বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল যেমন তেতে আছে হামজা চৌধুরীর সংযুক্তিতে। ঠিক তেমনই তাতাচ্ছে ভারত সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তনে। প্রায় ১৬ মাস ও ১২ ম্যাচ জয়হীন থাকার পর ১৯ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ব্লু টাইগাররা পেয়েছে জয়ের স্বাদ। মালদ্বীপকে প্রীতি ম্যাচে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। সেই আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে মঙ্গলবার একই মাঠে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের
তৃতীয় পর্বের অভিযান শুরু করবে ভারত। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের চাওয়াটা ২২ বছরের জয়ের অপেক্ষার ইতি টানার। ভারতকে এতটা সময় একবারও হারাতে পারেনি বেঙ্গল টাইগাররা। এবার সেই দুঃখ ঘোচানোর বড় সুযোগ। কারণ ভারত শিবিরে হানা দিয়েছে চোট। সুবাদে বেশ ক’জন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নেই এই দলে। স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কেজকে শেষ মুহূর্তেও আনতে হয়েছে স্কোয়াডে পরিবর্তন। এই ভারতকে কি পারবে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ জানাতে? মানে-গুণে যে এখনো অনেকটাই এগিয়ে স্বাগতিকরা।
৪৮৯ দিন পর ১৯ মার্চ প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে ভারত। আর গত জুলাইয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর মানোলো পেলেন প্রথম জয়। তারপরও তার মনে স্বস্তি নেই। কোচের অনুরোধে চল্লিশের সুনীল অবসর ভেঙে ফিরেছেন ঠিক। নিজের ৯৫তম গোলও করেছেন মালদ্বীপের বিপক্ষে। তবে সেই ম্যাচের আগেই মানোলোকে পেতে হয়েছে বড় দুঃসংবাদ। ছন্দে থাকা উইঙ্গার মানভির সিং ম্যাচের আগে ছিটকে গেছেন চোটের কারণে। আর মাঝমাঠের মূল অস্ত্র ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেজকেও বাংলাদেশ ম্যাচে দর্শক বানিয়েছে চোট। এর আগে থেকেই স্কোয়াড গোছাতে সমস্যায় পড়তে হয় মানোলোকে। চোটের কারণে ডিফেন্ডার আনোয়ার আলী, উইঙ্গার লালিয়ানজুয়ালা চাংতে ও ডিফেন্ডার আশিষ রয়কে রাখতে পারেননি ভাবনায়। মানোলোর দলে নেই অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীতি সিং সান্ধুও। বাজে ফর্মের কারণে জায়গা হারিয়েছেন এই অভিজ্ঞ কিপার। সব মিলিয়ে র্যাংকিংয়ে ৫৯ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটাও ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের।
তারপরও সুনীলের এই দলকে এগিয়ে রাখতে হবে হামজার দলের থেকে। সেটা চল্লিশেও ভীষণ উজ্জ্বল স্ট্রাইকারের কারণেই। রবিবার বিকেলে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম লাগোয়া প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে কনকনে ঠান্ডা আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার তপু বর্মণ, ‘ভারত সবসময়ই শক্তিশালী। তাদের দলে যারা এসেছে তারা সবাই আইএসএল-এ খেলে এসেছে। আর চোটের কারণে বদলি হিসেবে যারা এসেছে তারাও খুব ভালো। সব মিলিয়ে তারা খুবই ভালো টিম। আমাদের মানতেই হবে সেটা। আর যদি সুনীল ছেত্রীর কথা বলি, সে যখন থেকে অবসর নিয়েছিল, তখন থেকে কিন্তু ভারত আর ম্যাচ জেতেনি। সে ফেরার পর আবার ভারত ম্যাচ জিতেছে। তাতে আমরা বুঝতেই পারছি সুনীলের ইমপ্যাক্ট কতটা। আমাদের সুনীলকে নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা রাখতেই হবে।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ অবধি ছয় ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ছয়টি। সর্বশেষ ২০২১ সালে দোহায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে করেছিলেন জোড়া গোল। এছাড়া অনেক ম্যাচেই বাংলাদেশকে জয় বঞ্চিত করতে সুনীল জ্বলে উঠেছেন একেবারে শেষ মুহূর্তে। তাই সুনীলের ফেরাটা কাবরেরার দলের জন্য একটু অস্বস্তির তো বটেই। তবে হামজার এ বাংলাদেশকে একেবারেই ভীত মনে হচ্ছে না মেঘের রাজ্যে আসার পর থেকে। এটা ঠিক বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে তাদের মানিয়ে নিতে হচ্ছে, এটাও ঠিক, স্বাগতিক ভারতের কাছ থেকে যথেষ্ট আতিথেয়তাও মিলছে না। বিশেষ করে স্বাগতিক হওয়ার পূর্ণ সুবিধা নিয়ে তারা শিলং আসার পর থেকেই ট্রেনিং করছে ম্যাচ ভেন্যুতে। আর বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্টকে প্র্যাকটিস ভেন্যু বারবার করা হচ্ছে বিভ্রান্ত। এসব নিয়ে দলে বিরক্তি আছে ঠিক। তবে এসব মেনেই ভারতকে একটা শিক্ষা দিতে চাইবে বাংলাদেশ।
দিন চারেক আগে এখানে মালদ্বীপকে হারানোর একটা তৃপ্তি হয়তো আছে ভারত কোচ মানোলোর। তার অধীনে ষষ্ঠ ম্যাচে এসে জয় পেয়েছে তেরঙ্গারা। তবে প্রীতি ম্যাচকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের সঙ্গে। যেহেতু সি গ্রুপে ভারতই ফেভারিট। আবার র্যাংকিংয়ের হিসেবে তলানিতে বাংলাদেশ। তাই এটা তাদের জন্য মাস্ট উইন গেম। এমন ম্যাচের আগে চোটের উপর্যুপরি হানায় মানোলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ। সেই সঙ্গে ভাবনাটা বেড়েছে বাংলাদেশের প্রাণভ্রমরা হয়ে অভিষেক হতে যাওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ তারকা হামজা চৌধুরীর কারণে। শিলংয়ের জল-হাওয়ায় অন্যদের একটু সমস্যা হলেও সে সমস্যা নেই হামজার। তাই শুরুর ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে সুনীলের ভারতকে থমকে দেওয়ার পরিকল্পনাই নিশ্চয় করেছেন হামজা।