রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বিএফএ সম্মেলন আজ

চীন পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪০ এএম

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে চীনের হাইনান পৌঁছেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইট গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় ৪টা ১৫ মিনিটে হাইনানের কিউনহায় বাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম এবং হাইনান প্রদেশের ভাইস গভর্নর বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান। খবর বাসস

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, গতকাল দুপুর একটায় অধ্যাপক ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হচ্ছে অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, সেই সঙ্গে আসতে পারে কিছু ঘোষণা। তাদের মতে, বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই চীন সফর ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আজ (বৃহস্পতিবার) বোয়াও সম্মেলনের প্লেনারি সেশনে তিনি বক্তব্য দেবেন। এদিন চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

শুক্রবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। সেখানে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।

সেদিন চীনের একটি হাইটেক পার্কে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে ইলেক্টরিক ভেহিকল, সোলার প্লান্ট ও চিপস কারখানা পরিদর্শন করবেন। শনিবার পিকিং ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে এবং সেখানে তিনি বক্তব্য দেবেন।

গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এ সফর নিয়ে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ‘বহুমাত্রিক’। চীন আমাদের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে চলেছি, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে একটা বার্তা যাচ্ছে।

এই সফর বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দুই দেশের সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে পানিসম্পদ উন্নয়নে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা এবং সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা সই হতে পারে। বিনিয়োগ ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বিষয়ে কিছু ঘোষণাও আসতে পারে।

শি জিনপিং ও মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনারও সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, রোহিঙ্গা, জিডিআই, অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

আগে ভারত যেতে চেয়েছিলেন : বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের আগে ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তবে ঢাকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি দিল্লি। গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে শফিকুল আলমকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

সংবাদমাধ্যমটিকে প্রেস সচিব বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরের আগে ভারত সফর করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ঢাকার অনুরোধে ভারতের পক্ষ থেকে ‘ইতিবাচক’ সাড়া পাওয়া যায়নি।

ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে উষ্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চান উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, আমরা আসলে আমাদের আগ্রহ দেখিয়েছি এবং গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই ভারতীয় পক্ষকে প্রধান উপদেষ্টার ভারত সফরের জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছি। চীন সফর চূড়ান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লিকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত এতে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ড. ইউনূস চীন সফর শেষে দেশে ফিরে আসবেন। পরে ৩ থেকে ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এই সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শফিকুল আলম। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি দিল্লি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত