মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

আলোকস্বল্পতায় ঝুলে রইল শিরোপা

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০১ এএম

তুমুল বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকল এক ঘণ্টা দশ মিনিট। এরপর শুরু হলেও অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিট পর রেফারি সায়মন হাসান খেলা স্থগিত করলেন আলোক স্বল্পতার কথা বলে। ফেডারেশন কাপের ভাগ্য তাতে ঝুলে গেল। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনীর শিরোপা লড়াইয়ের বাকিটা কবে হবে তা বাফুফে জানাবে পরে। এর আগ পর্যন্ত ম্যাচটি ১-১ গোলে অমীমাংসিত অবস্থায় থমকে গেছে। যা কোনোভাবেই মেনে নিতে চায়নি আবাহনী। কারণ বাকিটা সময় প্রতিপক্ষ বসুন্ধরা কিংসকে খেলতে হতো দশজন নিয়ে। অতিরিক্ত সময়ের ১২ মিনিটে কিংস ১০ জনের দলে পরিণত হয় ফয়সাল আহমেদ ফাহিম আবাহনী ফরোয়ার্ড সুমন রেজাকে বাজে ট্যাকল করে সরাসরি লালকার্ড দেখায়। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আবাহনী চেয়েছিল অতিরিক্ত সময়ের বাকি ১৫ মিনিটে জয় তুলে নিতে। তবে ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামের শেষ বিকেলে রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হতে হয়েছে আবাহনীকে।

এই ফাইনালে আবাহনী নেমেছিল ১৩তম শিরোপার লক্ষ্যে। আর বসুন্ধরা কিংসের চোখ ছিল চতুর্থ শিরোপায়। ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সায়মন হাসান। তাই অনুমিতভাবেই ছিল কার্ডের ছড়াছড়ি। প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধ মিলিয়ে ১১ কার্ড প্রদর্শিত হয়েছে। উত্তেজনা ছড়ানো এই ম্যাচে বৃষ্টি বাদ সাধার আগে প্রায় পাঁচ মিনিট বন্ধ থেকেছে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায়।

অফিস দিনে ম্যাচ। তারপরও ময়মনসিংহের স্টেডিয়াম পাড়ায় আগ্রহীর কমতি ছিল না। স্টেডিয়ামে প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক শুরুতে রোদে পুড়ে, পরে বৃষ্টিতে ভিজে চেয়েছিল শিরোপা উৎসব দেখতে। সমর্থক সংখ্যায় সমতা ছিল বলতে গেলে। তবে তাদের ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে, রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেখে।

প্রথম কোয়ালিফায়ারে আবাহনীর কাছে হারা বসুন্ধরা ফাইনালে উঠে এসেছিল রহমতগঞ্জকে অতিরিক্ত সময়ে ইনসানের গোলে হারিয়ে। ফাইনালটাও অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় নির্ধারিত সময়ে ১-১ থাকায়। দুটি গোলই হয়েছে প্রথমার্ধে। বসুন্ধরা শুরুটা করেছিল আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে। চতুর্থ মিনিটে সাদ উদ্দিনের ফ্রিকিক অল্পের জন্য পোস্টে থাকেনি। দুই মিনিট পর তার ফ্রি-কিকেই নিখুঁত হেডে বসুন্ধরা কিংসকে এগিয়ে নেন আর্জেন্টাইন হুয়ান লেসকানো। তবে ম্যাচের ১৫ মিনিটে আবাহনীকে সমতায় ফেরান মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তার গোলের বড় কৃতিত্ব অবশ্য পাবেন এমেকা ওগবাহ। তিন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে দ্রুত বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে গোলমুখে থালায় সাজানো পাস বাড়ান নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড। তাতে গোলের আনুষ্ঠানিকতা সারেন ইব্রাহিম।

ম্যাচের ৩৮ মিনিটে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে দুদলের ফুটবলারদের মধ্যে শুরু হয়েছিল সংঘর্ষ। তাতে খেলা বন্ধ থাকে প্রায় পাঁচ মিনিট। দুদলকে নিরস্ত করার পর রেফারি সায়মন হাসান চারটি হলুদ কার্ড দেখান দুদলের চার ফুটবলারকে। এর আগে আরও চারটি কার্ড দেখিয়েছিলেন তিনি।

বিরতি থেকে ফেরার পর মাত্র দুই মিনিট খেলা চালাতে পেরেছিলেন রেফারি। এরপরই শুরু হয় ঝড়ো বাতাস আর তুমুল বৃষ্টি। ঝড়ো হাওয়া উড়িয়ে নেয় দুই ডাগআউট ও সাইড বোর্ডগুলো। এক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে পানি জমে মাঠে। তাতে মনে হচ্ছিল আর খেলা সম্ভব হবে না। তবে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট পর ঠিকই খেলা শুরু হয়। খেলা শুরুর প্রথম মিনিটেই গোল পেতে পারত বসুন্ধরা। তবে আবাহনী কিপার মিতুল মারমার দৃঢ়তায় গোল পায়নি কিংস। বাঁ দিক থেকে সোহেল রানা সিনিয়রের ক্রসে রাকিবের হেড এক ড্রপে জালে প্রবেশের আগে মিতুল ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে আবাহনীকে রক্ষা করেন। ৬৫ মিনিটে তিতার জোড়া পরিবর্তন। চন্দনের জায়গায় জোনাথন ফার্নান্দেজ এবং ইভান্স ইতির জায়গায় মাঠে যান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। ৭৭ মিনিটে লেসকানোর জায়গায় নামানো হয় দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার্সে কিংসের জয়ের নায়ক ইনসান হোসেনকে। এই পরিবর্তনেও খুব বেশি লাভ হয়নি। বরং শেষ দিকে আবাহনী বারবার হামলে পড়েছে কিংসের রক্ষণে। ম্যাচের ৮২ মিনিটে অবশ্য সোহেল রানা ভালো সুযোগ নষ্ট করেন বসুন্ধরার হয়ে। ফাহিমের ক্রস পেয়ে রাকিব বল বাড়ান সোহেলকে। ভালো জায়গা থেকে তার শট পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। পাঁচ মিনিট পর আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান প্লে-মেকার রাফায়েল আগুস্তোর ফ্রিকিকে ঠিকঠাক পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন ফরোয়ার্ড সুমন রেজা ও এমেকা। পরের মিনিটে রাফায়েলের কাটব্যাক জমে থাকা পানিতে আটকে যাওয়ায় সুমন রেজার পায়ে আসেনি। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এরপরই ঘটে ফাহিমের লাল কার্ড দেখার ঘটনা। ১১২ মিনিটে অফ দ্য বলে সুমন রেজাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে সরাসরি লালকার্ড দেখেন বদলি ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।

অতিরিক্ত সময়ের ১৫ মিনিট শেষ হওয়ার পর রেফারি খেলা আর শুরু করেননি। বেশ কিছুক্ষণ ম্যাচ কমিশনার ও বাফুফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। সে সময় আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুকে দেখা যায় তাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়াতে। একটা সময় মেজাজও হারান। তবে পরে রেফারি সহকারীদের নিয়ে মাঠ ছেড়ে যান। এ সময় স্টেডিয়ামের মাইকে ম্যাচ স্থগিতের ঘোষণা আসে। ম্যাচের বাকি সময় খেলার দিনক্ষণ পরে বাফুফে জানাবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত