বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রুজকে এগিয়ে নেওয়ার গল্প

আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৫ এএম

রুজে পাওয়া যায় চামড়াজাত ব্যাগ ও নানা অনুষঙ্গ। রুজের পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. রেজাউল করিম জানালেন রুজকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।

আমার জন্ম হাজারীবাগে। আমার বাবা-দাদা এখানকার স্থানীয়। হাজারীবাগের লেদার ইন্ডাস্ট্রি দেখেই আমি বড় হয়েছি। যদিও আমার পরিবারের কেউ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল না, আমি কেন জানি অনেক টান অনুভব করতাম সেই শৈশব থেকেই।

১৯৮৪ সালে আমি বায়িং হাউজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখতে শুরু করি। কয়েক বছর পরে আমি নিজের ব্যবসা শুরু করি। আগে থেকে পরিচিত কিছু ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করি। এই বায়িং হাউজের ব্যবসা পুরোটাই রপ্তানি নির্ভর হাওয়ায় তাদের অর্ডারের ওপর আমার ব্যবসা চলে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে হঠাৎ করে বাবার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে আমার ব্যবসার অবস্থাও খারাপ যাচ্ছিল। সংসার চলানোর জন্য একটা পর্যায়ে আমি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করি। সেখানে আমি একটানা ১৯৯৭ পর্যন্ত কাজ করি। একটা সময় একঘেয়েমি চলে আসে। এছাড়া নিজে একটা কিছু করার তাড়া সবসময় কাজ করত। আবার আমি বায়িং ব্যবসায় ফিরে আসি।

যখন সব ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে যেতে শুরু করল, তখন বাইরের থেকে অর্ডারও কমতে থাকল। তারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার সরিয়ে নিয়ে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। এর মূল কারণ ছিল সরবরাহকারীদের সময়মতো অর্ডার পৌঁছাতে না পারা। এই দুর্যোগের মুহূর্তে, একজন বন্ধুর মাধ্যমে আমি জাপান থেকে কিছু অর্ডার পাই যা আমার এই ব্যবসার প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে। ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা প্রয়োজন ছিল তার সবকিছুই আমি আগে থেকেই জানতাম। আমি জানতাম কোন লেদারগুলো ভালো এবং কোনগুলোর চাহিদা বেশি। তাই আমি ভাবলাম যে ব্যবসার মাধ্যমে নিজের মুনাফার পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানে সহায়তা করতে পারব। কিন্তু নিজের আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি যে বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহস জুগিয়েছে তা হলো আমার স্ত্রীর সাহায্য, যে কিনা একই সঙ্গে আমার ব্যবসার সহযোগী।

আমি শুধুমাত্র ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে চুক্তি স্থাপন করতে সহায়তা করি। তাই দুই পক্ষের কেউ যদি হঠাৎ চুক্তি থেকে পিছপা হয়ে যায় তাহলে সব পণ্য আমার কাছে থেকে যাবে। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় সে সময় এ রকম কিছু ঘটেনি। একটা পর্যায়ে জাপান থেকে অনেক বেশি অর্ডার পেতে শুরু করি। একই সঙ্গে আমি ইতালিতেও পণ্য রপ্তানি করতে থাকি।

ব্যবসাটা আমি ২০১৬-তে শুরু করেছিলাম। শুরু থেকে যে পরিমাণ অর্ডার পেয়েছি, তা ঠিক সময়েই অর্ডার করা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিতে পেরেছি। এভাবেই আমার ব্যবসাটা এগিয়ে গেছে। এখন একটা ভালো অবস্থানে আছি। কোনো ঋণ না নিয়ে নিজের জমানো টাকায় শুরু করেছিলাম। আস্তে আস্তে লাভের টাকা বিনিয়োগ করে এভাবেই ব্যবসাটাকে বড় করে তুলেছি। লোকাল মার্কেটে শুধু করোনার সময়ে পণ্য দিয়েছিলাম। এখন আমার ব্যবসা মূলত রপ্তানিকেন্দ্রিক। আমাদের নিজেদের রুজ নামে একটি ব্র্যান্ডও আছে যেখানে আমরা ডেল ও এইচপি ল্যাপটপের ব্যাগ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী বানিয়ে থাকি। আরও বিনিয়োগ থাকলে ব্র্যান্ডটাকে আরও বড় করা সম্ভব। কিন্তু আপাতত আমাদের মূল লক্ষ্য আরও বেশি পণ্যের অর্ডার পাওয়া ও সরবরাহ করা। আমি মনে করি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হতাশ না হয়ে লেগে থাকতে হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত