ছোট থেকে মাঝারি ব্যবসায়ের মালিক হিসেবে দক্ষতা, সময় ও ব্যয়-কার্যকারিতার গুরুত্ব বোঝা জরুরি। প্রযুক্তির ইতিবাচকতা কাজে লাগিয়ে খুব সহজে সময় ও অর্থ সাশ্রয় করা যায়। সে ক্ষেত্রে সহায়তা করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই। বিস্তারিত লিখেছেন অনিন্দ্য শোভা
এআই আবিষ্কারের পরপরই বিভিন্ন উপায়ে বিপণনসহ অনেক শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এটি ব্যবসার পদ্ধতিকে সুশৃঙ্খল করেছে। কৌশলকে অপ্টিমাইজ করে এবং ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সময় ও অর্থ সাশ্রয় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেভাবে এআই ব্যবসায়ের উপকার করতে পারে এবং যে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সহায়তা করতে পারে, তা জেনে নিন।
খরচ কমাতে পারে
বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদনার জন্য অনেক কর্মচারী নিয়োগ দিতে হয়, বেতন- বোনাস দিতে হয়, ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অনেক ধরনের কাজ আছে যা এআই-এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। যেমন ডেটা অ্যানালাইস, লেখক, সম্পাদক বা নিবন্ধ লেখার জন্য লোক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এআই দ্রুতগতিতে এই কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে কর্মচারীদের বেতন, প্রশিক্ষণ, পরিচালনার ব্যয়ে অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ব্যবসার উদ্ভাবন, উন্নতি বৃদ্ধিসহ অন্য ক্ষেত্রগুলোতে ফোকাস করতে সাহায্য করে।
গ্রাহকসেবার মান বাড়ায়
গ্রাহক পরিষেবা যে কোনো ব্যবসায়ের সাফল্যের জন্য অত্যাবশ্যক। তবে এটি সময়সাপেক্ষ এবং অর্থব্যয়ভিত্তিকও হতে পারে। এআই চালিত চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল সহকারীরা গ্রাহকের অনুসন্ধান চালাতে পারে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, এমনকি মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সাধারণ সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে। গ্রাহকের সঙ্গে এআই-এর যোগাযোগ বা বার্তা আদান-প্রদান মানুষের চেয়ে বেশি স্বাভাবিক বলে মনে হয়। বাস্তবিক মানুষ প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করতে পারে, ভুল করতে পারে কিন্তু এআই তেমন নয়। এটি শুধু সময় বা অর্থ সাশ্রয় করে না, সার্বক্ষণিক প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে, গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং আনুগত্য উন্নত করে।
সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে
যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মানুষের কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু এআই সে ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়ে দ্রুতগতিতে আপনাকে যেকোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে সক্ষম। ব্যবসাকে কীভাবে আরও সঠিক ও সামঞ্জস্য করে উন্নতি করা যায়, সে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে। এআই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে একটি পণ্যের পূর্ববর্তী বিক্রয় থেকে ডেটা অ্যানালাইসের মাধ্যমে অনুমান করতে পারে যে, কতজন লোক আপনার পণ্য কিনতে পারে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে কোন পণ্যগুলো প্রচার করা উচিত, বিক্রয় করা উচিত তা নির্ধারণ করতে পারে এআই। কোন পণ্যগুলো উৎপাদনে যাওয়া উচিত সে সম্পর্কেও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
গ্রাহকের প্রয়োজন বুঝতে পারে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রচুর পরিমাণে ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সেকেন্ডের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম। ডেটা বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের কী প্রয়োজন, আপনার কোম্পানি থেকে কী পেতে চায় তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করতে পারে। গ্রাহকের অন্তর্দৃষ্টি সংগ্রহ করতে এআই সিস্টেম ব্যবহার করা জরুরি, কারণ এতে ব্যবসার বিক্রি বৃদ্ধি পায়। এআই কেনাকাটার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এবং গ্রাহকের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করা
এআই ইমেইল লেখা-পাঠানো, ডেটা সিফট করা বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো পরিচালনা করতে পারে মানুষের চেয়েও আরও দক্ষতার সঙ্গে। এই ধরনের কাজগুলো স্বয়ংক্রিয় করে, মূল্যবান সময় সাশ্রয় করা যায় এবং ব্যবসায়িক বিভিন্ন উদ্দেশ্যগুলোতে ফোকাস করা যায়।
বিজ্ঞাপন কৌশল অপ্টিমাইজ করা
কার্যকর বিজ্ঞাপনের জন্য সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা এবং অপ্টিমাইজেশন দরকার। এআই অনলাইনে ভোক্তার চাহিদা, সক্রিয়তা, ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যযুক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারাভিযান করতে সক্ষম। এআই চালিত চ্যাটবট ব্যবহার করে, বিজ্ঞাপন ব্যয়কে অপ্টিমাইজ করতে পারবেন, সঠিক সময়ে সঠিক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। বিনিয়োগ বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম এবং অর্গানিক কাস্টমারকে খুঁজে পেতে সর্বাধিক ভূমিকা রাখে।
সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করে
ক্রমবর্ধমান-সংখ্যক ব্যবসা সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তায় বিনিয়োগ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্ভাব্য হুমকি শনাক্ত করে, দুর্বলতাগুলো শনাক্ত করে এবং সঠিক সময়ে আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আপনার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এআই-এর মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার, ব্যবসাকে ব্যয়বহুল লঙ্ঘন থেকে রক্ষা, সংবেদনশীল ডেটা সুরক্ষিত করতে পারেন এবং গ্রাহকদের বিশ্বাস বজায় রাখতে পারেন।
