ হেক্টর, রংপুরে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮০০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৬২ হেক্টর ও লালমনিরহাটে ৪৮ হাজার ১৫ হেক্টরে। গত বছর ৫ লাখ ৭ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল, যা গত বছরের চেয়ে এবার ১ হাজার ২২১ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে।

বাপাউবোর সূত্রমতে, উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ১২টি উপজেলায় সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নতুন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে এর সক্ষমতা বহুলাংশে বাড়বে। তিস্তা সেচ প্রকল্প কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন, সংস্কার ও পরিবর্ধন প্রকল্পটির শেষ হওয়ার সময় ছিল গত ডিসেম্বরে। এটি এখন দুই বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ হলে ২০২৭ সালের জানুয়ারী থেকে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে।

তবে এদিকে ডালিয়া গ্রামের কৃষক আবু বক্কর অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে জানান, গত ৩০-৩৫ বছর তিনি তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন। তিস্তার পানিতে ফসল ফলাতে উৎপাদন খরচ কম হয়। সেচ প্রকল্প থেকে সারা বছর একরপ্রতি জমিতে তিন মাসের সেচের পানি নিতে তাদের দিতে হয়েছে দেড় হাজার করে টাকা। তবে তিস্তা কমান্ড এলাকার কৃষক সমিতির নেতারা তাদের কাছে অতিরিক্ত ৫২০ টাকা করে নিয়েছেন একরপ্রতি।

এ বিষয়ে ওই এলাকার কৃষক সমিতির সভাপতি আবদুস সামাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কৃষকরা সমিতির মাধ্যমে সেচের পানির টাকা পরিশোধ করেন। সমিতির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করে সেচ এলাকার খাল পরিষ্কার ও নজরদারি করা হয়। এ কারণে কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়। সরকারকে নির্ধারিত দরে টাকা পরিশোধ করার পর বাড়তি টাকা সমিতির সদস্যদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।

তিস্তা সেচ প্রকল্পের উপসম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে জানান, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলায় ১০ হাজার হেক্টর, দিনাজপুর জেলায় ৭ হাজার হেক্টর, যা একর হিসাবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৫০। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিস্তা কমান্ড এলাকার সেচ খালে কৃষকরা আউটলেট থেকে পানি নেওয়ার জন্য মাঠ নালা তৈরি, তিন মাস সেচ গ্রহণ মজুরি ও বিবিধ বাবদ মোট ১ হাজার ৫০০ টাকা একরপ্রতি প্রদান করে থাকে; যা প্রতি মাসের সরকারি হিসাবে ৪০০ টাকা একর ও আদায় খরচ ২০ শতাংশ অতিরিক্ত হিসেবে ৮০ টাকা সর্বমোট ৪৮০ টাকা একরপ্রতি সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে। ওই পরিমাণ জমিতে সেচের জন্য সরকারি কোষাগারে এবার ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৪ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত