চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে বাঁধটি এক সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভাঙনের কারণে এই সেচ প্রকল্পের ৫ হাজার ১০০ হেক্টর ফসলি জমি হুমকির মুখে রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণের কারণে ও প্রবল স্রোতে জহিরাবাদ ইউনিয়নের জহিরাবাদ লঞ্চঘাট থেকে সোনারপাড়া-সানকিভাঙ্গা পর্যন্ত; ফরাজী কান্দি ইউনিয়নের চরমাছুয়া, জনতার বাজার এলাকা, ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল থেকে কালীপুর বাজার পর্যন্ত; বাগানবাড়ি ইউনিয়নের নবীপুর হয়ে হাফানিয়া খাগুরিয়া পর্যন্ত এবং ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের ঠেটালিয়া-সিপাইকান্দি এলাকায় মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতীরের বাঁধের মোট প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া একলাশপুর ও মোহনপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের বোরচর, চরউমেদ, নাছিরারচরে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সল মাহমুদ জানান, ভাঙনের কারণে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ৫ হাজার ১০০ হেক্টর ফসলি জমি হুমকির মুখে রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, ভাঙনের কারণে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকির মুখে রয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে আরও শত শত বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। সোনারপাড়া এলাকার ওমর ফারুক (৪৮) জানান, মেঘনা নদীর জহিরাবাদ লঞ্চঘাট থেকে উত্তর দিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখানে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ষাটনল ইউপির চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম সরকার জানান, ধনাগোদা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল, কালীপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী শাহীন জানান, মেঘনা ও ধনাগোদা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প আজ হুমকির মুখে। ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর ও ফসলি জমি।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ বলেন, ‘মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা আমরা পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিলে আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।’
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, নদীভাঙনের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। মেঘনা ও ধনাগোদা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু কাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও এর তীররক্ষায় এই নদীগুলো থেকে অবৈধভাবে বালু কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।