রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

শেষ সময়ে জমজমাট ঈদের বাজার

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫১ এএম

পবিত্র মাহে রমজান শেষ হওয়ার বাকি আর মাত্র পাঁচ দিন। ঈদের আগের এ সময়টায় ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলের বিপণিবিতান।

বিক্রেতারা বলছেন, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। চাকরিজীবীরা বোনাসের টাকা হাতে পেয়েছেন। তাই দোকানগুলোয় ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। সব মিলিয়ে বিকিকিনি চলবে আরও চার থেকে ছয় দিন।

সরেজমিনে গতকাল রবিবার মৌচাক, নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং মল ও গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত এবং বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, সব মার্কেটে চলছে বেচাকেনার ধুম। সব বয়সী মানুষ যার যার পছন্দের পোশাক কিনছেন। মার্কেটে আসার ক্ষেত্রে ক্রেতারা ইফতারের পরবর্তী সময়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ঈদে পুরুষের পাঞ্জাবির পাশাপাশি নারীদের শাড়ি, থ্রি-পিস, জিন্স ও জুয়েলারি সামগ্রী পছন্দের শীর্ষে থাকছে।

মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, আলোকসজ্জার সঙ্গে হরেক রকমের পোশাকে সেজেছে দোকানগুলো। পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট, নারীদের শাড়ি, থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, কুর্তা এবং বাচ্চা ও শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, ফ্রক, গেঞ্জিসহ আধুনিক ডিজাইনের পোশাকÑ সবই মিলছে। পাশাপাশি কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর বাহারি জিনিসপত্রও দেদার কেনাকাটা চলছে।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের ঈদে সব ধরনের পোশাকের দাম আকাশচুম্বী। বিশেষ করে পুরুষের পাঞ্জাবি ও নারীদের থ্রি-পিসের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গতবারের তুলনায় এবারের প্রতিটি পাঞ্জাবিতে ২৫০ থেকে ৩০০ এবং থ্রি-পিসে ৪০০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে।

মৌচাক মার্কেটে রাজধানীর মতিঝিল থেকে সপরিবারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন মো. শামিম হোসেন। পরিবারের পাঁচ সদস্যের জন্য এবারের ঈদের বাজেট ২৬ হাজার টাকা রাখলেও পোশাকে দাম বাড়ায় বাজেটের মধ্যে থাকতে পারছেন না। অতিরিক্ত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি লাগছে।

এটি শুধু শামিমের একার গল্প নয়। ঈদের কেনাকাটা করতে আসা প্রত্যেক পরিবারের একই পরিস্থিতি। নিউ মার্কেটের ইজির শোরুমে কথা হয় আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঈদের আগে পোশাকের দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু এবার অতিরিক্ত বেড়েছে। পাঞ্জাবির দামের কথা বাদ দিলাম, গতবার ইজি থেকে যে শার্ট কিনেছিলাম ১৫০০ টাকায়, এবার সেটি কিনতে আরও ৩০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।’

এবার পোশাকের অতিরিক্ত দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, গার্মেন্টস থেকে পাইকারি মার্কেট সবখানেই পোশাকের দাম বেড়েছে। প্রতি পাঞ্জাবিতে ১০০ থেকে ১৫০, পায়জামায় ৫০ থেকে ৬০, শাড়িতে ২০০ এবং থ্রি-পিসে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা পাইকারিতে বেড়েছে। যার প্রভাব খুচরা বাজারগুলোয় পড়ছে।

মগবাজার সাইমুন শপিং সেন্টারের বিক্রয়কর্মী হাসান মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার অনেক বেশি পোশাকের দাম। মালিক বেশি দাম দিয়ে কেনায় আমাদের একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। যত বেশি কাস্টমারের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তত বেশি বাগবিত-ায় জড়াতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।’

ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের রিমু ফ্যাশনের কর্ণধার জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে বেচাকেনা বেড়েছে। আগামী চার-পাঁচ দিন সর্বোচ্চ কেনাকাটা হবে। কারণ ঈদের আগে একটা শুক্রবার আছে, বাড়ি যাওয়ার আগে অনেকেই মার্কেটে আসবেন।’

এদিকে ঈদ কেন্দ্র করে পোশাকের দাম বাড়ায় মধ্যম আয়ের মানুষ ফুটপাতের পোশাককেই একটু বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। নিউ মার্কেট ও ঢাকা কলেজ এলাকার আশপাশে ঈদ কেন্দ্র করে ফুটপাতেও প্রচুর দোকান বসেছে। সেগুলোতেও ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।

ঢাকা কলেজের সামনে ও এর আশপাশে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। জানতে চাইলে পাঞ্জাবির দোকানি তায়েপ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তার ভাসমান পাঞ্জাবির দোকানে একের পর এক ক্রেতা আসছেন। পছন্দ হলে দরদাম করে পাঞ্জাবি কিনছেন। ক্রেতারা মার্কেট থেকে অনেকটা কম দামে পাঞ্জাবি কিনতে পেরে অনেক খুশি।’

অন্যদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রেতাদের মধ্যে নিরাপত্তার আশঙ্কা ছিল। তবে ঈদের কেনাকাটাকে ঘিরে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তায় ২৪ ঘণ্টা মার্কেট এরিয়াগুলো পুলিশ অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিয়ে রেখেছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত