শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রমজানে নবীজির ইবাদত

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:২৩ এএম

রমজান মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। এটি আত্মশুদ্ধির মাস এবং এ মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকতেন। একই সঙ্গে তার জীবনযাপনে সংযম, দানশীলতা ও উত্তম চরিত্রের প্রকাশ ঘটত। হাদিসের আলোকে রমজানে তার ইবাদত ও জীবনযাপনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণী উল্লেখ করা হলো।

রমজানে নবীজির ইবাদত : রমজান হলো কোরআন নাজিলের মাস। তাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে কোরআনের সঙ্গে অধিক সময় কাটাতেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সুরা বাকারা ১৮৫) হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ছিলেন, বিশেষ করে রমজান মাসে যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাইল (আ.) রমজান মাসে প্রতি রাতেই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং একে অপরকে কোরআন শোনাতেন।’ (সহিহ বুখারি ৬)

তাহাজ্জুদ ও দীর্ঘ নামাজ : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের রাতে বেশিরভাগ সময় ইবাদত-বন্দেগিতেই কাটাতেন। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজে অধিক মনোযোগী হতেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করুন, এটি আপনার জন্য নফল ইবাদত। আশা করা যায়, আপনার রব আপনাকে প্রসংশিত স্থানে পৌঁছে দেবেন।’ (সুরা ইসরা ৭৯) হাদিসে বর্নিত হয়েছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম (তারাবি ও তাহাজ্জুদ) করে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি ২০০৮)

দোয়া ও ইস্তেগফার : মুমিনের প্রশান্তি দোয়া ও ইস্তেগফারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে বিশেষ দোয়া ও ইস্তেগফারে মনোযোগী হতেন। বিশেষ করে লাইলাতুল কদরের সন্ধানে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত করতেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা রাতের শেষ অংশে ক্ষমাপ্রার্থনা করত।’ (সুরা জারিয়াত ১৮) হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোন রাত, তাহলে আমি কোন দোয়া করব? তিনি বললেন, এই দোয়া বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি সম্মানিত ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাস, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (তিরমিজি ৩৫১৩)

রমজানে নবীজির জীবনযাপন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময়ই সংযমী জীবনযাপন করতেন। তবে রমজানে আরও বেশি সংযমী হতেন। তিনি সহজভাবে ইফতার করতেন। হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি খেজুর না পেতেন, তাহলে পানি পান করতেন।’ (আবু দাউদ ২৩৫৬) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে শেষ রাতে সাহরি খেতেন। তিনি বলেন, ‘সাহরির খাবারে বরকত রয়েছে, তাই তোমরা সাহরি করো।’ (সহিহ বুখারি ১৯২৩)

দান-সদকা ও মানবসেবা : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন অতুলনীয় দানশীল, বিশেষ করে রমজানে তিনি অত্যন্ত উদার হয়ে উঠতেন। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল, বিশেষ করে রমজানে যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল ছিলেন।’ (সহিহ বুখারি ৬)

উত্তম চরিত্র ও আত্মসংযম : রমজান শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার মাস নয়, বরং এটি নৈতিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধির মাস। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার বর্জন করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি ১৯০৩) তিনি আরও বলেন, ‘রমজান হলো ধৈর্যের মাস। যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা ঝগড়ায় লিপ্ত করতে চায়, তাহলে বলবে, আমি রোজাদার।’ (সহিহ বুখারি ১৮৯৪)

রমজানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইবাদত ও জীবনযাপন আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ আদর্শ। রমজানে তিনি অধিক কোরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ, দান-সদকা এবং শেষ দশ দিনে ইতিকাফের মাধ্যমে কাটাতেন। আমাদের উচিত তার সুন্নত অনুসরণ করা এবং রমজানকে যথাযথভাবে মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের হক আদায় করার তওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত