বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

নবায়নযোগ্য জ্বলানি ছাড়া বাসযোগ্য নগরী অসম্ভব

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:২৩ এএম

বাসযোগ্য নগরী গড়ার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশদূষণ প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য তেল-গ্যাস, কয়লার মতো দূষিত জ্বলানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে দায়ী করেছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা মোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সে (বিআইপি) অনুষ্ঠিত এক পলিসি ডায়ালগে এসব কথা বলেন নগর-পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদরা। এ সময় তারা বলেছেন, নবায়নযোগ্য জ্বলানি ছাড়া বাসযোগ্য গড়া সম্ভব নয়।

‘বাসযোগ্য নগরের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বলানির ভূমিকা’ শীর্ষক ডায়ালগটির যৌথ আয়োজক ছিল বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), বিআইপি, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) ও জেট নেট বিডি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। এ সময় তিনি নবায়নযোগ্য জ্বলানি সম্প্রসারণে সমন্বিত জ্বলানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) সংশোধনে জোর তাগিদ দেন।

ঢাকা নগরীর উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে জীবাশ্ম জ্বলানির ওপর নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্য। এই নির্ভরশীলতাই দেশের বর্তমান বায়ুমান পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে, যা ক্রমেই আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। বায়ুদূষণের ফলে সারা দেশে প্রতিবছর এক লাখের অধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, এর মধ্যে পাঁচ হাজারের অধিক শিশু। তিনি বলেন, ঢাকা নগরী অবাসযোগ্য শহরের তালিকায় দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ সারিতে অবস্থান করছে। এ শহরের বায়ু,মাটি, পানিসহ পরিবেশের সর্বস্তরে মারাত্মকভাবে দূষণের শিকার। এর জন্য মূলত তেল-গ্যাস, কয়লার মতো দূষিত জ্বলানি দায়ী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে এখনই জীবাশ্ম জ্বলানি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য উৎসে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সে কারণে এনার্জি মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি) সংশোধন করতে হবে। কারণ এতে জীবাশ্ম জ্বলানিকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, প্রথম কথা হলো অবশ্যই সাধ্যমতো জীবাশ্ম জ্বলানির ব্যবহার কমাতে হবে। এটি শুধু সরকার বা সরকারি সংস্থা বা শুধু নীতিমালার বিষয় নয়। এটি সচেতন সংস্কৃতির বিষয়, তা প্রত্যেকটি নাগরিকের দায়িত্ব, যা স্বভাবে পরিণত হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বলানি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে, সঠিক নীতি গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সব মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে চাপ প্রয়োগ করেও সবাইকে একত্র করে কাজ করানো সম্ভব হচ্ছে না। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের তাৎক্ষণিক কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের যেসব নীতিমালা রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘বিগত সরকার সুন্দরবন, নদী, জলাশয় ধ্বংস করে তেল, গ্যাস ও কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ দিয়েছে। সেই বিদ্যুৎ দিয়ে ঢাকা শহরে এসি চালিয়ে শীতল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দুদিকেই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন ঢাকাকে বাঁচাতে নতুন সরকারের উচিত হবে, এখানে নবায়নযোগ্য জ্বলানির সব সুযোগ কাজে লাগানো।’

অনুষ্ঠানে দেশে বাসযোগ্য নগরী গড়তে ৯টি সুপারিশ তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলোশ্বে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালি কাজসহ সর্বস্তরে জীবাশ্ম জ্বলানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা; পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বলানির উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি; দেশে বিদ্যমান জ্বলানি নীতির সংশোধন; সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প-কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ।

এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বলানির প্রসারে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক তহবিলের ব্যবহার; বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি; নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন এবং ব্যবহার উপযোগী করে ভবনগুলোর নকশা প্রণয়ন; বায়ুদূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের (ডব্লিউবিবিটি) পরিচালক গাউস পিয়ারী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের মো. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত