লালমনিরহাটের প্রধান অর্থকরী ফসল ভুট্টা। ভুট্টা চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। কয়েক বছর ধরে ভুট্টার গাছ ও পাতা বিক্রি করেও বাড়তি আয় করছেন ভুট্টাচাষিরা। পুষ্টিকর গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টা পাতার চাহিদা রয়েছে। আর এই চাহিদার কারণেই ভুট্টাচাষিদের নিকটবর্তী এলাকায় বসছে পাতার হাট।
ভুট্টাচাষি সরিফুদ্দিন কামাল জানান, ভুট্টা পাকার ১৫ দিন থেকে ১ মাস আগে ভুট্টার কাঁচা সবুজ পাতা ভালো দামে বিক্রি হয়। এখন ভুট্টার পাশাপাশি ভুট্টার পাতাও বিক্রি করছেন জেলার ভুট্টাচাষিরা। সোনালি দানা ভুট্টা ঘরে তোলার পর ভুট্টার গাছ জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করেন কৃষকরা। ভুট্টার গাছ, পাতা, খোসা সবই বিক্রি করে ভালো টাকা আয় করা যায়।
আমন ধান কাটার এখনো প্রায় এক থেকে দেড় মাস বাকি। এই সময়টাতে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। এ সময় সবুজ ভুট্টার পাতায় খড়ের চাহিদা মেটাচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা। সবুজ ভুট্টার পাতা গরু ও ছাগলের যেমন পছন্দের তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। খামারিরা গরু ও ছাগল মোটাতাজাকরণে দামি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ভুট্টার পাতা ব্যবহার করেন। বড় বড় খামারিরা ভুট্টার গাঠ, পাতা শুকিয়ে ও সাইলেজ তৈরি করে কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণে রেখে গরু-ছাগলের খাদ্য চাহিদা পূরণ করছেন। আগে ভুট্টার গাঠ ও পাতার দাম না থাকায় জমিতে পচিয়ে ফেলতাম। এখন প্রতিবিঘায় ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকার পাতা বিক্রি করি।
লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীতীরের ৬৭ কিমি জুড়ে জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে সোনালি দানা ভুট্টা। জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে শুধু কালীগঞ্জ উপজেলায়ই এ বছর ৪১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন চর ও গ্রাম থেকে কৃষকরা ভুট্টার পাতা ভ্যানে ও ট্রলিতে করে নিয়ে এসে বিক্রি করেন। বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করে ভুট্টা চাষের খরচ অনেকটাই উঠে আসে।
খামারি মামুন গাজী জানান, দুটো গরুর জন্য ৫ টাকা মুঠো দরে ৩০ টাকার পাতা কিনেছেন। ভুট্টার মৌসুমে তিনি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টাকার পর্যন্ত পাতা কিনে গরুকে খাওয়ান। এতে তার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আগে বিভিন্ন কোম্পানির দানাদার খাদ্য না কিনে, যতদিন ভুট্টার পাতা থাকে ততদিন পাতা কিনে গরুকে খাওয়ান। বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করা কৃষকরা ভুট্টা সংগ্রহ করার আগে কাঁচা পাতা পাইকারি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই মৌসুমে কিছু মানুষ ক্ষেত থেকে পাতা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারি ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, ভুট্টাগাছের পাতা গরু-ছাগল ও মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পাতা এবং গাছ। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষক। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌসুর রহমান বলেন, ভুট্টার পাতায় কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন প্রচুর পরিমাণ রয়েছে। দামি নেপিয়ার ঘাসের মতো পুষ্টিগুণে ভরপুর ভুট্টার পাতা। খামারি ও কৃষকরা ভুট্টার পাতা গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর ফলে দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমছে। উৎপাদন খরচ কমায় কৃষক ও খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। ভুট্টার পাতা ও গাছ সাইলেজ করে রাখলে আপৎকালীন খামারিরা ব্যবহার করে আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন বলে তিনি জানান।