মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়ের ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিসিবির সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ বললেন তামিম ইকবাল। মাঠে হৃদয়ের একটি ঘটনার জেরে শাস্তি, সেটির পরিবর্তন, আবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে বিসিবির পদক্ষেপে বিস্মিত সাবেক এই অধিনায়ক। শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্রিকেটারদের এক বৈঠকে তামিমের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে। পরে যুক্ত হন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও। ছুটির দিনে মাঠে খেলা না থাকলেও ক্রিকেটারদের আগমনে তৎপর হয়ে ওঠেন সংবাদকর্মীরাও।
বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কথা বলেন তামিম ইকবাল। তিনি বলেন, ‘আমরা যে কারণে সবাই একসঙ্গে হয়েছি, সেটা হলো সর্বশেষ দুই তিন মাসে কিছু কিছু ঘটনা হচ্ছে যেটা নিয়ে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মনে একটা কষ্ট ছিল। খেলোয়াড়রা সবাই খুবই অখুশি। যে ধরনের ব্যবহার বা যে ধরনের কাজ হচ্ছিল আমি দুই তিনটা পয়েন্ট আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারব।’ গত ১২ এপ্রিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালে হৃদয়ের সঙ্গে মাঠে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বিসিবি। পরে তা কমিয়ে এক ম্যাচ করা হয়।
এর জের ধরে আইসিসির এলিট প্যানেলে বাংলাদেশের একমাত্র আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত বিসিবির চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের পদ ছাড়েন সাবেক আন্তর্জাতিক আম্পায়ার ও জাতীয় ক্রিকেটার এনামুল হক মণি। বিতর্ক উসকে যায় আরও। বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার মিঠু বিসিবির ভুল স্বীকার করেন। টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের পদে আসেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ফলে আবারও নিষেধাজ্ঞা আসে হৃদয়ের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে মাঠে ইনসিডেন্ট হয়, ওকে দুটো ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড করে। তখন কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বা কেউ এটা নিয়ে কথা বলেনি। আম্পায়ার আর ম্যাচ রেফারি মিলে তাকে সাসপেন্ড করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা মনে করতে পারি সিদ্ধান্তটা কঠোর ছিল। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা কিন্তু কেউ কোনো কথা বলিনি। তার কিছুদিন পর দেখলাম যে দুই ম্যাচ থেকে এক ম্যাচ করা হলো। এটা বিসিবি করেছে, তখনো আমরা কেউ কোনো কথা বলিনি। তারপর হৃদয় একটা ম্যাচ না খেলে তারপর দুটো ম্যাচ খেলল। স্বাভাবিকভাবে ওর যে শাস্তি ছিল, সেটা সে ভোগ করেছে। এখন দুটো ম্যাচ খেলার পর কাল (বৃহস্পতিবার) শুনলাম সে আবার নিষিদ্ধ। এটা কোন রুলে, কীভাবে, আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। এটা হাস্যকর ছিল।’
এদিন শুধু হৃদয় নয়, সম্প্রতি ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে বোর্ডের আচরণ এবং তাদের দিয়ে মিডিয়ার সামনে ঘটনাটি অভিনয় করিয়ে দেখানোর বিষয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তামিম। ‘শাইনপুকুর-গুলশান ম্যাচে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, ঠিক আছে, তদন্ত হোক। যারা দোষী, শাস্তি পাক। কিন্তু দুজনকে মিডিয়ার সামনে এনে অভিনয় করিয়ে দেখানো, এটা ক্রিকেটারদের অপমান। বিশ্বের কোনো অ্যান্টি-করাপশন ইউনিট এমন করে না।’ বিপিএলে ফিক্সিং নিয়ে ক্রিকেটারদের নাম ও ছবি ফাঁস করে দেওয়াতেও ক্ষুব্ধ তামিম ও অন্যরা। ‘বিপিএলেও দশ জনের নাম মিডিয়াতে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই চাই ওখান থেকে কেউ যদি দোষী হয় তার শাস্তি হোক। তার যতদূর শাস্তি দেওয়া সম্ভব দেওয়া হোক। কিন্তু ওখানে দুটো নির্দোষ বা আটজন নির্দোষ তাদের নামগুলো লিক করে দেওয়াও ইনসাল্টিং। এই প্রত্যেকটা জিনিস নিয়ে আমরা হতাশ ছিলাম। এ জিনিস নিয়ে আমরা প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছি আসতে, উনি এসেছেন সঙ্গে আরও দুজন পরিচালক ছিলেন। আমরা লম্বা আলোচনা করেছি। আমাদের পয়েন্ট তুলে ধরে উনাকে বলেছি আমরা আপসেট। হৃদয়ের বিষয়টা আমরা বলেছি যে এটা কোনোভাবে হয় না। হ্যাঁ প্রথমে দু ম্যাচ হয়ে গেলে সেটা ঠিক ছিল। কিন্তু এক ম্যাচ করে দু ম্যাচ খেলতে দিয়ে আবার করা এটা আসলে হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে। সব ক্রিকেটার এক হয়েছে কারণ দুই তিন মাসের ঘটনাগুলো সবাই বদার হচ্ছিল।’
তামিমের মতে, দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার ক্রিকেটাররাই। তাদের সঙ্গে এমন আচরণ কাম্য নয় বলেও জানান তামিম। ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠকের পর তাওহীদ হৃদয়ের সেই এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা এক বছর পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শুক্রবার বিসিবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় আগামী বারো মাসের মধ্যে এই শাস্তি ভোগ করতে হবে তাকে। আজ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ডিপিএলে সুপার লিগের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে মাঠে নামবেন মোহামেডান অধিনায়ক।