সাতটি পাহাড়ি ছড়ার ভেতর গড়ে ওঠা বন সাতছড়ি। বড় ছড়াটির নাম বাইমা তুইসা। স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ককবরক ভাষায় ছড়াটির নাম দিয়েছেন হাজার বছর আগে। কাছেই চাকলাপুঞ্জি, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় যেখানে নব্যপ্রস্তর যুগের বসতির প্রমাণ মিলেছে। বাইমা তুইসার আরেক বোন ততা তুইসা একেবারে ত্রিপুরা সীমান্ত ধরে বইছে। বাকি পাঁচ বোনেরা নিখোঁজ। সবচেয়ে কম জায়গায় বণ্যপ্রাণীর সর্বাধিক বৈচিত্র্য আছে এই বনে। ২০০৫ সালে রঘুনন্দন পাহাড়ি সংরক্ষিত বনের ২৪৩ হেক্টর জঙ্গল ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করা হয়।
বাইমা তুইসা সাতছড়ি বনের প্রাণ। কিন্তু নিদারুণভাবে আজ এই পাহাড়ি আন্তঃসীমান্ত নদী ছিন্ন ভিন্ন। বছরের একটা বড় সময় ছড়াতে আর পানিপ্রবাহ থাকে না। সব বন্যপ্রাণীর জন্য পানিসংকট তীব্র থেকে তীব্রতর এখন। একই সঙ্গে বর্ষায় যখন পাহাড়ি ঢল নামে তখন এই ছড়ার দুই ধারের টিলা ধসে যায়। এতে সাতছড়ি পাহাড়ি বনের বাস্তুতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং বহু বন্যপ্রাণীর বিচরণসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাঙনের আশঙ্কায় আছে বনের প্রাচীন বসতি ত্রিপুরা কামি। পাহাড়ি ঢলের পানি এই ছড়া দিয়ে এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না। প্রচুর অভ্যন্তরীণ ঘূর্ণি ও ঢেউ তৈরি হচ্ছে। কেন এমন ঘটছে? এর অন্যতম কারণ নিউলিবারেল লোভ, লুণ্ঠন এবং মুনাফার উল্লম্ফন। এই পাহাড়ি ছড়া থেকে নির্বিচার বালি তোলা হচ্ছে, এলোপাতারি, কোনো নিয়মনীতি এবং প্রতিবেশগত অনুশীলনকে পাত্তা না দিয়ে। বর্ষায় ঢলের পানি যখন প্রবাহিত হয় তখন উজান থেকে পানি ভাটির দিকে যাওয়ার কারণে সাতছড়ি বনের ভেতর দিয়ে পানির স্রোত তীব্র বেগে সুরমা চা বাগানের দিকে ধাবিত হয়। এর কারণ হলো ভাটিতে সুরমা চা বাগানে বালি খনন করে গর্ত তৈরি করার কারণে পাহাড়ি স্রোতের মাধ্যমে মূলত সেই গর্তগুলো ভরাট হতে থাকে। এ কারণে উজানের দিকে সাতছড়ি বনে অধিক ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন ওঠতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী পার করে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আজ কেন দেশের এক বিরল বনের এক ক্ষতবিক্ষত পাহাড়ি ছড়া নিয়ে আলাপ শুরু করলাম?
একটি নদী ছড়া বা পাহাড়, অরণ্য কী বন্যপ্রাণ হারিয়ে গেলে বা মরে গেলে কী এমন ক্ষতি হয়? দেশের উন্নয়নে এদের অবদানই বা কী? কিংবা স্বাধীনতা বলতে আমরা সর্বদা কী একই এথনোপোসেন্ট্রিক ন্যারেটিভ শুনব? এই প্রবল কলোনিয়াল আর বাহাদুরির ন্যারেটিভ কী বদলাবে না? ‘স্বাধীনতা’ কী, কার চোখে, কার পরিসরে এবং কার ব্যবস্থাপনায় এই প্রশ্ন কী আমাদের থাকবে না। তাহলে আমাদের উত্থাপিত ইনক্লুসন আর বহুত্ববাদ মানে কী? কেবল মানুষের জন্য, কেবল মানুষকে নিয়ে, এমনকি কেবল বাঙালি মুসলিম পুরুষ মানুষকে নিয়ে আমরা বারবার যে ন্যারেটিভ দাঁড় করাই তা কিন্তু এই ভূগোলের ঐতিহাসিকতা এবং বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে। জনবয়ান ও জনআকাক্সক্ষাকে পাঠ না করতে পারার তুমুল ব্যর্থতাকে মেলে ধরে। পাখি, পতঙ্গ, গাছ, নদী, ছড়া, পাহাড়, বীজের স্বাধীনতা অবশ্যই আমাদের রাষ্ট্রীয় ও নাগরিক ডিসকোর্সের প্রধান অংশ করতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি বাদ দিয়ে কোনোভাবেই এই গ্রহে মানুষের স্বাধীনতার আলাপ সম্ভব না। এই আলাপ খন্ডিত, হঠকারী, মারমুখী, লুটেরা, বর্ণবাদী এবং নিপীড়ক। আমাদের এই যন্ত্রণা এবং বঞ্চনার দেয়াল চুরমার করতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বাধীনতার আলাপরে উচ্চকণ্ঠে নাগরিক আলাপ করে তুলতে হবে। সব প্রাণ-প্রজাতির ব্যক্তিসত্তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। সব প্রাণ-প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্রের অধিকার সুরক্ষায় দায়বদ্ধ হতে হবে। সংবিধান, রাষ্ট্রের নীতি, নাগরিকের চিন্তাদর্শন এবং এজেন্সির দৃষ্টিভঙ্গিতে এই পরিবর্তন আসতে হবে। আর এটাই অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী সংস্কার। দেশ স্বাধীনের সুবর্ণজয়ন্তী এবং জুলাই অভ্যুত্থানের পর হয়তো এমন নির্দয় প্রশ্ন বা চিন্তা থাকার কথা ছিল না, কিন্তু আছে। আর আছে বলেই আমাদের চোখের সামনে নিদারুণভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কত পাহাড়, জলাভূমি, প্রাণবৈচিত্র্য কী বাস্তুতন্ত্র। কেবল মানুষের জন্য উন্নয়ন করতে গিয়ে বেঘোরে মরণ হয়েছে দেশের প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশের। স্থলের সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতি থেকে শুরু করে মৌমাছির মতো ক্ষুদে প্রাণ কেউ আজ আর নিরাপদে নেই। আমাদের শিশুরা বড় একা বিষন্ন মনমরা দগ্ধ শিশুকাল নিয়ে বড় হচ্ছে।
কথা ছিল স্বাধীনের পর ভ্রমরের গুঞ্জন থাকবে, নদীর কলতান থাকবে, পাতার মর্মর থাকবে, পাখির কিচিরমিচির বা সাপের ফোঁসফোঁস থাকবে, বাঘের গর্জন কী মাছের তরতর থাকবে। কিন্তু আমাদের চারধারে এসব কিছুই নেই। আমাদের শিশুরা চারধারে প্লাস্টিক, দূষিত বাতাস, কার্বনের জঞ্জাল আর শরীরে সংহারী বিষ নিয়ে বেড়ে উঠছে। আজ চালের নাম হয়েছে ‘মিনিকেট’, যদিও এ নামে কোনো ধান নেই দুনিয়ায়। তিলবাজাল, নোনাখচি, সমুদ্রফেনা, রাতা, গচি, লক্ষ্মীকাজল, পিঁপড়ারচোখ, লালবিনি, খবরক, গুড়িয়ার মতো আমাদের ধানকে নিখোঁজ করল কারা? কে চালের মিথ্যা নাম দিল মিনিকেট? রাষ্ট্র কেন মিথ্যাচারের বিচার করল না? প্রান্তরব্যাপী খেলার মাঠের সত্যকে লুকিয়ে আজ আমরা শিশুকে ঢুকিয়ে দিচ্ছি দেয়ালবন্দি ‘গেমপার্কে’। তো গায়ের জোরে কেবল মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের কী হয়েছে? প্রাণ-প্রকৃতির অবদান আর বিস্তারকে অস্বীকার করা হয়েছে। বদলে গেছে বাস্তুতন্ত্র নির্ভর আমাদের জীবনসংস্কৃতি, চুরমার হয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, বাড়ছে সংকট, অস্থির হয়ে উঠছে পরিবেশ-বিচ্ছিন্ন জীবন। পরিবেশগত মুক্তির জন্য আমাদের লড়তে হবে, এর জন্য আমাদের সামগ্রিক প্রস্তুতিও জরুরি। দেশ স্বাধীনের পরে রাষ্ট্র কোনোভাবেই অণুজীব থেকে ডলফিন, শৈবাল থেকে বটগাছ কোনো প্রাণ-প্রজাতির স্বাধীন জীবন এবং জীবনের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দিতে পারেনি। কেবল রাষ্ট্র যখন ভয়াবহ সংকটে পড়ছে শুধু সেই ক্রান্তিকালীন সময়ে কিছুদিনের জন্য মানুষ প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের কাছে নতজানু হয় বা ভান করে। বৈশি^ক কোভিড মহামারীর রাষ্ট্র ও এজেন্সি প্রাণ-প্রকৃতির গুরুত্বকে বারবার উচ্চারণ করেছে।
২. চলতি আলাপখানি আমরা শুরু করেছিলাম পাহাড়ি বনের ভেতর উন্নয়নের নামে ক্ষতবিক্ষত এক পাহাড়ি ছড়ার স্মৃতিকথায়। তো এই পাহাড়ি ছড়ার ধারে আগে অনেক বলং কেরাং (পাহাড়ি কচ্ছপ) দেখা যেত, যে কারণে একটা বিশেষ পাহাড়ের নাম হয়েছিল কেরাং-বলং। আজ কচ্ছপ হারিয়েছে। দেশের অধিকাংশ পাহাড় জঙ্গলে পাহাড়ি কচ্ছপ নেই। গাজীপুরের শ্রীপুরে এক বাজারের নাম ‘বাঘেরবাজার’। একসময় গহিন শালবনের এই অঞ্চল বাঘের বিচরণস্থল ছিল বলেই এই নাম। হাতির নামে শেরপুরের সীমান্তবর্তী অনেক গ্রামের নাম হাতিবান্ধা কী হাতিপাগার। নওগাঁর নিয়ামতপুরের ঘুঘুডাঙ্গা ছিল ঘুঘুপাখির বিচরণভূমি। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সুন্দরবনের এক গ্রাম দাঁতিনাখালী নাম পেয়েছে দাঁতিনা মাছের নামে। আর গাছের নামে কত যে নাম হয়েছে মানববসতির তার হিসাব নেই। বটেশ্বর, বটতলা, শিমূলতলী, পলাশতলী, তালতলী, ছাতিমতলা, নাগেশ্বর, ছাতিমতলা, ছাতিয়ান এ রকম গাছের নামে নাম নেই এমন অঞ্চল খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোনো একটি গ্রাম কী অঞ্চলের স্থাননামের ইতিহাস ধারণ করে সেখানকার বসতিস্থাপন, বাস্তুতন্ত্র, জীবন-জীবিকা এবং মানুষের মনস্তত্ত্ব। দেশের নানা অঞ্চলের আদি স্থান নামের বিশ্লেষণে দেখা যায়, চারধারের প্রাণবৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য থেকেই অধিকাংশ স্থানের নাম গড়ে উঠেছিল। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরে স্থাননামের এই ধারা বদলে গেছে। দেশ স্বাধীনের পর নতুনভাবে নাম পাওয়া দেশের নানা অঞ্চলের স্থাননামে স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। আছে ধর্মভিত্তিক এবং জনমিতির রাজনীতি এবং প্রবল কলোনিয়াল বাইনারি বিভাজন। স্থান নামের এই পরিবর্তনশীলতা দেশের প্রাণ-প্রকৃতির অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক সামাজিক নির্দেশক।
৩. মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের রেখায় দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাই দেশে মানুষের সংখ্যা তরতর করে বাড়ে। কিন্তু নিদারুণভাবে নিখোঁজ হয়েছে বাঘ, শকুন, হাতি, বনরুই কি বটগাছ। প্রায় প্রতিদিন হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো রাষ্ট্র হত্যাকারীর কোনো দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি দিতে পারেনি। প্রতিটি প্রাকৃতিক বনে বারবার অগ্নিকা- ঘটছে, অথচ কোনো বিচার নেই। আমরা হারিয়েছি তিনটি ঋতুর অবিরল বৈচিত্র্য। শরৎ, হেমন্ত আর বসন্ত উধাও হয়েছে ষড়ঋতুর বাংলাদেশ থেকে। গত পঞ্চাশ বছরে বেশকিছু নির্দয় দমবন্ধ পরিবেশগত পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। চারপাশে তৈরি হয়েছে অনেক নতুন যন্ত্রণাময় শব্দভান্ড। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ, দূষিত পানি, বন নিধন, বৃক্ষ উজাড়, কালো ধোঁয়া, ইটের ভাটা, কৃষিজমি হ্রাস, নদী দখল, সীসাদূষণ। পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেড়েছে লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়, উত্তরাঞ্চলে তাপদাহ ও খরা, উত্তর-পূর্বে পাহাড়ি ঢল, মধ্যাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ধস, দেশ জুড়ে নদীভাঙন, বজ্রপাত, অগ্নিকান্ড, রাসায়নিক বিস্ফোরণ, জলাবদ্ধতা।
৪. একটা সময় রাজা-বাদশাহের আমলে বাঘ, হরিণ, বুনোমহিষ, গয়াল, অজগর, গন্ডার খুন করাকে ‘অভিজাতপনা’ হিসেবে দেখা হতো। সেই কাল চলে গেছে। বন্যপ্রাণী হত্যাকে রাষ্ট্র এখন ‘অবৈধ’ ও ‘বেআইনি’ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বন্যপ্রাণী হত্যা কিংবা বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য আরও মোটাতাজা হয়েছে। চাইলে বাঘ কি বনরুই নিমিষেই হাজির হবে। শুধু পয়সা ছড়ালেই হয়। সবুজ বিপ্লবের নামে মাটি ও শস্যদানা সব আজ বিষাক্ত। কিন্তু এই বিষ কে খাচ্ছে? আর কে খেতে চাচ্ছে না। বলা হয় ‘সচেতন মানুষ’ সার-বিষে ভরা এমনতর ‘অনিরাপদ খাদ্য’ খেতে চায় না। তারা গ্রামের টাটকা ফল ফলাদি, গৃহস্থ বাড়ির সতেজ দানা আর নদীর খলবলে মাছ খেতে চায়। এই ‘সচেতন’ মানুষ কারা? গ্রামের গরিব কৃষিমজুর না শহরের ধনীর দুলাল? করপোরেট চেইনশপে আজ বিষমুক্ত নিরাপদ খাবারের নাম হয়েছে ‘অর্গানিক ফুড’। এসব অর্গানিক নিরাপদ খাবারের দাম বেশি। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরে কেন আমাদের খাদ্য এমন বিষাক্ত হলো? কারা করল? কেন খাদ্য ও পানীয়র মতো অতি জরুরি বিষয় এমন বিষাক্ত ও বিষমুক্ত, এমন নির্দয়ভাবে ভাগ হলো? কেবল ভাগ হলো না, নির্লজ্জভাবে সবার সামনে বিক্রি শুরু হলো। এখন প্রশ্ন হলো, এসব সার-বিষের ব্যবসা কে করে আর কে ব্যবহার করে? মনস্যান্টো কোম্পানির রাউন্ডআপ সারা দুনিয়ার বহুল বিক্রীত ‘আগাছানাশক’। সিনজেনটা কোম্পানির রিফিট নামের একটি ‘আগাছানাশক’ বাংলাদেশের সর্বত্র বিক্রি হয়। দেখা গেছে, এসব রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে জমির শাকলতাগুল্ম ঔষধি গাছলতা সব মারা যায়। শামুক, কেঁচো, কুচিয়া, ঘুঘরা পোকা, মাকড়াসা, ফড়িং মরে যায়। এসব ব্যবহারের ফলে মানুষও আক্রান্ত হয় পেট ও শ্বাসনালির নানা জটিল রোগে। প্রশ্ন হলো, মনস্যান্টো বা সিনজেনটা কোম্পানির মালিকের বাসায় কি সার-বিষ দেওয়া খাবার রান্না হয়? তাদের পরিবার-পরিজন কি হাইব্রিড ফসলের খাবার খায়? নিশ্চয়ই না। কারণ দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবারগুলো তাদের পাতেই যায়। আর দুনিয়ার একটা বড় অংশের পাতে পড়ে থাকে বিষাক্ত খাদ্যের উচ্ছিষ্ট। কারণ এই বড় অংশটিই নিজের কলিজা ফানা ফানা করে বহুজাতিক কোম্পানির বিষ আর সংহারী বীজ ব্যবহার করতে বাধ্য। নিরাপদ খাদ্য আর নিরাপত্তা বলতে এই গরিব নিম্নবর্গের জন্য কিছুই নেই। মানে রাজা-বাদশাহর আমল শেষ হলেও বিদ্যমান শ্রেণিদ্বন্দ্ব ও বৈষম্যমূলক মনস্তত্ত্ব গায়েব হয়ে যায়নি। বরং আরও ভিন্নরূপে দশাসই হয়েছে।
৪. পরিবেশগত মুক্তির প্রশ্নে বৈষম্যের মনস্তত্ত্ব চুরমার করে দাঁড়ানো জরুরি। কেবল মানুষ নয়, এই দুনিয়া পাখি-পতঙ্গ-অরণ্য-নদী-পাহাড়েরও দুনিয়া। নতুন প্রজন্মের ভেতর প্রাণ-প্রকৃতির এই গভীর মমত্ববোধ জাগিয়ে তোলা জরুরি। পরিবেশ সুরক্ষা প্রশ্নে দায়িত্বশীল করে তোলা জরুরি। পরিবার, সংঘ, সংগঠন, বিদ্যায়তন থেকে শুরু করে গণমাধ্যম এটি সবার কাজ।
লেখক: প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক ও লেখক