বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

লড়াই নতুনে-পুরানে

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৬ এএম

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা ফুটবল। পায়ের জাদুর ঝলকানি, দলবদ্ধ নৈপুণ্য কিংবা একক প্রদর্শনী সব মিলিয়ে মাঠের ফুটবল কবিতার মতো ছন্দময় ও দারুণ শৈলীপূর্ণ হয়ে ওঠে খেলাটিকে ভালোবাসা দর্শকসারির কাছে। সেই উত্তেজনা আরও তুঙ্গে ওঠে যখন দুপাশে থাকেন দুই ক্ষুরধার প্রতিভাবান ফুটবলার। আর তাদের মধ্যে চলতে থাকে অনবদ্য প্রতিযোগিতা। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ ও ভারতের দলে রয়েছেন এমনই দুজন। যাদের একজনের দেশের জার্সিতে অভিষেক হতে চলেছে আরেকজন ফিরে এসেছেন অবসর ভেঙে। বাংলাদেশের হামজা চৌধুরী ও ভারতের সুনীল ছেত্রী; একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার অন্যজন ফরোয়ার্ড। মাঠের লড়াইয়ে এ দুজনের প্রায় পুরোটা সময়ই মুখোমুখি হতে হবে একে অন্যের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিটি দলের ভক্তরাই নিজের তারকার পক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন। কিন্তু দুজনের এ অলিখিত দ্বৈরথের ফয়সালা আজ ঠিকই হয়ে যাবে শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে।

হামজা চৌধুরী, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এ মিডফিল্ডার বর্তমানে লেস্টার সিটি থেকে ধারে খেলছেন চ্যাম্পিয়নশিপের দল শেফিল্ড ইউনাইটেডে। ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলা হামজা গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ডিসেম্বরে ফিফার কাছ থেকে অনুমতি পান দেশের হয়ে খেলতে। বাংলাদেশের হয়ে হামজার খেলা নিশ্চিতের পরপরই দেশের ফুটবল পালে লেগেছে নতুন হাওয়া। ভক্তকুলের কামনা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তিনিই হবেন তুরুপের তাস। অন্যদিকে ভারতের সর্বকালের সেরা গোলস্কোরার সুনীল ছেত্রী। নিজের দেশের হয়ে ১৫০ ম্যাচ খেলে ৯৫ বার বল জালে পাঠিয়েছেন এ কিংবদন্তি। এমনকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, আলি দাইয়ি ও লিওনেল মেসির পর তিনিই পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা। গত বছরের মে মাসে অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া ছেত্রী এই মার্চ মাসেই আবার ফিরে এসেছেন ফুটবল মাঠে। এসে গোলও করে ফেলেছেন এরই মধ্যে। আর ৪৮৯ দিন পর জয় পাইয়ে দিয়েছেন নিজের দেশকে।

ছেত্রীর ফেরা নিয়ে তার নিজের দেশেই হয়েছে অনেক সমালোচনা, যে তালিকায় রয়েছে আরেক কিংবদন্তি বাইচুং ভুটিয়াও। তাই শিলংয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি চল্লিশ পেরোনো সুনীলের কাছে সম্মান বাঁচানোর উপসঙ্গও। ২০২৭ সালে সৌদি আরবের এশিয়ান কাপে চার দলের গ্রুপ থেকে সুযোগ পাবে একটি দল। তাই দুই দলেরই চোখ জয়ের দিকে। সুনীলকে অবলীলায় ভারতের গোলমেশিন আখ্যা দেওয়া যায়। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ সবশেষ দুই ম্যাচ খেলে ২০২১ সালে। জুনে দোহায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে তারই দেওয়া দুই গোল হজম করে হারে বাংলাদেশ। অক্টোবরে সাফের ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটিতেও ভারতের হয়ে গোল করেছিলেন সুনীল। এর আগে ২০১৩ সালে কাঠমান্ডুতে ও ২০১৪ সালে গোয়াতে যোগ করা সময়ে গোল করে বাংলাদেশের জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এবার অবশ্য সেই কাজটি খুব সহজ হবে না। কারণ এ যাত্রায় বাংলাদেশের আক্রমণভাগে ঢোকার মুখে তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন হামজা চৌধুরী।

দেশে এসেই নিজের পছন্দের পজিশনের কথা খোলাসা করেছিলেন হামজা। মাঠে হামজাকে সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। আর সেটা হতে পারে ডানপ্রান্তে। হামজার বক্স টু বক্স খেলতে পারার ক্ষমতা বাড়তি সুবিধা এনে দেবে দলকে। কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও নিয়ে আসতে পারেন নতুন কৌশল। বাংলাদেশকে দেখা যেতে পারে ৪-৩-৩ কিংবা ৪-২-৩-১ ফরমেশনে। প্রথম পরিকল্পনায় তিনি হতে পারেন অল-অ্যাকশন মিডফিল্ডার। ভারতের বিল্ড আপ ভাঙা, পাস ইন্টারসেপ্ট করা কিংবা ফরোয়ার্ডকে বল জোগান দেওয়ার ভূমিকা পালন করতে দেখা যাবে হামজাকে। পরের পরিকল্পনায় জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে হামজা পালন করবেন ডাবল পিভটের দায়িত্ব। এখানে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণ শানানোর মূল কাজ করবেন তিনি। আর বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে হামজার পায়ে গোল এলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ মৌসুমে তার ৮৪ শতাংশ সফল পাসের হারই ভয় ধরিয়ে দিতে সক্ষম ভারতের মনে। এ ছাড়া হামজা জিতেছেন ৫৮ শতাংশ ডুয়েল, যার মধ্যে ডিফেন্সিভ পজিশনে হারটা আরও বেশি ৬৬ শতাংশ। অফেন্সিভে ৫৮ শতাংশ ও এরিয়ালে ৪৫ শতাংশ। হামজাকে কেন্দ্র করে দলের অন্য ফুটবলাররা তাদের দায়িত্বটুকু সফলভাবে পালন করতে পারলে এবার হয়তো সুনীলের চোখে জল নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতে পারে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত