বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

স্থলে প্রথম খনন হচ্ছে গভীর গ্যাসকূপ

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ এএম

গ্যাস অনুসন্ধানে দেশে প্রথমবারের মতো স্থলভাগে প্রায় ৫৭০০ মিটার গভীরে কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জরিপে গ্যাসের মজুদের প্রমাণ মিলেছে সেখানে। চলতি বছরেই এই খনন কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কর্মকর্তারা।

গভীর কূপ খনন নিয়ে বড় আশাবাদী জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা এবং বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশীয় কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়বে। এতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত উচ্চমূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখবে।

পেট্রোবাংলার সূত্রমতে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) দুটি গভীর অনুসন্ধান কূপ (তিতাস-৩১ ও বাখরাবাদ-১১) খনন করবে। খনন কাজের জন্য ইতিমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকার দেবে ৫৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং বাকি ২৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পেট্রোবাংলার অধীনস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিজিএফসিএল।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্প অনুমোদনের পর এখন আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দ্রুতগতিতে সব কাজ চলছে। আশা করছি এ বছরের মধ্যে খনন কাজ শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় তিতাস-৩১ নামের কূপটি ৫ হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ৭০০ মিটার গভীরে খনন করা হবে। আর বাখরাবাদ-১১ কূপের খনন গভীরতা হবে ৪ হাজার ২৬০ থেকে ৪ হাজার ৪৬০ মিটার। সিসমিক সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কূপ দুটিতে দৈনিক যথাক্রমে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ১০ মিলিয়ন ঘনফুটসহ মোট ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে আশা করছি। তবে খনন কাজ শেষ হওয়ার পর গ্যাসের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।’  তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এত গভীরে গ্যাস কূপ খনন করা হয়নি। আমরা আশা করছি, সফল হব এবং এখান থেকে উত্তোলনকৃত গ্যাস দেশের চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রাখবে।’

ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৯০০ মিটার পর্যন্ত গভীরে গিয়ে গ্যাস কূপ খনন করা হয়েছে। ৫ হাজার মিটারের নিচে কী আছে সেটা এখনো দেখা হয়নি। পরীক্ষামূলক হলেও এ ধরনের গভীর কূপ খনন করা উচিত। কারণ ওই জোনে গ্যাস পাওয়ার বড় সম্ভাবনা থাকে। সরকারের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

গভীর কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করা শুরু হলে বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

বিজিএফসিএলের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশে এখন পর্যন্ত ভুবম ও বোকবিল ফরমেশনে গ্যাস কূপ খনন করা হয়েছে। কিন্তু বরাইল ফরমেশনে এখন পর্যন্ত কোনো কূপ খনন করা হয়নি। এই ফরমেশনের গভীরতা ৫ হাজার মিটার বা তারও বেশি। এটি মূলত ড্রিপ ড্রিলিং জোন হিসেবে পরিচিত। এখানে উচ্চ তাপ ও চাপ থাকে। বিজিএফসিএল এ ধরনের কূপ খনন করবে, যেখানে ২ হাজার ৫০০ অশ্বক্ষমতাসম্পন্ন রিগ ব্যবহার করা হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্যাস মাটির অনেক নিচে তৈরি হয়। তাই যত নিচে যাওয়া যাবে ততই গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাছাড়া পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের আগরতলায় গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। সুতরাং বিজিএফসিএলের এই গভীর কূপ খননের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

বিজিএফসিএল সূত্রমতে, চলতি বছরের শেষ দিকে তিতাস-৩১ কূপটি খননের মধ্য দিয়ে দেশে গভীর কূপ খননের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।

এদিকে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড আরও দুটি গভীর কূপ (শ্রীকাইল-১ ও মোবারকপুর-১) খনন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কূপের গভীরতা প্রায় ৬ হাজার মিটার হবে। এই দুটি কূপেও গ্যাসের সন্ধান মিলেছে প্রাথমিক জরিপে।

বর্তমানে দেশে প্রায় ৪২০ কেটি ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। যার মধ্যে গড়ে ৮০-৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস চড়ামূল্যে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে পাওয়া যাচ্ছে। দেশীয় গ্যাসের মজুদ ক্রমেই কমছে। অন্যদিকে চাহিদা বাড়ছে। ফলে দিনে দিনে গ্যাসসংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাসাবাড়ি থেকে সবক্ষেত্রে গ্যাস নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত