রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রাজনীতিতে নতুন মেরূকরণ

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:০১ এএম

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে মেরূকরণ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলে সৃষ্টি হয়েছে নবজাগরণ। অন্যদিকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার দলের নেতাকর্মীদের অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায়। আবার নবজাগরণ সৃষ্টি হওয়া দলগুলোর উত্থান অনেকটা তুঙ্গে। এদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী রয়েছে অগ্রজ ভূমিকায়। জামায়াতের জনপ্রিয়তা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এই অবস্থায় ইসলামি দলসহ ছোট-বড় সব দলের মধ্যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে ব্যাপক তৎপরতা । ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচারী সরকার জগদ্দল পাথরের মতো ক্ষমতায় ছিল। সেই সরকারের পতনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করে। উদ্দেশ্য ছিল, স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সব রাজনৈতিক দলের অভিন্ন ও যুগপৎ আন্দোলনের ফলে অবশেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের পতন হয়। এরপর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী সব দলের মতামতের ভিত্তিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করা হয়, তৎকালীন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম সংবিধানে আইন না থাকা সত্ত্বেও কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ১৪৩টি আসনে জয় পেলেও কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারিনি। তখন এরশাদ জেলখানায় থাকা অবস্থায় পাঁচটি আসনে জয় লাভসহ জাতীয় পার্টি ১৯টি আসন পায়। বেগম খালেদা জিয়া ৫টি আসনে জয়লাভ করেন এবং জামায়াতে ইসলামী ওই নির্বাচনে ১৮টি আসন পায়। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারার কারণে উভয় দলের কাছে জামায়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।

অনেক দেন-দরবারের পর জামায়াতের শর্তহীন সমর্থনে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হয় এবং দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি জোট গঠনের মাধ্যমে পুনরায় যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবি ছিল, সাংবিধানিকভাবে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও বিএনপি বিরোধী দলের আন্দোলনে কোনো সাড়া দেয়নি। ফলে মেয়াদ শেষে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি নির্বাচন বয়কট করে। সুতরাং বড় কোনো দলের অংশ গ্রহণ ছাড়াই বিএনপি সরকারের অধীনেই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিএনপি পুনরায় সরকার গঠন করে। বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। ভোটারবিহীন সে নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি-বিধায় বিরোধী শিবিরে আন্দোলন নতুন করে হালে পানি পায়। ফলে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি যৌথ আন্দোলন এবং জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎপরতার কারণে আন্দোলন বেগবান হতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বিরোধী দলগুলোর অসহযোগ আন্দোলন ও চাপের মুখে নতি স্বীকার করে তৎকালীন বিএনপি সরকার সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদে কেয়ারটেকার সরকার বিল উত্থাপনের মাধ্যমে তা পাস করতে বাধ্য হয়। এই বিষয়টি  বিবেচনায় নিলে, বিএনপিকে ধন্যবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা যায় না। কারণ সংবিধানে কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংযোজন ছিল বেগম খালেদা জিয়ার দূরদর্শিতার পরিচয়।

এদিকে নির্বাচনকালীন সাংবিধানিকভাবে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পাস হওয়ার পর বিএনপি পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সংবিধান অনুযায়ী, সুপ্রিমকোর্টের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার বিধান থাকায় বিচারপতি হাবিবুর রহমান সে সময় কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আরেকটি নির্বাচন দেন। সাংবিধানিক নিয়মে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে সেটিই ছিল প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সব দল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয় লাভ করে এবং ২৩ জুন সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী, ২০০১ সালে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আওয়ামী লীগ। তখন কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন বিচারপতি লতিফুর রহমান। বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপিসহ চারদলীয় জোট নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। জাতীয় পার্টি ৩২ আসনে জয়লাভ করে এবং জামায়াত ১৭টি আসনে জয় পায়। সরকার থেকে সদ্য বিদায়ী দল আওয়ামী লীগ তখন মাত্র ৩৯টি আসনে জয়লাভ করে। চারদলীয় জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ জোট সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হন। পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর মেয়াদ শেষে চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দেশে এক অরাজকতা ও তান্ডব শুরু হয়। দেশ চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা লগি-বইঠা নিয়ে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন। চারদলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে তখন প্রচন্ড লড়াই ও তান্ডব শুরু হয়। বিএনপি, জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিবের অনেকেই ওই দিন হত্যার স্বীকার হয়। রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। তান্ডব চলে সারা দেশে। লগি-বইঠার তা-বের কারণে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত নানা নাটকীয়তার পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে বিব্রত বোধ করায় জটিলতা আরও ঘনীভূত হয়। তারপর বিএনপি সমর্থিত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ তা মেনে না নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামে। ফলে দেশে নতুন করে আবার অরাজকতা সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলাপূর্ণ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ড. ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ১১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকার গঠিত হয়। এ ঘটনায় যারা জড়িত ছিলেন তাদের বলা হয়, এক-এগারোর কুশীলব। ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকারকে তখন আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের ‘আন্দোলনের ফসল’ হিসেবে উল্লেখ করে অভিনন্দন জানায়। কিছু দিন পর ফখরুদ্দিন সাহেবের সরকার মাইনাস টু ফর্মুলার ঊীঢ়ষড়ৎব করেন এবং শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে জেলখানায় বন্দি করে রাখেন। ওই সময় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকেও গ্রেপ্তার করে জেলখানায় বন্দি রাখা হয়। ফখরুদ্দিন সাহেব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বললেও তিনি তা না করে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহাম্মদের সহযোগিতায় অজানা রহস্য সৃষ্টি করে, নির্বাচন প্রশ্নে দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নেন। অবশেষে জনগণের চাপে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), রাশেদ খান মেনন, দিলীপ বড়ুয়াসহ নামসর্বস্ব কয়েকটি দলের সহযোগিতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠিত হয়। একই জোটবদ্ধ থাকায় উল্লিখিত দলগুলোর সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ ওই মেয়াদে আইনি প্রক্রিয়ায় কৌশলে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করে দেয়। তারপর অন্যান্য দল আন্দোলন করলেও তারা সফল হতে পারেনি। ফলে মেয়াদ শেষে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করলে, বিএনপি-জামায়াতসহ বিশ দলীয় জোট তাতে অংশ গ্রহণ করেনি। জাতীয় পার্টি পুনরায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এবং মন্ত্রিত্ব পায়। আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসনে জয়লাভ করে বিশ^ রেকর্ড করে এবং পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনও আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের চেহারা সম্পর্কে দেশের জনগণ বিস্তারিত অবহিত। বিএনপি সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৮টি আসনে জয়লাভ করে।

প্রায় ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে, ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে বলে তাদের দাবি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ ঢাকা শহরের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলা শহরে উন্নয়নের ছোঁয়া হয়তো কিছুটা লেগেছে। এটা ঠিক, প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭টি থেকে ৫৪টিতে উন্নীত করা হয়েছে। তবে কোনো মাদ্রাসা সরকারিকরণ করা হয়নি বিধায় মাদ্রাসার শিক্ষকরা নাখোশ হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি সেক্টরে এমন কিছু মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও অস্বাভাবিক লোডশেডিং, তেলের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করে সফল হয়নি। এরই মধ্যে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পার্টিকে ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো হয়। জাতীয় পার্টিকে ১১টি আসনে জিতিয়ে আনা হয়। তারপর তড়িঘড়ি করে ১০ জানুয়ারি নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান শেষ করে ক্ষমতা বৈধ করে নেওয়া হয়েছিল। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ছাত্রসমাজ এবং সর্বস্তরের জনগণের আন্দোলনের তীব্রতা এক সময় এত তীব্র আকার ধারণ করে যে, ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট মাত্র এক মাসের আন্দোলনে আ.লীগ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়। তবে এ আন্দোলন সফল হয়েছে অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ৮ আগস্ট। উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে নতুনভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণের চেষ্টা। কিন্তু এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা রকমের বাদানুবাদ।

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন নতুন করে হিসাব-নিকাশ চলছে। বিএনপি এবং জামায়াত বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। একদিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে, অন্যদিকে জামায়াত ধীরে চলো নীতি নিয়ে আগামী নির্বাচনে চমক সৃষ্টি করতে ব্যাপক সামাজিক কর্মতৎপরতা চালাচ্ছে এবং দল শক্তিশালী করছে। একই সঙ্গে দলের প্রার্থী মনোনয়নের প্রাথমিক কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ছোটখাটো দলগুলো যেমন বিভিন্ন মঞ্চে জোটবদ্ধ হচ্ছে, তেমনি দল পরিবর্তন ও নতুন নতুন দল গঠনের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ‘এনসিপি’ নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা নতুন দল গঠন করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এক কথায় বলা যায়, রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নতুন মেরুকরণের মহড়া। ইতিমধ্যে কয়েকটি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদনপত্র জমা দিয়ে নিবন্ধন নিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি ও জামায়াতকে ঘিরে এখন যেসব আলোচনা-সমালোচনা চলছে, এতে করে তাদের দলীয় ভাবমূর্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি জামায়াতের কর্মতৎপতার বিষয়ে দেশের জনগণের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। আবার বিরোধী শিবিরের লোকেরা জামায়াতের অগ্রগতিতে শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। বামধারার বুদ্ধিজীবীসহ বড় বড় রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে জামায়াতের ভাবমূর্তি ও গুরুত্ব অতীতের চেয়ে অনেক বেশি। জানা যাচ্ছে, পলাতক শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নতুন ফরমেটে রাজনৈতিক কর্মকা- শুরু করার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলের বর্তমানে একটাই দাবি ও প্রত্যাশা আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে। তবে রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ কোন দিকে যাবে প্রকৃত অর্থে তা আন্দাজ করা খুবই কঠিন।

লেখক: শিক্ষাবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত