মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জ্বললেন বোলাররা

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৩ এএম

সিলেটের আকাশটা যেন মন খারাপ করে বসেছিল। প্রথম দিনের সেই বিবর্ণ পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে যেমন ভেঙে পড়েছিল সমর্থকের মন, তেমনি গুমোট হয়ে উঠেছিল আবহাওয়াও। সকালের মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া, ফ্লাডলাইটের আলোয় ঢাকা মাঠ। সব মিলিয়ে যেন প্রকৃতিও ছিল ব্যর্থতার সাক্ষী। তবে দ্বিতীয় দিনে যখন নাহিদের বাউন্সারে ছিটকে গেল বেন কারেন, মুমিনুলের হাতে জমল রেকর্ড গড়া ক্যাচ, ঠিক তখনই যেন আকাশের অভিমান গলতে শুরু করল। দুপুরের আগেই মেঘের ক্যানভাস ছিঁড়ে উঁকি দিল রোদ, আর মাঠে ফিরল বাংলাদেশও। উইকেট পেলেন পেসাররা, সেশন ধরে ধরে চালালেন লড়াই। তবে শেষ সেশনে আবার ধাক্কা, জিম্বাবুয়ের টেল এন্ডাররা চালিয়ে খেলায় নিয়ে গেলেন রান ২৭৩-এ।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ সাদমান ইসলামের আত্মাহুতিতে ১৩ ওভার ব্যাট করে তুলেছে ৫৭ রান। জিম্বাবুয়ে এখনো এগিয়ে ২৫ রানে। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেও বোলারদের এই ঘুরে দাঁড়ানো যে স্বস্তির বাতাস বইয়ে দিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

নাহিদ রানা ছিলেন দিনের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ। যেভাবে শর্ট বলের ফাঁদে ফেলেছেন বেন কারেন-বেনেট ও আরভিনকে তাতে যেন বোঝা গেল, তিনি জিম্বাবুইয়ানদের ভাবা ‘বোলিং মেশিনে’র চেয়েও বেশি কিছু। শর্ট লেগে ক্যাচ, উইকেটের পেছনে কানায় লেগে শিকার আর রিভিউয়ে মেলানো সাফল্য, প্রতিটি উইকেটই যেন ছিল পরিকল্পিত বোলিংয়ের অংশ। কারানের ক্যাচটা নিয়ে মুমিনুল পেছনে ফেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। টেস্টে এটি তার ৪১তম ক্যাচ। ৪০ ক্যাচ নিয়ে এতদিন শীর্ষে ছিলেন মিরাজ।

সেই ক্যাচের রেকর্ডের পর হাসান মাহমুদের ইনসুইংয়ে উড়ে গেছে ওয়েলচের অফস্টাম্প। খালেদ আহমেদও ছিলেন ধারাবাহিক, তার অফস্টাম্পের বাইরের বলেই ইনসাইড এজ হয়ে ফিরেছেন মাধেভেরে। এরপর মিরাজ, দ্বিতীয় সেশনে একটু চুপ থাকলেও তৃতীয় সেশনে ছড়িয়েছেন আলো। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইলিয়ামস, মায়াভো এবং মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেটের স্বাদ নিয়েছেন প্রায় আড়াই বছর পর।

তবে সব প্রশংসা ছাপিয়ে একটা হতাশার জায়গা থেকেই যায়। শেষ সেশনে জিম্বাবুয়ের টেল এন্ডারদের দাপট। ৭ উইকেটে ২২৩ থেকে তারা গিয়ে দাঁড়ায় ২৭৩-এ। নিয়াউচি ও চিভানগার জুটি মিলে ফাঁসিয়ে দেয় বাংলাদেশের পরিকল্পনা। এখানে ধরা পড়ে বোলিংয়ে মনোসংযোগের ঘাটতি এবং ফিল্ডিংয়ের কিছু ভুল। মিরাজ যদিও শেষ উইকেট তুলে ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু ততক্ষণে জিম্বাবুয়ে ৮২ রানের লিড নিয়ে নিয়েছে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমেই বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন জিম্বাবুয়ের ফিল্ডারদের ক্যাচিং প্র্যাকটিসে নামিয়েছেন! সাদমান ইসলাম একের পর এক ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। ভাগ্যক্রমে মিস হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগের কোনো সদ্ব্যবহার হয়নি। দিনের শেষ ওভারে ভিক্টর নিয়াউচির বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দেন তিনি। নতুন জীবন পেলেও তা না বাঁচানোয় ব্যাটিং শুরুটা হয়ে গেছে হতাশাজনক।

দিন শেষে মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছেন, ‘প্রথমে লিড পার করতে চাই আমরা। আমাদের লক্ষ্য থাকবে সেটা ক্রস করা। তারপর আমাদের ব্যাটসম্যানরা যেন দায়িত্ব নিয়ে বড় একটা স্কোর করতে পারি। এখন যেমন আছে উইকেট সেটাতে ব্যাটিং যদি করি তাহলে ৩৫০-৪০০ রান করতে পারি। এটা আমাদের দলের জন্য অনেক ভালো হবে। টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ রান লক্ষ্য প্রতিপক্ষের জন্য অনেক কঠিন। কারণ উইকেটের চরিত্র বদলাবে ক্ষণে ক্ষণে। আমাদের ওই দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে।’

প্রথম ইনিংসে যাচ্ছেতাই ব্যাট করা ব্যাটসম্যানরা সে দায়িত্বটা নিতে পারেন কি না সেটাই দেখার। জিম্বাবুয়ে কিন্তু প্রথম ইনিংসের মতো বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার আশায় আছে ‘সকালে তাদের ওপর চড়াও হতে হবে। আশা করি, চতুর্থ ইনিংসে ওরা খুব বড় লিড পেয়ে যাবে না। ম্যাচটি জেতার দারুণ সুযোগ আছে আমাদের। রাতে আমাদের বোলাররা বিশ্রাম পাবে, সকালে তারা আরও উদ্যম নিয়ে নামবে। আমরা আগামীকাল সেরাটা দেব’ কাল দিন শেষে বলছিলেন ফিফটি করা ওপেনার ব্রায়ান বেনেট।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত