সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

নির্বাচনে পুলিশ হোক নিরপেক্ষ

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম

সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ ...।’ এটি সম্ভব হয় তখন, যখন সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সেই ক্ষমতা প্রয়োগ এবং তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। নির্বাচন এমন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ না হলে, জনগণের মালিকানা নিঃসন্দেহে তখন খর্ব হয়। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ হয় রুদ্ধ এবং তখন অশান্ত ও অস্থিতিশীল পরিবেশের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। যে কারণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোতে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অর্থবহ হতে হয়। আর তখনই সবার কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশকে সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। পাশাপাশি

তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে বেশ কিছু সুবিধা দ্রুত নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ভালো জানেন, পুলিশের অসুবিধাকে গুরুত্ব না দিলে, মাঠ পর্যায়ে কোনো কাজই সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। যেহেতু পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের অসুবিধার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন, আশা করা যায় সরকারের সাধ্য অনুযায়ী তা পূরণের চেষ্টা করা হবে। সেক্ষেত্রে পুলিশেরও দায়িত্ব, নির্বাচনী পরিবেশ নির্বিঘœ রাখা। একই সঙ্গে নির্বাচনে পুলিশ হোক নিরপেক্ষ। সভায় প্রধান উপদেষ্টা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণসহ তৃণমূল পর্যায়ে যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করেন, তাদের কল্যাণে কয়েকটি বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ঝুঁকি ভাতার প্রচলিত সিলিং তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে, পুলিশের জন্য নতুন ৩৬৪টি পিকআপ এবং ১৪০টি প্রিজন ভ্যান কেনার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পুলিশের চলমান নির্মাণ প্রকল্পের যেগুলোর কাজ ৭০ শতাংশের নিচে সম্পাদিত হয়ে আছে, সেগুলোতে অর্থ ছাড় করা হবে। এ ছাড়া ভাড়াকৃত ভবনে অবস্থিত ৬৫টি থানার জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ ছাড়ের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। একই সঙ্গে পুলিশের এসআই ও এএসআই র‌্যাংকের মোটরসাইকেল কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে। এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নতুন বাংলাদেশে পুলিশকে দেখিয়ে দিতে হবে, আমরা মানুষ খারাপ নই, বরং খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি এবং এখন দেখিয়ে দেব যে, আমাদের হাত দিয়েই নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে।’ অন্যদিকে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো অল্প সংস্কারের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একমত হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার কার্যক্রম প্রসারিত হলে নির্বাচন আরও ছয় মাস পরে হতে পারে।’ 

ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে নিয়ে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই অবস্থায় যে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে, তা হলো সমাজের স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রক রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে? এরই মধ্যে অনেকবার  নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সিনিয়র নেতারা ধারাবাহিকভাবে দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছেন। তারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে সরকারকে অলিখিত আলটিমেটাম দিয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে। বিএনপির সমমনা দলগুলোও এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো অল্প সংস্কারের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একমত হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। আর সংস্কার কার্যক্রম প্রসারিত হলে নির্বাচন আরও ছয় মাস পরে হতে পারে বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে নিয়ে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ পেলে তারা ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে অক্টোবরের মধ্যে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত যাই হোক, তা যেন কোনো পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না করে। প্রত্যাশা থাকবে, রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকারের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আমরা একটি সর্বজনগ্রাহ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন পাব। 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত