চট্টগ্রাম মহানগরীর জামালখানের আসকার দীঘিরপাড়ের সংরক্ষিত পাহাড়টি সমতল ভূমি দেখিয়ে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল ১৪ তলার চারটি টাওয়ারের। এর বাইরে রয়েছে তিনটি বেজমেন্ট। সে হিসেবে প্রায় ১৭ তলা উচ্চতার ভবন নির্মিত হচ্ছিল পাহাড় কেটে। আর রেকর্ডে ছিল সমতল ভূমি। সিডিএ এ ভবনের অনুমোদনও দিয়েছিল। কিন্তু অনুমোদিত নকশার বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণের দায়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নোটিস দিলেও ভবন মালিক উচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্থগিতাদেশ নিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। গত রবিবার চেম্বার আদালত এ স্থগিতাদেশ রহিত করলেও গতকাল সোমবার সিডিএ কর্তৃপক্ষ ভবনটিতে অভিযান চালিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করে। রেকর্ড পরিবর্তনের মাধ্যমে ভবনের অনুমোদন নিয়ে দেশ রূপান্তরে গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি ‘রেকর্ড বদলে পাহাড় সাবাড়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।
গতকালের অভিযান প্রসঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, বিগত সরকারের সময়ে পাহাড়ের মধ্যে এ ভবনটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরে সিডিএর পক্ষ থেকে যথাযথ মনিটরিং না হওয়ায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এ ছাড়া ভবন মালিকদের পক্ষ থেকে আদালতে মামলাও বিচারাধীন ছিল। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তা মোকাবিলা করে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে এলাম।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে পূর্বেকার ভবনগুলোতে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে আমরা সেগুলোও বিবেচনায় আনব। একই সঙ্গে নতুন যেসব ভবন নির্মিত হচ্ছে, সেগুলো যাতে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মিত হয়; তা নিশ্চিত করতে আমি সরাসরি মাঠে মনিটরিং করব।
এর আগে দীর্ঘ মামলা প্রক্রিয়া ও উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে সিডিএর অথরাইজড অফিসার-২ তানজিব হোসেন বলেন, নির্মাণকাজ শুরুর আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়নি। প্রস্তাবিত সাইটে স্থিত পাহাড়ের অবয়ব কোনো পরিবর্তন করা যাবে না, একাধিক লেভেলে পাহাড়ের কনট্যুর অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ, প্লিন্থ লেভেল (বেজ পর্যন্ত) পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পাদন করে সিডিএকে অবহিত করা, সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ভূমি আচ্ছাদন পূর্বক ভবন প্রভৃতি শর্ত ভঙ্গ করার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। শর্ত ভঙ্গের কারণে নকশা অনুমোদন কেন বাতিল করা হবে না সেই ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সিডিএর নোটিসের জবাবে আদালতের মাধ্যমে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। সিডিএ আইনিভাবে সেই স্থগিতাদেশ বাতিল করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। তিনি আরও বলেন, এ নগরে যারাই সিডিএর অনুমোদিত নকশার পরিবর্তন ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে এভাবেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এখন এ ভবনের কতটুকু ভাঙা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিডিএ থেকে অনুমোদিত নকশার বাইরে তারা যা নির্মাণ করেছে, আমরা সেসব অংশ ভেঙে দিচ্ছি।
এদিকে গতকাল উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, ভবন নির্মাণকারীরা পুরো পাহাড়টি কেটে ফেলেছে। এতদিন সংবাদকর্মীরা এ ভবনে প্রবেশের সুযোগ পেত না। পাহাড়ের ঢালে গড়ে ওঠা প্রথম টাওয়ারটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অনেক বেশি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড় কেটে সেই স্থানের ওপর পলিথিন দিয়ে রাখা হয়েছে।