শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ঈদের আগে চাঙ্গা জামদানি পল্লী

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৭:০৪ এএম

জামদানি শাড়ির কথা এলেই সবার আগে আসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার বিসিক জামদানি পল্লীর কথা। এ এলাকার জামদানির ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরনো। জামদানিকে মসলিনের উত্তরসূরি বলা হয়ে থাকে। সেই জামদানি বিক্রি করে জামদানির তাঁতকল মালিকরা হয়েছেন একেকজন কোটিপতি। অপরদিকে জামদানি তৈরির কারিগরদের যেন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা।

কালের বিবর্তনে জামদানির মূল্য ও লাভের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তুলনামূলক বাড়েনি তাঁতিদের পারিশ্রমিক। গত কয়েক বছর আগে এ পেশার সঙ্গে প্রায় ৫ হাজার তাঁতি জড়িত ছিল। বর্তমানে তাঁতির সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার। গত কয়েক বছরে দেড় হাজার তাঁতি পেশা পাল্টে অন্যত্র চলে গেছেন।

এদিকে, সামনেই ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। তবে এবার জামদানি পল্লীতে সরাসরি ক্রেতা থেকে অনলাইনে শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তাঁতিরা। এবারের ঈদকে সামনে রেখে ৮০ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির টার্গেট রয়েছে ব্যবসায়ীদের। রূপগঞ্জের জামদানি সারা দেশ থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া প্রায় ৩০ কোটি টাকার জামদানি ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশে^র বিভিন্ন স্থানে রপ্তাানি হচ্ছে। এতে আয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিরা জামদানি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।  পল্লীর ভেতরের দোকানগুলোতে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশ লক্ষণীয়। জামদানি পল্লীর ভেতরে প্রায় ৩০টি জামদানি বিক্রির শোরুম রয়েছে। আগে তাঁতিরা শুধু জামদানি শাড়ি তৈরি করলেও বর্তমানে জামদানি দিয়ে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, টু-পিস ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়। এতে করে জামদানির জনপ্রিয়তা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জামদানি তৈরির কারিগররা জানান, তারা ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা মূল্যের পর্যন্ত জামদানি তৈরি করেন। তাদের তৈরি জামদানি দেশের বিভিন্ন নামিদামি শোরুম ও বিদেশে যাচ্ছে। এই জামদানি বিক্রি করে তাঁতকলের মালিকরা একেকজন কোটিপতি হলেও তাঁতিদের পারিশ্রমিক তেমন বাড়েনি। তারা একেকটি শাড়ি তৈরি করে ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। এসব শাড়ি তৈরি করতে ১৫ দিন থেকে ২ মাস পর্যন্ত লেগে যায়। তাঁতিদের পারিশ্রমিক না বাড়ার কারণে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। বর্তমানে পল্লীতে সাড়ে ৩ হাজার তাঁতি কাজ করছেন। তাদের বেশিরভাগই এখনো ছেলেমেয়েদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে পারেননি।

তাঁতকল মালিকদের দাবি, জামদানি শাড়ির উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। তাই শাড়ি বিক্রি করে তেমন একটা লাভ হচ্ছে না। ফলে কারিগরদের মজুরিও তেমন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও যতটুকু পারা যাচ্ছে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে।

পল্লীর বিসমিল্লাহ জামদানি মালিক মো. আসিফ বলেন, গত কয়েক বছর জামদানির বাজার খারাপ গেলেও এ বছর থেকে জামদানির বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। জামদানির বাজার চাঙ্গা হওয়ায় তাদের বিক্রিও বেড়েছে বহুগুণ। আগে শাড়ি বিক্রি করে তাঁতিদের মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হলেও বর্তমানে বেশ ভালোভাবেই তা পারছেন। দোকানের পাশাপাশি বিসমিল্লাহ জামদানি নামে ফেসবুকে একটি পেজ রয়েছে। বর্তমানে দোকানে বিক্রি কমে গেলেও ঈদকে সামনে রেখে অনলাইনে শাড়ি খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। এখন জামদানি পল্লীতে সরাসরি আসার পাশাপাশি অনেকে আবার অনলাইনে শাড়ির ডিজাইন পছন্দ করে অর্ডার করেন। পরে তিনি কুরিয়ারে শাড়ি পাঠিয়ে দেন।

শফিকুল জামদানির মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেশের বেশ কয়েকটি নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমে জামদানি দিয়ে আসছি। সুতার দাম বাড়ার কারণে ব্যবসা আগের মতো নেই। জামদানিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা আরও প্রয়োজন বলে মনে করছি।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত