বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

মানবসেবায় যুল জালালি ওয়াল ইকরাম ফাউন্ডেশন

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০ এএম

যুল জালালি ওয়াল ইকরাম ফাউন্ডেশন অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও সমাজকল্যাণমূলক একটি সংস্থা। অসহায়, দুঃস্থ, সুবিধাবঞ্চিত ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজে স্থায়ী শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে এর যাত্রা শুরু হয়। ফাউন্ডেশনটির কার্যক্রমের পরিধি বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়। সমাজের প্রান্তিক ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মাঝে খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়া এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

শুধু তাই নয়, সংগঠনটি মানুষের আত্মিক ও নৈতিক উন্নতির বিষয়েও গভীরভাবে সচেতন। ইসলামি শিক্ষার প্রসার, হিফজুল কোরআনের ব্যবস্থা, নারীদের ইসলামি শিক্ষা প্রদান, গ্রামাঞ্চলে মক্তব প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, সবই রয়েছে তাদের নিয়মিত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। তাদের প্রতিটি উদ্যোগে রয়েছে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও মানবিক মূল্যবোধের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। এ ছাড়াও তিনি রাজধানীর মিরপুর রূপনগরে অবস্থিত জামিয়া আশরাফিয়ার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস এবং শুকুরজান জামে মসজিদের খতিব। তার দৃঢ় প্রত্যয় ও নিষ্ঠার ফসল এই ফাউন্ডেশন আজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানবতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তিনি মনে করেন, একজন মুসলমানের জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করা। তাই ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে মানবতার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে তিনি এ সংগঠনটি গড়ে তোলেন।

ফাউন্ডেশনের মূল দর্শন হলো সহানুভূতি, সহযোগিতা ও আত্মত্যাগ। তারা মনে করেন, প্রতিটি মানুষই যেন একে অপরের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হয়। সমাজের বিত্তবান শ্রেণিকে উৎসাহিত করা হয়, তারা যেন দান-সদকা, জাকাত ইত্যাদির মাধ্যমে এই মহৎ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। এভাবেই একটি পরস্পরনির্ভর সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে, যেখানে একে অপরের জন্য ভালোবাসা থাকবে, দায়িত্ববোধ থাকবে, থাকবে শান্তি ও সৌহার্দ্য।

ফাউন্ডেশনটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও বিস্তৃত ও সুসংগঠিত। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন, যেখানে দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পাবে। পাশাপাশি, কর্মসংস্থানের উদ্যোগ, এতিম শিশুদের শিক্ষাদান, বিধবাদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ নানা কল্যাণমূলক পরিকল্পনা তাদের কর্মতালিকায় রয়েছে।

আজকের সমাজে যেখানে আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা বেড়েই চলেছে, সেখানে যুল জালালি ওয়াল ইকরাম ফাউন্ডেশন যেন এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বাতিঘর। এ ধরনের সংগঠন সমাজে আশার আলো জ্বালায়, বদলে দেয় অসহায় মানুষের জীবন।

সম্প্রতি মানবিক সহানুভূতি ও দ্বীনি ভ্রাতৃত্বের অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যুল জালালি ওয়াল ইকরাম ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনটির উদ্যোগে এবং জামিয়া আশরাফিয়া ঢাকার বর্তমান ও সাবেক ছাত্রবৃন্দ ও সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলীর সার্বিক সহযোগিতায় এক ব্যতিক্রমধর্মী সহায়তা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের ১২ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থানার দুধনই গ্রামে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। ভীমরুলের কামড়ে দুই সন্তানসহ শাহাদাতবরণ করেন শ্রদ্ধেয় আলেম মাওলানা আবুল কাশেম (রহ.)। এ মর্মান্তিক ঘটনায় তার পরিবার পড়ে চরম বিপদের মুখে। এমন দুঃসময়ে ফাউন্ডেশনটি এই শহীদ আলেম পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।

ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গত ১৪ এপ্রিল মরহুমের বড় ছেলে হাফেজ মুহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহর কাছে এক লাখ টাকার সহায়তা চেক হস্তান্তর করা হয়। চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুল জালালি ওয়াল ইকরাম ফাউন্ডেশনের মহাসচিব এবং জামিয়া আশরাফিয়া ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, শাইখুল হাদিস মুফতি মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বিশিষ্ট ওয়ায়েজ ও আলেমে দ্বীন মুফতি আবুল ফজল কাসেমি, মুফতি মামুনুর রশিদ হাবিবি, সমাজসেবক ও সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন পরশ, মুফতি মুজিবুর রহমান, মুফতি দ্বীন ইসলাম রাকিব, হাফেজ মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা আজিজুর রহমানসহ আরও অনেকে।

অনুষ্ঠান শেষে মরহুমের পরিবারের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করে মুফতি মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম তার রচিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘বুনইয়ানে ইসলাম’ ও ‘মানুষ কেন শ্রেষ্ঠ?’ মরহুমের বড় ছেলে হাফেজ হেদায়েতুল্লাহর হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেন। এই আয়োজন কেবল একটি আর্থিক অনুদান বা আনুষ্ঠানিকতার জন্য নয়; বরং এটি সমাজে আলেমদের প্রতি দায়িত্বশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এমন মানবিক উদ্যোগ সমাজে এক অনন্য আদর্শ স্থাপন করে। অনুষ্ঠান শেষে মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, মহান আল্লাহ যেন এ কাজের সব সহযোগীকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং মাওলানা আবুল কাশেম (রহ.)-কে জান্নাত নসিব করেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত