ঘরের মাঠ সিলেটে জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন ছিল অলক কাপালির। তবে সেটা অপূর্ণই রয়ে গেছে। তার বাড়ির পাশের মাঠে রবিবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। নিজের না খেলার আফসোস যেমন আছে, তেমনি বর্তমানদের নিয়ে আছে উচ্ছ্বাসও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম হ্যাটট্রিক শিকারি সেসব নিয়ে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের রাফিদ চৌধুরীর সঙ্গে
আপনার বাড়ির পাশের মাঠে খেলা হচ্ছে। জাকির হাসানদের দেখে কি আফসোস হয় নিজেকে নিয়ে?
অলক কাপালি: একটু তো হয়। তবে সেসব নিয়ে পড়ে থাকলে কি আর চলে! এখন যারা খেলছে তারা অনেক কোয়ালিটিফুল ক্রিকেটার। তারা ভালো খেললে আমারও আনন্দ লাগে।
এই মাঠের প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার কি জয়ের আশা করা যায়?
অলক: অবশ্যই! এটা বাংলাদেশের হোম গ্রাউন্ডের ম্যাচ। এই ম্যাচটা জেতাই উচিত। এটা ঠিক জিম্বাবুয়ে দলকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। তাদেরও কয়েকজন ভালো ক্রিকেটার আছে। যাদের ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে। তবে এটা যেহেতু বাংলাদেশের ঘরের মাঠ, তাই এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প কিছু আমি দেখছি না। বাংলাদেশ জিতলে আমাদের সবারই ভালো লাগবে।
টেস্টে ঘরের মাঠে কেমন উইকেটে খেলা উচিত বাংলাদেশের?
অলক: বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিট এখন বেশ শক্তিশালী। ৭-৮ জন পেসার এখন নিয়মিত মুখ। বিশ্বের যেকোনো দেশের ব্যাটিং অ্যাটাকের সামনে লড়াই করতে পারে তারা। স্কোয়াডেও আছেন ৪ পেসার। হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, খালেদ, সাকিব; তাদের বোলিং দুর্দান্ত। তারা থাকা অবস্থায় স্পোর্টিং উইকেটেই খেলা উচিত। আমাদের পেসাররা ঠিকই উইকেট বের করে নিতে পারবে। ব্যাটসম্যানরাও রান করতে পারবে। আমার মনে হয় নিজেদের উন্নতির স্বার্থে স্পিন উইকেটে না খেলা উচিত।
এ উইকেটটি আপনার পরিচিত। টস জিতলে কোন পথে হাঁটা উচিত বলে মনে করেন?
অলক: সিলেটের উইকেটে সকালে নতুন বলে পেসাররা সুইং ও সিম মুভমেন্ট পেয়ে থাকেন। সে কারণে আমার মনে হয় আগে বোলিং করাটাই উত্তম। হাসান মাহমুদ-নাহিদ রানা-খালেদরা মিলে দ্রুত কয়েকটি উইকেট আদায় করে নিলে চাপে ফেলা যাবে জিম্বাবুয়েকে। তবে এখানে কারও হাত নেই। তাই যদি আগে ব্যাটিং হয়, প্রথম সেশনে ক্রিকেটারদের ধৈর্য ধরতে হবে। দাঁতে দাঁত চেপে মাটি কামড়ে উইকেটে টিকে থাকতে হবে। ওপেনার হিসেবে যদি জাকির আর জয় থাকে, তাদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে। তাতে শান্ত ও মুশফিকদের জন্য ব্যাটিংটা আরও সহজ হয়ে যাবে।
প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে সিলেটের ৪ ক্রিকেটার। এই ম্যাচটায় তারা ৪ জন কতটা কার্যকরী হতে পারেন?
অলক: আমাদের সঙ্গে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছে জাকির হাসান। সে অসাধারণ একজন ব্যাটসম্যান। দারুণ কোয়ালিটি ও টেকনিক্যালি সাউন্ড ব্যাটার। ৬৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে সে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছিল। শুরুর দিকে আছে তার দারুণ কিছু ইনিংস। তবে প্রত্যেক ক্রিকেটারের কিছু খারাপ সময় যায়, জাকিরের বেলায়ও তেমনই যাচ্ছে সময়টা। তাকে সময় দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। খালেদের পরিসংখ্যানটা হয়তো তার পক্ষে কথা বলছে না। ৮ বছরে মাত্র ১৫ টেস্ট খেলেছে। সংখ্যাটা হয়তো আরও বেশি হতে পারত। তবে বাংলাদেশ বছরে কয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলে সেটাও দেখার বিষয়। আর এখন বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিটে প্রতিযোগিতা বেশি। তাই অনেক সময় টিম কম্বিনেশনের কারণে স্কোয়াডে বা একাদশে রাখা হয়নি। তবে এই টেস্ট হতে পারে তার জন্য একটি সুযোগ। যদি সে একাদশে সুযোগ পায়, নিজেকে মেলে ধরার সেরা মঞ্চ হবে তার জন্য। আর বয়স কোনো বিষয় না। জেমস অ্যান্ডারসন ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত খেলেছে। যদি সে নিজেকে ফিট রাখতে পারে, তাহলে সেও আরও ১০ বছর খেলতে পারবে। আর ওরা নতুন যারা আছে, তারা নিজেদের ফিটনেস নিয়ে অনেক সচেতন। অন্যদিকে জাকের আলী অনিক দুর্দান্ত ফর্মে আছে। তাকে দেখে আসছি সেই অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে। পরে ঘরোয়া ক্রিকেটেও আমাদের সঙ্গে খেলেছে। মিডল অর্ডারে ও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা একজন ব্যাটার। আশা করি এই টেস্টেও সে নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করবে। আর তানজিম সাকিব প্রথমবার টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছে। ঘরের মাঠে যদি তার অভিষেক হয়ে যায়, এটা হবে স্বপ্নের মতো। যা রাঙানোর কাজটা তাকেই করতে হবে।
একাদশে কি আপনি তাদের দেখেন?
অলক: আমরা একসময় সিলেটের ৪-৫ জন ক্রিকেটার একসঙ্গে একাদশে থাকতাম। এই চারজনকেও আমি দেখতে পাই। জাকির ও জাকেরের জায়গা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই আমার। তবে টিম কম্বিনেশনের কারণে পেসার যদি তিনজন বা চার জন নিয়ে খেলানো হয় তাহলে তো আমি চারজনকেই স্কোয়াডে দেখি। তবে দিনশেষে যারাই একাদশে থাকুক, এই টেস্টে জয় পেলে সেটা সবার জয়। আমিও সেই ফলাফলটিই চাই।