বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

হাওরে চলছে ধান কাটার উৎসব

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৮ এএম

জেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার ধুম লেগেছে। কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওরের কৃষক। কৃষকরা জানিয়েছেন, খরচ ও ঋণ মেটাতে অনেক চাষি ধান ঘরে না তুলেই বিক্রি করে দিচ্ছেন ৮২০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে। যদিও এক মণ বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় সাড়ে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। এর মাঝে শুধু হাওরেই ১ লাখ ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে উৎপাদিত চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন এবং ধানের উৎপাদন ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬৮ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। গত বছর ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১২০০ টাকা প্রতিমণ তবে এবার তা কৃষকদের জন্য বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪৪০ টাকা প্রতিমণ। যা প্রতিকেজি ৩৬ টাকা। সরকার এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৮ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করবে বলে জানা গেছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগাম পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ফসলহানি রোধে এবার কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে উপজেলায় ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ১২৯টি ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নিকলীর জনশাইয় হাওরে কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ২ একর বোরো ২৮ জাতের ধান কাটছি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে ধান কাটার মৌসুমি কৃষি শ্রমিকের সংকট আছে। ধানের ন্যায্যমূল্য পেলে আমরা লাভবান হব। জমি আবাদ করতে গিয়ে ঋণ করতে হয়েছে। তবে ভালোয় ভালোয় ধান তুলতে পারলে সব ঋণ শোধ করা যাবে। নিকলীর সিংপুর গ্রামের কৃষক একাব্বর আলী জানান, ঋণ করে বোরো ধান করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে এখন দাম ভালো পেলে লাভবান হবো। না হলে ঋণের বোঝা টানতে হবে। এবার হাওরে হাইব্রিড ছক্কা, ফাইজং ও হাইব্রিড ২৯ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। শুনেছি হাওরে বাঁধ হয়েছে। তাই বন্যা হাওয়ার শঙ্কা কম। কষ্টের ফসল নষ্ট হলে কী যে কষ্ট এটা বলে বোঝাতে পারব না।

নেত্রকোনা জেলা সুসং দুর্গাপুর থেকে ১৬ জনের একটি শ্রমিকের দল নিয়ে এসেছেন রুহুল আমিন নামের শ্রমিক দলনেতা। তিনি জানান, গত বছর শ্রমিকের মূল্য বেশি ছিল এবার কম। হাওরে এখন মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হয় তাই আমাদের মূল্য কম। হার্ভেস্টার মেশিনের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে অনেক সময় লাগে। হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে ১ একর জমির ধান কাটতে মাত্র ১ ঘণ্টা লাগে। মেশিনে ধান কেটে কৃষক সহজেই বাড়ি নিয়ে যেতে পারে। কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাদিকুর রহমান জানান, খাদ্যে উদ্বৃত্ত কিশোরগঞ্জ জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ লাখ ৮৮ হাজার ২১০ টন। আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। এ বছর সরকারিভাবে নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৮ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করা হবে। কৃষি শ্রমিক সংকট কাটাতে হাওরে এ বছর ২২০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন ধান কাটার কাজ করছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই বাইরের জেলা থেকে হার্ভেস্টার মেশিন আসছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত