মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

‘রাজনৈতিক সহিংসতায়’ তিন মাসে নিহত ৪৭

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০০ এএম

জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসে ৩২৫টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে অন্তত ৪৭ জন। দুষ্কৃতীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় মারা গেছে ৩০ ব্যক্তি। এ ছাড়া এই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৪০ নারী, যাদের মধ্যে ১৪৬ জনই কন্যাশিশু। পাশাপাশি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে গণপিটুনির ঘটনা। গত তিন মাসে গণপিটুনিতে ৩১ জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গতকাল বৃহস্পতিবার মানবাধিকার-সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ মাসে কমপক্ষে ৩২৫টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’র ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার ৪৭৫ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার ৩২৫টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ১৯০টি ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৭ জন। আহত হয়েছে ১ হাজার ৬৭৩ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৮ জন, আহত হয়েছে ২৭৩ জন। বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ১৪৭ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি- এনসিপির মধ্যে পাঁচটি সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৪ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলের ছয়টি ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ৯১ জন আহত হয়েছে। পাশাপাশি দুষ্কৃতীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অন্তত ৩৪টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের ১২, বিএনপির ১৩, জামায়াতের ১ জন নারী সদস্য ও চরমপন্থি দলের ৪ জনসহ অন্তত ৩০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৪০ জন। যাদের মধ্যে ১৪৬ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। ১৩৭ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন মাসে ৬৭টি ঘটনায় ৯১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ৫৮ জন। এ ছাড়া ১০টি মামলায় ২৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

২০২৫-এর প্রথম তিন মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১৮টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে পাঁচজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে।

গত তিন মাসে গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এইচআরএসএস বলছে, এ সময়ে ৭০টি ঘটনায় অন্তত ৩১ জন নিহত ও ৬৪ জন আহত হয়েছে।

এইচআরএসএসের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, তাদের হেফাজতে ও নির্যাতনে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের নামে তিন ও নির্যাতনে চারজন নিহত হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে কমপক্ষে ৫৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪ হাজার ১৭৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৮ হাজার ২৯১ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন মাসে রাজনৈতিক মামলায় কমপক্ষে ১৪ হাজার ৩১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্তত ১৪ হাজার ২৬৬ জন। পুলিশ গত তিন মাসে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের অন্তত ৪৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত তিন মাসে ৮৬টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৪৫ জন নিহত এবং ২৯৪ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাতটি হামলার ঘটনায় দুজন আহত ১০টি প্রতিমা ভাঙচুর ও দুটি জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে।

এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে না পারলে মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত