বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে সোমবার (২৪ মার্চ) সকালে টস করতে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল। অন্যদিনের মতোই দৃশ্য। তবে তাতেও যেন একটু অচেনার ছাপ। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচের জন্য টস করার সময় কয়েনটা এমনভাবে উড়িয়ে দিলেন তামিম যেন ওপর দিকে তাকাতেই পারছিলেন না। ব্রডকাস্টারের সঙ্গে তামিমের কথা বলাটাও স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল না। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা সেরে যান ড্রেসিংরুমে। তারপরই সব ওলটপালট হয়ে গেল। বুকের ব্যথা, তীব্র অস্বস্তি। খেলার উত্তেজনার জায়গায় নেমে এলো উৎকণ্ঠা।
সময় যত গড়ায় ব্যথা আরও তীব্র হয়। ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পালের অনুমতি নিয়ে তামিমকে সাভারের কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে নিয়ে যায় মোহামেডান কর্তৃপক্ষ। ইসিজি ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিলে তামিমকে হাসপাতালে থাকতে বলেন চিকিৎসকরা। ৩৭ বছর বয়সী তামিম তখন নিজ থেকেই মোহামেডান কর্মকর্তাদের ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকেএসপির মাঠে আনা হয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
হাসপাতাল থেকে বিকেএসপিতে ফিরলেও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে পারেননি তামিম। বরং তখনই আরেক দফায় বাড়ে বুকের ব্যথা। ওই সময়ই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করেন তামিম, পরে জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী। তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় সাবেক জাতীয় অধিনায়ককে খুব দ্রুত আবারও কেপিজে হাসপাতালে আনা হয়। পুরোটা পথ তাকে ‘সিপিআর’ দেওয়া হয়। ওই সময় তামিমের মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছিল এবং হৃৎস্পন্দন ছিল না কোনো।
হাসপাতালে আনার পর তাই তামিমকে ‘ডিসি শক’ দেওয়া হয়। এনজিওগ্রাম করানো হয়। এতে তার ‘লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং আর্টারি’তে শতভাগ ব্লক ধরা পড়ে। চিকিৎসক মনিরুজ্জামান মারুফের তত্ত্বাবধানে তামিমের রক্তনালির ওই ব্লকে স্টেন্টিং করানো হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা রাজিব বলেছেন, ‘সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার দিকে উনি অসুস্থ হলে এখানে নিয়ে আসে, এখানে ওনার চিকিৎসা শুরু হয়। একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল এটার জন্য একটা এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্ট এবং স্ট্রেন্থ করা হয়।’
সময়মতো চিকিৎসা না পেলে আরও ক্ষতি হতে পারত ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই স্মুথলি ও এফিসিয়েন্ট হয়েছে। আমাদের যে কার্ডিওলজিস্ট ডক্টর মারুফ আছেন, উনি করেছেন। খুব ভালো হয়েছে ব্লকটা পুরোপুরি চলে গেছে এখন। আমরা যেমনটি বলছিলাম একটু ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে ছিল, এখন উনি অবজারভেশনে আছেন; একটু সময় লাগবে। আমরা সবাই উনার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করছি।’
দিনের পরের দিকে জ্ঞান ফেরে তামিমের। চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলতে পেরেছেন। এ সময় আরেক বোর্ড পরিচালক ও তামিমের চাচা আকরাম খানও পাশে ছিলেন। আপাতত ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবেন তামিম। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, রিং প্রতিস্থাপনের পরের এ সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিসিবিতে সোমবার ছিল বোর্ডের ১৯তম সাধারণ সভা। কিন্তু তামিমের অসুস্থতার খবর শুনে সেই সভা স্থগিত করা হয়। বোর্ড পরিচালকরা হাসপাতালে ছুটে যান তাকে দেখতে। খেলা শেষে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজসহ অন্যান্য ক্রিকেটার হাসপাতালে ছুটে যান তাকে দেখতে।
অসুস্থতার খবর মুহূর্তেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও সেরা ওপেনারকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় জমান তার ভক্তদের অনেকেই। তামিমের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।
বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা সব চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের প্রতি কৃতজ্ঞ। তামিমের জন্য এমন উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশে প্রতিফলিত হয়, দেশের মানুষ তাকে কতটা ভালোবাসে। তামিমের দ্রুত সেরে ওঠা নিশ্চিত করতে বোর্ড সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তামিমের সুস্থতার জন্য তার পরিবার ও বিসিবি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে। তার সুস্থতা কামনা করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স, লাসিথ মালিঙ্গা, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মনোজ তিওয়ারিসহ সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা।