দুর্বল ব্যাংক অবসায়ন ও একীভূতকরণে আইন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এ আইনের মাধ্যমেই দুর্বল ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে হুটহাট করে কিছু হবে না। আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাবেন। এটার জন্যই ব্যাংকগুলোকে চট করে বন্ধ করে দেওয়া হবে না।
গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আইএমএফ-এর ঋণ অব্যাহত রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ঋণ না নেওয়াটা খুব ভালো। তবে বাংলাদেশের জিডিপি ও ঋণের অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া সরকারি ব্যয়ের চাহিদা মেটানোর মতো রাজস্ব না থাকার কারণেই ঋণ নিতে হচ্ছে। আইএমএফ ঋণ দিচ্ছে বাজেট সহায়তা হিসেবে। প্রকল্পে অনেক ঋণ এলেও তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো যায় না। তারপরও খুব একেবারে মুখিয়ে আছি, এমনটিও নয়। এজন্যই চতুর্থ কিস্তি পেছানো হয়েছে। তারা নানা শর্ত দিচ্ছে, বাংলাদেশের পক্ষে এগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফ থেকে যদি বাংলাদেশ ঋণ না নেয়, তাহলে অন্যান্য দাতা সংস্থাও আস্থা পায় না। তখন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ অন্যান্য সংস্থাও অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলবে কেন আইএমএফ সরে গেল? তখন একটি বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া এ ঋণ না নিলে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার, সেটাও এ মুহূর্তে সম্ভব নয়।
আইএমএফ ঋণের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কিছু অগ্রাধিকার অ্যাকশন রয়েছে। এগুলোর দু-একটি পূরণ সম্ভব হয়নি। এগুলোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সরকার আশা করছে, জুনের মধ্যেই চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তি একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
সাংবাদিকরা জানতে চান তাহলে আইএমএফ-এর অন্যতম শর্ত হচ্ছে মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এটি কি জুনের আগেই বাস্তবায়ন হবে? জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটি এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, মূল্যস্ফীতি আর কতদিন থাকে। হঠাৎ করে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেলে বিপদ বাড়বে। এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা চলছে।
আসছে বাজেট নিয়ে বলতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য কৃষি ও বিদ্যুতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এমন প্রকল্প নেওয়া হবে যাতে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাত সম্প্রসারণকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পদচিহ্ন হিসেবে বাজেটে কিছু কিছু মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিষয় থাকবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন বাজেটে ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনার চেষ্টা থাকবে। বাজেটে নেওয়া উদ্যোগগুলোর ইম্প্যাক্ট (প্রভাব) বিশ্লেষণ করে তার উপকার উল্লেখ থাকবে। যাতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন না করলে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায়।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট কমানো দরকার। তবে ভ্যাট একক হারে নিয়ে আসতে পারলে তখন চিন্তাভাবনা করা যাবে। ভ্যাটের একক হার বাস্তবায়ন হলে তখন সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, এবার বাজেট ব্যবসাবান্ধব করার চেষ্টা করব।
সম্পদ কর আরোপের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নেয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। ভবিষ্যতে সম্পদ কর চালুর ইঙ্গিত থাকবে এই বাজেটে। একটা সময় পর আমরা সম্পদ কর বাস্তবায়নে যাব।
অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় পরিকল্পনায় কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। সংশোধিত বাজেটে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। তারপরও অনেক টাকা রয়ে গেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিতে পারছে না। এর কারণ হলো, প্রথম থেকেই আমরা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিচ্ছি।
ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার, করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ করাসহ ২৭টি লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ অন্য সদস্যরা বক্তব্য দেন।