এবারের ঈদুল ফিতরে ৯ দিনের সরকারি ছুটি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। নাড়ির টানে বাড়ির অভিমুখে মানুষের ঈদযাত্রা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। প্রথমত, একসঙ্গে অনেক বেশি যানবাহন সড়কে নামার কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। সড়কে নির্মাণকাজ চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় অবস্থায় চলে যায়। দ্বিতীয়ত, যানজটের সুযোগে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত যাত্রীবাহী যানবাহনে ছিনতাই, ডাকাতি করে থাকে। এতে আনন্দের ঈদযাত্রা পরিণত হয় বিষাদে। অন্যদিকে, মাত্র তিন দিনের ছুটি এই ঈদযাত্রাকে করে তুলত ক্লান্তিময়, যা থেকে এবার কিছুটা নিস্তার পাবেন ঈদযাত্রার ঘরমুখো মানুষ। তবে, সেটা অনেকটা নির্ভর করবে সড়ক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ওপর।
দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। ইতিমধ্যেই মহাসড়কটির বিভিন্ন অংশে তৈরি হচ্ছে ছোটখাটো যানজট। সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কটির কুমিল্লার অংশে অন্তত ২৬টি পয়েন্টে তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে পারে। ফ্লাইওভার, বাজার এলাকা, টোলপ্লাজা ও সংযোগ সড়কের কারণে এই দুর্ভোগের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি জায়গায় ডাকাতের ভয়ও আছে। অবশ্য কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যানজট নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হবে। তা ছাড়া, মহাসড়কের অবৈধ পার্কিং ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো, নির্দিষ্ট স্থান থেকে যাত্রী ওঠানামা এবং মহাসড়কের পাশের অবৈধ বাজার উচ্ছেদ করা হলে যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। যানজটের কারণে ঈদযাত্রা যেন বিড়ম্বনায় পরিণত না হয়, সেজন্য প্রশাসন ও যাত্রীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার বলে মনে করছেন তারা। দেশ রূপান্তরের অন্য দুই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই সকাল থেকে কিছুটা ভিড় থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করে। তবে বাস টার্মিনালগুলোয় এখনো বাড়েনি ভিড়। সোম ও মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশন ও রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেছেন, যারা ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঈদ ঘিরে কোনো বাস কাউন্টার বা সংশ্লিষ্ট কেউ ঈদ বকশিশ বা অন্য যেকোনো নামে টাকা আদায় করলে যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়ক-মহাসড়ক, সেতু ও রেলপথের যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ঈদুল ফিতরে মহাসড়কের যানজট হতে পারে এমন ১৫৯টি সম্ভাব্য স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। যানজটের আশঙ্কায় জননিরাপত্তা বিভাগ এসব স্পটে ঈদের আগে ও পরে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে সুপারিশ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে। এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডরগুলোর সড়ক ঈদের সাত দিন আগেই মেরামত বা সংস্কার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা সড়কগুলো মেরামত করা জরুরি বলে জানানো হয়। বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ঈদে ১ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ ঢাকা ছেড়ে যান এবং ৩০ লাখের মতো মানুষ ঢাকায় আসেন। এই দেড় কোটি মানুষের ঈদ আনন্দের যাতায়াত যাতে নিরানন্দ না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। তবে শুধু ঢাকা নয়, অন্যান্য মহানগরের যাত্রীদের প্রতিও নজর রাখতে হবে। ঈদযাত্রা এবার দীর্ঘ ছুটির ফলে আনন্দ পূর্ণমাত্রায় ধরা দেবে, সেই আশা আমাদের। এই আনন্দযাত্রায় সড়কে যেন আর প্রাণ না যায়, সরকারকে সে বিষয়ে আরও সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।