বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

‘অর্জন একদিনে আসে না কষ্ট করতে হয়’

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৫ এএম

চার উইকেটেই থেমে যেতে পারতেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার মহামূল্যবান পাঁচ উইকেটের পথে বাধা হতে পারতেন তাইজুল ইসলাম, সিলেট টেস্টের গোটা প্রথম ইনিংসেই যিনি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। কিন্তু নিয়তির কলমে লেখা ছিল অন্য কিছু। তাই তো সাদমান ইসলাম ক্যাচটা লুফে নিতে পারেননি। তাইজুলেরও আর উইকেট নেওয়া হয়নি। তাই ক্যারিয়ারে ১১তম ইনিংসে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতে টেস্টে নিজের উইকেট সংখ্যা দাঁড় করালেন ১৯৫-এ। ২০০ উইকেটের মাইলফলক থেকে মাত্র পাঁচ উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে যখন সফরকারীরা পাঁচ উইকেট হারিয়েছে, তখনো কোনো উইকেট ছিল না মিরাজের। কিন্তু এরপর যা করলেন, তা নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য। জিম্বাবুয়ের শেষ পাঁচ উইকেটই তুলে নেন তিনি একাই। শন উইলিয়ামসকে ফেরান ৫৯ রানে, যিনি ছিলেন সেট ব্যাটসম্যান। তিনি আবার হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের গলার কাঁটা। তাই তার উইকেটটি দল ও মিরাজ উভয়ের জন্যই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। নিয়াশা মায়াভো (৩৫) সুইপ করতে গিয়ে দেন উইকেট, ওয়েলিংটন মাসাকদজাকে বিদায় করেন মিরাজের নিখুঁত ডেলিভারিতে। তার বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারিতেই ব্লেসিং মুজারাবানিকে স্টাম্পিং করেন উইকেটরক্ষক জাকের আলী অনিক।

এই চার উইকেটে থামার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তাইজুল ইসলামের বলে সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন সাদমান ইসলাম। না হলে পাঁচ উইকেট নয়, মিরাজের থামতে হতো চার উইকেটেই। কিন্তু ভাগ্য ছিল সহায়। নতুন বলে ৮০তম ওভারে ফিরে এসে মাত্র দুই বলেই তুলে নেন শেষ উইকেটটি। এতে ইনিংসের শেষে বল হাতে নিজের ছায়া হয়ে থাকা তাইজুল উইকেটশূন্য থাকলেও উজ্জ্বল হয়েছেন মিরাজ।

টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি মিরাজের ১১তম পাঁচ উইকেট পাওয়া ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান ১৯ বার ও তাইজুল ইসলাম ১৫ বার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট।

এমন এক পারফরম্যান্সের পর সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেন, ‘অবশ্যই উইকেট পেলে তো সবারই ভালো লাগে। দিনশেষে যেহেতু হোমে খেলা, আর এক্সপেক্টেশনটা আমার নিজের কাছেও অতটা হাই ছিল না। চেষ্টা ছিল ঠিক জায়গায় বল করা, টিমকে ভালো সাপোর্ট করা। আর পাঁচ উইকেট পেতে তো অবশ্যই ভালো জায়গায় বল করতে হবে, এট দ্য সেইম টাইম লাক ফেভার করা লাগবে।’

বল হাতে শুরুটা ছিল গড়পড়তা। কিন্তু পরের দিকে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করেছেন। গতি, লাইন-লেন্থ ও ক্রিজ ব্যবহারে বাড়িয়েছেন বৈচিত্র্য। জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররাও আলগা শটে তাকে উইকেট উপহার দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মিরাজ বলেন, ‘প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের সম্পর্কে যত ম্যাচ খেলি, ততই বুঝি কার কোন জায়গায় দুর্বলতা আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখি, বিশ্লেষণ করি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত ইম্প্র“ভ করতেই হয়।’

লর্ডসে যারা সেঞ্চুরি করে বা পাঁচ উইকেট পায় তাদের নাম ওঠে অনার্স বোর্ডে। একইভাবে অনার্স বোর্ড আছে রাওয়ালপিন্ডিতেও। সেই বোর্ডে নাম উঠেছে মিরাজের। তবে বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি সম্মানসূচক ‘অনার্স বোর্ড’। বিষয়টি মিরাজকে ভাবায়, ‘অর্জন একদিনে আসে না। কষ্ট করতে হয়। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে যখন পাঁচ উইকেট নিয়েছিলাম, নাম দেখেছিলাম অনার্স বোর্ডে, ভালো লেগেছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশেও এই ট্র্যাডিশনটা চালু করা উচিত। আশা করি যারা এখন সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এটা নিয়ে ভাববে।’

ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকেই নিজের সামর্থ্য দেখাতে চান মিরাজ। এ বিষয়ে বললেন, ‘সিনিয়র ক্রিকেটে আমি বোলার হিসেবেই শুরু করেছিলাম। অনেক দিন ৮ নম্বরে ব্যাট করেছি, তেমন স্কোর হয়নি। এখন নিজে যখন রান করতে পারছি, দলও আমার ওপর কনফিডেন্ট। আমি নিজেকেও বিশ্বাস করতে শিখেছি যে, আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রান করতে পারি, ম্যাচ জেতাতে পারি। ব্যাটিং ও বোলিং দুইটাতেই উন্নতি করতে হবে।’

মিরাজের চোখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কঠিন, কিন্তু সেই লড়াইয়েই তার বিকাশ। প্রতিদিনই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। আর সেই পথ ধরেই হয়তো ২০০ উইকেটের গর্বিত ক্লাবের তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হওয়ার দিনটা খুব বেশি দূরে নয়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত