দীর্ঘদিন ধরে রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি থাকলেও এবার রোজায় বাজারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এ বছর শাকসবিজ, মাছ-মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যেই আছে। ফলের দামও খুব একটা বাড়েনি। তবে রোজার অনেক আগে থেকে শুরু হওয়া চাল ও তেলের বাজারের অস্থিরতা কাটেনি এখনো। লাখ লাখ টন চাল আমদানি করেও কমানো যায়নি দাম। তেলের দাম নানা কৌশলে বেড়েছে একাধিক দফায়। ভোক্তারা বলছেন, কাঁচা বাজারের এবার কিছুটা স্বস্তি মিললেও চাল আর তেল কিনতে গিয়ে হতাশ হতে হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে গত এক বছরে মিনিকেট চালের দর বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। মাঝারি চালের প্রায় ১৪ এবং মোট চালের ৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
ভোক্তাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভরপুর আমন উৎপাদনের বছরে চালের বাজারে অস্থিরতা না কমাতে পারা সরকারের ব্যর্থতা। রোজার আগে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চালের শুল্ক কমালেও তার কার্যকারিতা বাজারে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, আমন মৌসুমে বন্যায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমনের উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ টন। তাছাড়া সরকারের শুল্ক ছাড়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গেল আট মাস ধরেই চাল আমদানি হচ্ছে। এ সময়ে মিয়ানমার, ভারত ও পাকিস্তান থেকে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টন চাল আমদানি হয়েছে।
সরেজমিনেবৃহস্পতিবার মগবাজার, বাড্ডসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি গুটিস্বর্ণা বা মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৫, পাইজাম ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এসব চাল ২-১ টাকা কমে কেনা গেছে। বিআর-২৮ জাত বা মাঝারি চালের কেজি গত সপ্তাহের চেয়ে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু চালের দাম। প্রতি ৫০ কেজির বস্তা সরুচাল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়, যা ১০ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৯৫০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। ৬২ টাকা কেজি দরে প্রতি ৫০ কেজির বস্তার ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০, স্বর্ণা ১ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭০০ ও পাইজাম চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকা করে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শেষের দিকে প্রতি বছর সরু চালের দাম বাড়ে। কিন্তু এবার পর্যাপ্ত চাল আমদানি হওয়ার পরও সরু চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক।
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী নোয়াখালী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. শাওন মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মৌসুম শেষ হওয়ায় মূলত সরু চালের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি চালে ৪ ও প্রতি বস্তায় ২০০ টাকা বেড়েছে। তবে আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন ধান উঠলে সরু চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
এদিকে চালের মতো ভোজ্য তেলের বাজারের অস্থিরতাও কমেনি। শুল্কছাড়ের তেল আমদানির ফল ভোক্তারা না পেলেও এর পুরো সুবিধাই ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন। গেল নভেম্বরে শুরু হওয়া তেলের সংকট এখনো কাটেনি। অধিকাংশ দোকানে ৫ লিটারের তেলের বোতল পাওয়া গেলেও ৫০০ মিলিলিটার ও ১ লিটার তেলের বোতল এখনো মিলছে না।
উত্তর বাড্ডা বাজারের দৌলত স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. দৌলত দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না। কিছু কোম্পানি তেল দিলেও ৫ ও ২ লিটারের বোতল ভাগ করে দিচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়ত তেল নিয়ে ভোক্তার সঙ্গে আমাদের বাগবিত-ায় জড়াতে হয়। তাতে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বদনাম হয়, ব্যবসার ক্ষতি হয়।
এদিকে রোজার শুরুতে বেগুন, শসা ও লেবুর দাম বাড়লে তা এখন কিছুটা নিম্নমুখী। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে প্রতি কেজি বেগুন ৭০ থেকে ৯০, শসা ৫০ থেকে ৬০ এবং প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
বাজারে লেবু, শসা ছাড়া অধিকাংশ সবজিতে অনেকটা স্বস্তিবোধ করছেন ক্রেতারা। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৫০, চিচিঙ্গা ৩০ থেকে ৪০, টমেটো ৩০ থেকে ৪০, আলু ২৫ থেকে ৩৫ ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। অবশ্য মাংসের বাজারে নতুন করে দামের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়, যা গেল সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৯০ টাকা করে এবং প্রতি কেজি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।
বাজারে দাম বেড়েছে মাছেরও। এক কেজি সাইজের রুই বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, যা কদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। রুই ছাড়াও দাম বেড়েছে তেলাপিয়া, পাঙাশ, পাবদাসহ অন্যান্য মাছের। দাম বেড়ে প্রতি কেজি পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০, তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২০০, ছোট সাইজের পাঙাশ ১৭০ থেকে ১৮০ ও বড় সাইজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা।