বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩১ এএম

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মেয়াদ মাত্র আট মাস অতিবাহিত হয়েছে। বিগত দীর্ঘ ১৬ বছরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল ভূলুণ্ঠিত। এ অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় দেশকে প্রতিস্থাপন করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সম্মানের সঙ্গে তিনি অবশ্যই বিদায় নেবেন। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। নির্বাচিত সরকারের জন্য আট মাস কম সময় হলেও, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটা কম নয়। দেশবাসী গভীরভাবে লক্ষ্য করছেন, দেশের মানুষের জন্য কীভাবে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি নীরবে-নিভৃতে ‘কম কথা কাজ বেশি’, নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাদ-প্রতিবাদ-বিতর্ক-হিন্দুত্ববাদ-ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও চ্যাণক্যনীতির ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও দেশকে তিনি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারাজীবন রাজনীতির বাইরে থাকলেও, শাসক হিসেবে তিনি রাজনীতিতে ডাইনামিক লিডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার নেতৃত্বের প্রতি মানুষ ব্যাপকভাবে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। গভীর অথচ ঊর্মিহীন শান্ত সমুদ্রের মতোই ধীরস্থিরভাবে তিনি কাজ করছেন। স্মরণকালের ক্যারিশম্যাটিক নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিত হবে, ১৬ বছর ধরে ভোটের অধিকার হারানো মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তবে এর আগে সম্পন্ন করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজ। আশা করা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিজয়ীর বেশে তিনি কর্মজীবনে ফিরে যাবেন। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে মৌলিক বিষয়গুলোর সংস্কার করা জরুরি। যারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নিয়ে জিগির করছেন, তাদের উদ্দেশ্য কী তা পরিষ্কার নয়। সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইউনূস একজন ঠান্ডা মাথার মানুষ। উচ্ছৃঙ্খল  ‘রঙ হেডেড’ অবৈধ শাসকের মতো তর্জন-গর্জন তার মধ্যে অনুপস্থিত। ড. ইউনূসের পরিকল্পনায় যা আছে সেটি তিনি করে দেখাবেন। বিশ্ব নেতারা তাকে তোয়াজ করে চলেন, সমীহ করেন। তার প্রমাণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপকৃত শুল্ক তিন মাসের জন্য থামিয়ে দেওয়া, ভারতের ট্র্যান্সশিপমেন্ট বাতিলের প্রেক্ষিতে তাদের ট্র্যান্সশিপমেন্ট বন্ধ করা, চীন সফরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি সফলতা, বিমসটেক সম্মেলনে মোদিকে ঠান্ডা মাথায় বোঝানো, ক্ষমতা গ্রহণের পরই দেশের শৃঙ্খলা ফেরানো, জুলাই-আগস্ট হত্যাকান্ডের জন্য জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার, ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা, ব্যাংকিং সেক্টরে গ্রাহকের আস্থা ফেরানো, সংস্কার রোডম্যাপ, ব্যাপকভিত্তিক আন্তর্জাতিক সমর্থন, প্রশাসনে শূন্য দুর্নীতি, অস্থিরতা-সংকটে দক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির আবরণ থেকে বের হয়ে পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করা, বিজাতীয় সংস্কৃতি বর্জনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ ঘটানো এবং বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশের তালিকায় ১১২তম অবস্থান থেকে দেশকে বাঁচিয়ে ৪৭তম অবস্থানে নিয়ে আসা। এ ছাড়া আসিয়ান সদস্য এবং এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি করানো, কম সফলতা নয়।

তিনি তরুণ প্রজন্মকে কর্মের অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। স্বপ্ন দেখিয়েছেন, ‘থ্রি-জিরো’ থিওরি বাস্তবায়নের জন্য। তিনি বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে চুরমার করে দিয়ে পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রায় ১৬ বছর পর এবার দেশের মানুষ মুক্ত পরিবেশে আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছেন। এটি ড. ইউনূসের একটি বড় সফলতা। শুধু ‘বিজয়’ নয়, হিমালয়ের উচ্চ চূড়াতুল্য প্রফেসর ড. ইউনূসের কাছে আগ্রাসী আধিপত্যবাদী ভারতের রক্তচক্ষু এখন বিকালের ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে। উত্তর-পূর্বে, দক্ষিণ-পশ্চিমে, সমভূমি, মালভূমি, নদীতে, সমুদ্রে-সৈকতে, আকাশে-বাতাসে চারদিকে তার অদ্ভুত কূটনৈতিক সাফল্যের জয়ধ্বনি।  মাত্র আট মাসের ব্যবধানে বিশ্ব-প্ল্যাটফর্মে ড. ইউনূস হয়ে উঠেছেন এক অসাধারণ রাষ্ট্রনায়ক। তিনি বাংলাদেশকে বসিয়েছেন এক অনন্য মর্যাদার আসনে। হাসিনা-উত্তর বাংলাদেশকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গাজা পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে, আর দেড় দশকের স্বেচ্ছাচারিতায় হাসিনা ধ্বংস করে গেছেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো’। গুম-খুন, মামলা-হামলা আর গণহত্যা তো ছিলই। ভেঙে যাওয়া প্রশাসন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা সেক্টরে থেকে যাওয়া শেখ হাসিনার দোসররা একের পর এক সংকট সৃষ্টি করে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্রলীগ-যুবলীগ আপাতত আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেও, তাদের গুপ্ত হামলা বন্ধ হয়নি। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হলেও, তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়েই মাঠে নামছে বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন। দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে অফিস-আদালত-রাজপথে সৃষ্টি করছে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। সরকারের প্রথম ৬ মাসে ১৮১টি আন্দোলন হয়। সরকার শপথ নেয় ৮ আগস্ট। আর ১৯ আগস্ট এক দিনে ঢাকার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বিক্ষোভ করে অন্তত ১৮টি সংগঠন। দাবি-দাওয়া দূরে থাক, হাসিনা আমলে যারা কোনো শব্দই করতে পারেনি তারাও নামে রাজপথে। অবশ্য দেশবাসীর বুঝতে সময় লাগেনি যে, এসব নৈরাজ্য ছিল পরিকল্পিত ও পলাতক শেখ হাসিনার উসকানিতে। সরকারের উদার, গণতান্ত্রিক ও মানবিক মানসিকতাকে পরাজিত শক্তি বেছে নিয়েছিল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগ হিসেবে।

জুডিশিয়াল ক্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যু, গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা, পাহাড়ে অশান্তি, আনসার লীগ, ব্যাটারিচালিত রিকশা লীগ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থী, গার্মেন্ট শ্রমিক, এমএলএসএস থেকে শুরু করে প্রশাসন ক্যাডারের মধ্যেও চলে ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের অপচেষ্টা। পাশাপাশি ক্ষমতা হারানোর মনোকষ্ট থেকে সুতীব্র হুঙ্কারে উন্মত্ততায় মেতে ওঠে পলাতক শেখ হাসিনা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতায় পূর্ণ হতে চলেছে সরকারের অর্জনের ভা-ার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের রাশ টানা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা হচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে। অর্থ পাচার বন্ধ। বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক রেমিট্যান্স। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে। জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। বিচারপতি অপসারণে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ পুনর্জীবিত করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুনর্গঠন, ফ্যাসিস্ট সরকারের গুম, হত্যা ও আয়নাঘরে বন্দির ঘটনা তদন্তে ‘গুম কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। বিডিআর পিলখানায় সেনা হত্যার রহস্য উদঘাটনে ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ কাজ করছে এবং ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে ব্যবহার করে সিভিল ব্যুরোক্রেসি, পুলিশ এবং বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে হাজার হাজার গায়েবি মামলা করে। এসব মামলায় আসামি করে জামায়াত, বিএনপি, হেফাজত, ওলামাসহ অন্তত ৪৫ লাখ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে। মানুষের বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার লক্ষ্যে প্রণয়ন করে; সাইবার সিকিউরিটি আইনে হাজার হাজার মামলা দেওয়া হয়। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রতিশ্রুতির আলোকে কিছু মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বহু মামলা এখনো প্রত্যাহার বা বাতিল হয়নি। স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় ইউনূস সরকারের চেষ্টা ও তৎপরতা বেশ লক্ষণীয়। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নতুন ২৩ জন অতিরিক্ত বিচারপতি। স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি ঘোষিত ‘রোডম্যাপ’ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার। পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা প্রায় শেষ প্রান্তে। বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে ‘সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করা হয়েছে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সরকার ৯টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স পুনঃগঠন করা হয়েছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিপরীতে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস কূটনৈতিক সাফল্যের দিক থেকে আট মাসে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্ত করেন ১৮৬ প্রবাসীকে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকালে সেখানে সংহতি প্রকাশ করে হাসিনার বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলেন তারা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তৃতা করেন জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে। এ সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, নেপালের সরকারপ্রধান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিটি পক্ষই ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকে স্বাগত জানায়। তারা বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। বাংলাদেশ ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এগিয়ে যাক তারা সেটা চান। প্রধান উপদেষ্টা গত মার্চ মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যার্পণ উদ্যোগের সাড়া জাগান। এরপর ২৭ মার্চ চীন সফরে যান। উল্লেখ্য, ভারতের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য পোষণের প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা ছাড়ার কয়েক দিন আগে চীন থেকে রীতিমতো প্রত্যাখ্যাত ও অপমানিত হন শেখ হাসিনা। বিপরীতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেন লালগালিচা শুভেচ্ছা ও ঐতিহাসিক সংবর্ধনা। তাকে নেওয়ার জন্য বিশেষ বিমান পাঠায় চীন। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ, নদী ব্যবস্থাপনা ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঋণ এবং বিনিয়োগ বিভিন্ন আঙ্গিকে সোয়া ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যদিও তার এ সফরকে সহজভাবে গ্রহণ করেনি মোদির ভারত। তবে এই অভূত সফর ও কূটনৈতিক সাফল্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজ দেশে ঠাঁই করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ের মধ্যভাগে।

গত ১৬ এপ্রিল বুধবার বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনী ‘রোডম্যাপ’ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু বিএনপি এতে সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অপরপক্ষে জামায়াত আগামী রমজান মাসের আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন। জামায়াতের এ অবস্থানকে বিশেষজ্ঞ মহল ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছেন না। কারণ তাদের আগের অবস্থান ছিল শেখ হাসিনার গণহত্যার বিচার, তারপর মৌলিক সংস্কার কাজ সম্পন্ন পূর্বক যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন। আর এখন তারা বলছে, রমজানের আগে নির্বাচন। তাদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে জনগণের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর জামায়াত আমির মোটিভেটেড হয়েছেন। সত্যিই এমন যদি হয়ে থাকে, তাহলে জামায়াত নতুন করে ট্র্যাপে পড়বে এবং তাদের বর্তমান জনপ্রিয়তায় ধস নামবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ এবং বিতর্ক থাকলেও, প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস তার ডাইনামিক নেতৃত্বে দেশকে রক্ষা করছেন এবং জাতিকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অবশ্যই সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তার আন্তরিকতা, ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।  এই মুহূর্তে আমাদের জন্য জরুরি হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যে আসা। নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা এবং দায়বদ্ধতার অভাব থাকলে, জনগণকে আশ^স্ত করতে না পারলে, আবার শুরু হতে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা। তখন যে পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই বর্তমান সরকারকে কঠোর হতে হবে। যার আলামত এরই মধ্যে প্রায় স্পষ্ট হয়েছে। এটি কোনোভাবেই স্থিতিশীল রাজনীতির গতিপথ নির্দেশ করে না। এই বিষয়ে যে করেই হোক, সবাইকে একমত হতে হবে। তখনই বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সরকার, স্বচ্ছন্দে সম্পন্ন করতে পারবেন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। না হলে পরিস্থিতি আবারও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বিষয়টি রাজনৈতিক মহল গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন বলে প্রত্যাশা করি। একই সঙ্গে বলে রাখা ভালো, সময়মতো জনগণের মূল চাওয়া (নির্বাচন) অবশ্যই পূরণ হবে। 

লেখক: শিক্ষাবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত