দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দলে তো নেই-ই, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতেও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বড় দলগুলো বাদ দিলে কোনো দলেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা কোনো ফুটবলার হয়তো নেই। এফএ কাপ জয়ী, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত একাদশে খেলা এবং ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলা কোনো ফুটবলার যখন ফিফা র্যাংকিংয়ের ১৮৫ নম্বরে থাকা দেশের হয়ে খেলতে রাজি হয়ে যান, তখন সেটা শান্ত পুকুরে ঢিল ছোড়ার মতোই একটা ঘটনা। যার প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে যায় অনেক দূর। হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন ভারতের বিপক্ষে, ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের ভার্চুয়াল আড্ডা থেকে কোচের সংবাদ সম্মেলন সব জায়গাতেই তাই হামজার অবধারিত উপস্থিতি।
ভারতের কোচ মানালো মার্কেজ, তিনিও স্প্যানিশ। বাংলাদেশ এবং ভারত, দুই ক্রিকেট অনুরাগী দেশের ফুটবল দলের কোচ দুই স্প্যানিয়ার্ড, এই মিলটা ছাড়াও হাভিয়ের কাবরেরা আর মার্কেজের মধ্যে একটা মিল হচ্ছে, দুজনকেই হামজা-সংক্রান্ত প্রশ্নেরই বেশি উত্তর দিতে হয়েছে সোমবার। মার্কেজকে দ্বিতীয় প্রশ্নেই হামজার প্রসঙ্গে উত্তর দিতে হয়েছে, ‘সে (হামজা) খুব ভালো খেলোয়াড়। সে প্রিমিয়ার লিগে খেলছিল, এখন যদিও সে চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছে, তবে তার দল উন্নতি করবে (প্রিমিয়ারে ফিরবে শেফিল্ড, টেবিলে দ্বিতীয়)। আমার মনে হয় শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, তার উপস্থিতি এশিয়ান ফুটবলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার বাবা না মা কে বাংলাদেশের ছিল আমি জানি না, শুধু জানি যে সে ভালো খেলোয়াড় এবং সে দলে এলে বাকি সদস্যরা উজ্জীবিত হবে।’
সঙ্গে অবশ্য কোচ বলেছেন যে মাত্র এক সপ্তাহ দলের সঙ্গে কাটিয়ে মাঠে কী প্রভাব ফেলবেন হামজা তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। দলীয় খেলায় ১১ জনের ভেতর একজন অসাধারণ হলেও বাকিরা তো সাধারণ মানেরই। তাই রাতারাতি বদলে যাওয়ার গল্প হয়তো হবে না বাংলাদেশের। তবে হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলায় সরব হয়েছে ভারতীয় ফুটবল সমর্থকরাও। হামজার মতো প্রবাসী ফুটবলারদের কেন ফুটবল দলে নিতে পারছে না ভারত? এই ব্যাপারে মুম্বাইতে থাকা ভারতীয় সাংবাদিক নাভিন পিটার দেশ রূপান্তরকে জানালেন আইনি বাধার কথা, ‘ভারত দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার সুযোগ দেয় না। ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে হলে অন্য দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হবে। অনিবাসী ভারতীয়দের ভারত সরকার একটা মর্যাদা দেয়, এর ফলে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, যা মূলত কর এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত। এই মর্যাদার জোরে ফুটবল দলে খেলা যাবে না, কারণ ফিফা নাগরিকত্বের প্রত্যয়নপত্র হিসেবে একমাত্র পাসপোর্টকেই গ্রহণ করে। আমার মনে হয় না বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত যেসব ফুটবলার আছে, তাদের কেউ ইউরোপ বা অন্যদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে শুধুই ভারতের নাগরিক হতে রাজি হবেন।’
ভারতীয় কোচ স্বীকার করুক বা না করুক, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ এবং হামজার উপস্থিতি আছে বলেই তিনি ফিরিয়েছেন সুনীল ছেত্রীকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সুনীল বরাবরই হুমকি, আর কোচ বললেন তার গোল করার মানুষ চাই, ‘সুনীল ভারতের ফুটবলের একজন কিংবদন্তি, সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে আমি দলে ডেকেছি, কারণ এটা সত্যি যে আমার প্রথম দিকের ম্যাচগুলোতে আমরা গোলের দেখা পাচ্ছিলাম না। আমরা ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এমনকি সিরিয়ার বিপক্ষেও সুযোগ পেয়েছিলাম; যে ম্যাচটা আমরা ৩-০ গোলে হেরেছি। যখনই আমি ভারতের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তাকাই, দেখি যে সে অনেক অনেক এগিয়ে। এটা সত্যি যে বেশিরভাগ ক্লাব বিদেশি ফরোয়ার্ড নিয়েই বেশি খেলে, তবে আমার মনে হয় তাকে পাওয়াটা আমাদের দলের জন্য দারুণ একটি সংযোজন। সুনীলের বেলায় বয়সটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
অবসরে যাওয়া ফুটবলারকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, বিদেশিদের খোঁজ চলছে এরপরও যদি ভারতের ফুটবলে ‘হামজা ইফেক্ট’-এর ছোঁয়া লাগেনি কথাটা বলা হয়, সেটা হবে মস্ত বড় ভুল।