রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চেষ্টা করলেই অনেক দূরে যেতে পারি

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৫ এএম

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলেছি, বিশেষ করে প্রথমার্ধে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সামগ্রিকভাবে ভারতের চেয়ে আমরা সুযোগ বেশি পেয়েছি। সাধারণত ফিফটি-ফিফটি ম্যাচগুলোতে এ ধরনের সুযোগ আপনি সহসা পাবেন না। এই সুযোগগুলো আমাদের কাজে লাগাতে পারা উচিত ছিল। আমরা সবদিক থেকে ভালো ছিলাম, সবদিক থেকে এগিয়ে ছিলাম। কেবলমাত্র একটা জায়গায় আমরা পিছিয়ে ছিলাম, সেটা হলো উইথ বলে। আমরা আমাদের পায়ে খুব কম সময়ই বল রাখতে পেরেছি। আমরা ভারতের চেয়ে অনেক বেশি উন্মুক্ত সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগগুলো যদি আমরা কাজে লাগাতে পারতাম তাহলে ভিন্ন একটা ফলাফল দেখতে পাওয়া যেত। আমি বলব, এটা আমাদের জেতা ম্যাচ ছিল। এই জেতা ম্যাচটি ড্র করে আসতে হয়েছে আমাদের। ১ পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে হয়েছে।

আমাদের খেলা অনেক সুন্দর হয়েছে। বলব ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচটি আমাদের জন্য একটা দারুণ ম্যাচ ছিল। হামজা চৌধুরীকে নিয়ে আমাদের প্রথম ম্যাচটি যেভাবে শুরু করতে পেরেছি। হামজার ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই আসলে। ও অনেক বড় মাপের এবং অনেক বড় জায়গার খেলোয়াড়। এই ম্যাচে হামজা নিজেকে দেখিয়েছে। হামজা আরও দেখিয়েছে বাংলাদেশের জন্য ও কী করতে পারে। ওর ঝলকটুকু আমরা প্রত্যেকে মাঠে দেখতে পেয়েছি। আমরা এটিও বুঝতে পেরেছি যে হামজার ভালো দিনে আমাদের দলের কী পরিমাণ সাফল্য আসতে পারে। পুরো খেলায় হামজা দলকে সাহায্য করে গিয়েছে। উইথ বলে সে দারুণ ছিল। ফিফটি-ফিফটি ডুয়েলগুলোতে দুর্দান্ত ছিল। সবকিছু মিলিয়ে অভিষেক ম্যাচে হামজা ছিল দুর্দান্ত।

এই ম্যাচে আমাদের খেলোয়াড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্তগুলো দুর্বল ছিল। আর এই দুর্বলতার জন্য শেষের দিকে এসে আমাদের কিছুটা বেশি চাপ নিতে হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা দল হিসেবে আপ টু দ্য মার্ক ছিলাম না। কিন্তু একই সঙ্গে দ্বিতীয়ার্ধে ভারত কোনো সুযোগও পায়নি। এভাবে বলতে পারি, আমরা ভারতকে কোনো সুযোগ তৈরি করতে দিইনি, যেটা আমাদের দরকার ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে পরিবর্তনগুলো আরও ভালো হতে পারত। আল আমিন নামতে পারতেন, শেষ ১৫-২০ মিনিট জামাল ভূঁইয়াকে ব্যবহার করা যেত। আমরা জামালের অভিজ্ঞতা মাঠে কাজে লাগাতে পারতাম। সেট পিসগুলো তাকে দিয়ে নেওয়ানো যেত। আর এমন একটা ম্যাচে আপনি জামালের অভিজ্ঞতা কেনই বা কাজে লাগাবেন না! তাহলে তাকে দলে নেওয়ারই বা প্রয়োজন কী ছিল! আপনার হাতে যখন সুযোগ রয়েছে সেটি কাজে লাগানো প্রয়োজন ছিল। এ দুর্বলতাগুলোই দ্বিতীয়ার্ধে দলকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। তবে সবমিলিয়ে আমরা ১ পয়েন্ট নিয়ে যত না আনন্দিত তার চেয়ে বেশি আনন্দিত এই ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্ট ফেরার সুযোগ তৈরি করতে পারাতে। কেননা এমন সুযোগ আগামীতে পাব কি না সেটি অনিশ্চিত।

ভারতের সঙ্গে ম্যাচ মানেই মাঠে আমরা সমান-সমান থাকি। এ রকম ম্যাচে আপনি একটা কিংবা দুটো সুযোগ পাবেন। পুরো ম্যাচে ভারত কিন্তু মাত্র একটি সুযোগই পেয়েছিল, সেটিও প্রথমার্ধে। এছাড়া ওরা আর কোনো সুযোগ পায়নি। তার বিপরীতে আমরা কতগুলো সুযোগ পেয়েছি! জনি দুটো পেয়েছে, ইমন ও হৃদয় সুযোগ পেয়েছে। প্রায় তিনটা ওপেন আর সবমিলিয়ে পাঁচটার মতো সুযোগ আমরা নষ্ট করেছি। বিশেষ করে জনি আর হৃদয়ের পাওয়া সুযোগগুলো নিশ্চিত গোল করার মতো ছিল। এ সুযোগগুলো যদি কাজে লাগত, কেননা দিনশেষে ম্যাচ জিততে হলে স্কোর করতে হবে।

গত ১০-১২ বছর ধরেই ফিনিশিংয়ে নাম্বার নাইনের অভাব আমরা বোধ করে আসছি। এখন রাকিবকে ঘিরে আমরা সেই পরিকল্পনা করছি। পুরো দলের মধ্যে হামজা যেমন আমাদের একটি শক্তির জায়গা তেমনি আক্রমণভাগে রাকিবই আমাদের মূল শক্তি। আক্রমণভাগে রাকিব না থাকলে কী ধরনের সমস্যা তৈরি হবে সেটা ওকে ছাড়া খেলতে নামা একটা ম্যাচ দেখলেই বোঝা যাবে। আমার মনে হয় ফিনিশিংয়ের সমস্যা মেটাতে হলে রাকিবের সঙ্গে আরও একজন খেলোয়াড় আক্রমণভাগে প্রয়োজন। যারা একে অপরকে সাপোর্ট করে গোল আদায় করে নিতে পারবে। আমাদের দেশে নাম্বার নাইন পজিশনটার ঘাটতি বিগত বছরগুলোতে কেউ মেটাতে পারেনি। আমার মনে হয় প্রয়োজনে বাইরের দেশে কে বা কারা আছেন ভালো সেটি খুঁজে বের করে তাদের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দেওয়াটা ভালো বিকল্প হতে পারে।

এবারের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে আমাদের বড় সুযোগ রয়েছে ভালো করার। আমরা যে গ্রুপে পড়েছি সেখানে শক্তির বিচারে চারটি দেশই উনিশ-বিশ। ভারত, হংকং, সিঙ্গাপুর হয়তো র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে আছে কিন্তু মাঠের খেলায় এখন খুব একটা ফারাক নেই। এই সুবর্ণ সুযোগটা আমাদের নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের ফিনিশ করতে পারার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা যেন আরও বেশি টাচ খেলতে পারি উইথ বলে। এগুলো হলেই আমি আশা করি দল হিসেবে আমরা রিকভারি করতে পারব।

দিনশেষে এই ১ পয়েন্ট নিয়ে খুব বেশি আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমাদের আর দূর পথে যেতে হবে। আমরা চেষ্টা করলেই অনেক দূরে যেতে পারি। এই ম্যাচে আমরা এটিই করে দেখাতে পেরেছি। এই চেষ্টাটা আমাদের সবার মধ্যেই থাকতে হবে। যাতে করে আমাদের সিঙ্গাপুর, হংকংয়ের বিপক্ষে আমরা ৩ পয়েন্ট আদায় করতে পারি। তাহলেই আমরা গ্রুপসেরা হতে পারব। এমনটা হলে আমাদের দলের পরিবেশ এবং খেলোয়াড়দের মানসিকতায় যে পরিবর্তন আসবে। আর সেটি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন। দলের ম্যানেজমেন্ট, ভক্ত-দর্শক এবং খেলোয়াড় সবাই মিলে আমরা যেন আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এক হয়ে থাকতে পারি, চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত