ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামের শেষ বিকেলে আজ উৎসব হবে। কী হবে সেই উৎসবের রঙ? লাল না আকাশি-হলুদ? যদি লাল হয় চলতি মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপায় রাঙবে বসুন্ধরা কিংস। গত মৌসুমে ট্রেবল জয়ের অনন্য রেকর্ডের মালিক বসুন্ধরা। চলতি প্রিমিয়ার লিগে ভালো অবস্থায় নেই বলেই চতুর্থ ফেডারেশন কাপের দৃষ্টি তাদের। আর যদি উৎসবের রঙ হয় আকাশি-হলুদ, আবাহনী নিজেদের নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়। ফেডারেশন কাপের সফলতম দলটি ১৩তম বারের মতো জিতবে শিরোপা। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিনের সাফল্য-খরাও ঘুচবে ধানমন্ডি জায়ান্টদের। ২০২২ সালে ফেডারেশন কাপ জয়ের পর থেকেই যে শিরোপাশূন্য তারা। অর্ধযুগে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব লুট করা বসুন্ধরা কিংসকেই হারিয়েই যদি সাফল্যে বন্ধ্যত্ব কাটানো যায়, তাতে প্রাপ্তির আনন্দও যে দ্বিগুণ হয়।
মৌসুমের অর্ধেকটা বিদেশিবিহীন খেলা আবাহনী ফেডারেশন কাপের ফাইনালে এসেছে এই বসুন্ধরাকেই প্রথম কোয়ালিফায়ার্সে হারিয়ে। দশজনের দল নিয়ে পিছিয়ে গিয়েও আবাহনী শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা নিয়ে যায় টাইব্রেকারে। ভাগ্য পরীক্ষায় কিংসকে হারিয়ে তারা সরাসরি জায়গা করে নেয় ফাইনালে। সেই হারের ধকল সয়ে তাদের খেলতে হয়েছে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার্স। যেখানে তাদের সামনে রহমতগঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল বিষম চ্যালেঞ্জ। বসুন্ধরা সেটা উতরেছে অতিরিক্ত সময়ে সুপার সাব ইনসান হোসেনের লক্ষ্যভেদে। নাটকীয় ম্যাচে তারা রহমতগঞ্জকে হারায় ২-১ ব্যবধানে।
চলতি মৌসুমে বসুন্ধরার খেলা ঠিক মন জয় করতে পারছে না। তারপরও এখন পর্যন্ত তারাই চলতি মৌসুমে সবচেয়ে সফল দল। কারণ তারা মৌসুম শুরু করেছে শিরোপা দিয়ে। নতুন বাংলাদেশে নতুন আসর চ্যালেঞ্জ কাপ তারা জিতে নেয় মোহামেডানকে হারিয়ে। আর আজ তাদের সামনে দ্বিতীয় শিরোপার হাতছানি। যদিও আবাহনী বাধা পেরোনো ভ্যালিরিউ তিতার দলের জন্য মোটেই সহজ নয়। এই মৌসুমেই আবাহনীর কাছে দুবার হেরেছে তারা। লিগের প্রথম পর্বে হারার পর ফেডারেশন কাপের কোয়ালিফায়ার্সে হার। হারের ধারা অব্যাহত থাকলে কিংসের জন্য সেটা হবে বড় লজ্জাই।
গত বছর জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবাহনীর দল গড়াই ছিল অনিশ্চিত। অর্থসংকটে শেষ পর্যন্ত তারা দল গড়লেও নিতে পারেনি কোনো বিদেশি ফুটবলার। তবে অভিজ্ঞ কোচ মারুফুল হকের অধীনে স্থানীয়রাই অসাধারণ ফুটবলে দলটাকে শুধু এগিয়েই নিচ্ছেন না, দাঁড় করিয়েছেন সাফল্যের চৌরাস্তায়। লিগে তাদের অবস্থান দুইয়ে। আর আজ আবাহনী নামবে ফেডারেশন কাপ জয়ের লক্ষ্যে। মধ্যবর্তী দলবদলে দুই পরীক্ষিত ভিনদেশিকে দলে ভিড়িয়ে আবাহনী আগের চেয়েও বেশ শক্তিশালী। কিছুটা পথহারা কিংসকে হারিয়ে আবাহনী আজ উৎসবে মাতোয়ারা হতেই পারে। অন্তত শেষ কয়েকটি ম্যাচে যে উত্তুঙ্গু আত্মবিশ্বাস নিয়ে আবাহনী খেলছে, তা দেখে আজ কিছুটা এগিয়েই রাখতে হচ্ছে মারুফের শিষ্যদের।
অস্কার ব্রুজনের বিদায়ের পর বসুন্ধরা কিংস খেলছে তিতার অধীনে। দলের বেশ কজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের চোটও ভোগাচ্ছে রুমানিয়ান কোচকে। তারপরও আজ শিরোপা জিততে চান এই কোচ, ‘আমার মনে হয় দুদলের জন্যই এটা কঠিন একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে। শেষ দুই ম্যাচে ভালো খেলেও আমরা তাদের কাছে হেরেছি। বিশেষ করে দুই সপ্তাহ আগে আমরা টাইব্রেকারে হারি। অথচ সেই ম্যাচে আমরা এগিয়ে ছিলাম অনেকটা সময়। আবাহনী দশজনে পরিণত হয়েছিল। অতীত ভুলে আমি সামনে তাকাতে চাই। আশা করব কালকের দিনটি আমাদের হবে। আশা করছি ছেলেরা শিরোপা জিততে তাদের সেরাটা দেবে।’
ভালো খেললেও চলতি মৌসুমে এখনো আবাহনীর অর্জনের খাতা শূন্য। শুধু এই মৌসুমে নয়, বিগত দুই মৌসুমেও কিছু জিততে পারেনি আবাহনী। তাই আজ অনেক পাওয়ার দিন আবাহনীর জন্য। কোচ মারুফুল হকের জন্যও বটে, ‘আমরা আজ (গতকাল) দুপুরে ময়মনসিংহে পৌঁছায়ছি। দুপুরে অনুশীলন করেছি। আমার দলের সবাই সুস্থ আছে। আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি আশাবাদী। যদিও বসুন্ধরা অনেক শক্তিশালী একটি দল। তাদের তো বলে-কয়ে হারানো যায় না। তারপরও আমি বলতি পারি। সব প্লেয়ারের যে ডেডিকেশন দেখেছি, তা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে।’
লিগ, ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ মিলিয়ে দুদলের আগে খেলেছে ১৮ ম্যাচ। তার ১১টি জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। আবাহনীর জয় তিনটিতে। বাকি চার ম্যাচ ড্র। আবাহনীর তিন জয়ের দুটিই আবার ফেডারেশন কাপে। তো, পয়া আসরে আবাহনী আরেকটি জয়ের আশা করতেই পারে। তাতে যে পাওয়া হবে অনেক কিছুই।
