নানা জটিলতায় আট বছরেও শেষ হয়নি এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের টাঙ্গাইল অংশের কাজ। এতে আসন্ন ঈদেও যমুনা সেতু-ঢাকা মহসড়কে যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহন চালকরা। তারা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও কর্র্তৃপক্ষের তদারকির অভাবই কাজে ধীরগতির মূল কারণ। তবে নির্মাণ কাজের ধীরগতির কথা অস্বীকার করে যথাযথভাবেই কাজ হচ্ছে বলে দাবি করেন প্রকল্প পরিচালক।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম যমুনা সেতু-ঢাকা মহাসড়ক। শুধু ঢাকা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে টাঙ্গাইলের অংশ ৬৫ কিলোমিটার। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের সফটওয়্যারে সমস্যার কারণে টোল আদায় দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকলে এবং সেতুর ওপর দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা থাকলে যানজট হয়। অপরদিকে যমুনা সেতু পশ্চিম অংশে সিরাজগঞ্জের অংশে গাড়ি ঠিকমতো পাস না হয়, তাহলে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক ঈদেও সিরাজগঞ্জের অংশে গাড়ি ঠিকমতো পাস হওয়ার কারণে যমুনা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ থাকে। ফলে টাঙ্গাইলের অংশে দীর্ঘ যানজট হয়। প্রতি বছরই ঈদকে সামনে রেখে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে লক্কড়ঝক্কড় এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করে। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে উভয় পাশের গাড়ি থেমে পড়ে। এক পর্যায়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় চালকের অদক্ষতা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট হয়।
সরেজমিনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, মহাসড়কের এলেঙ্গার পর থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে উন্নয়ন কাজ চলছে। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গগামী লেনে পুরোদমে কাজ চলছে। বিশেষ করে ব্রিজের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ঢাকাগামী লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ী এলাকায় ব্রিজের কাজ করা শ্রমিক সেলিম মিয়া বলেন, ঈদের আগে ব্রিজের কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে। আমরা আট শ্রমিক মিলে এখানে সার্বক্ষণিক কাজ করছি। আশা করছি যথাসময়ে কাজ শেষ করতে হবে। উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনের চালক ফরহাদ হোসেন বলেন, মহাসড়কে পুলিশের সঠিক তদারকি প্রয়োজন। এ ছাড়া এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত কাজ করছে। কাজ শেষ না হলে এবারও মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করছি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়াল বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ঈদের আগেই মহাসড়কের এই অংশের উত্তরবঙ্গগামী পুরো লেন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। শিগগিরই এ লেনে যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান জানান, ঈদের আগে মহাসড়কে মেরামতের কাজ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া গোবিন্দাসী সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্যও প্রস্তুত রাখা হবে।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, ঈদযাত্রায় যমুনা সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে। এবার সেতুর দুই প্রান্তের ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য ২টি করে আলাদা বুথ থাকবে।
এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর চার লেন প্রকল্পের পরিচালক ওয়ালিউর রহমান জানান, ২০১৬ সালে প্রকল্প হাতে নিলেও টেন্ডার জটিলতায় ২০২১ সালে মহাসড়কের এই অংশের কাজ শুরু হয়। মাটি ভরাটের কিছু সমস্যা থাকায় কোনো কোনো জায়গায় কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। সে সব সমস্যা কাটিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।