বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

হামজা বরণে প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় স্টেডিয়াম

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৮ এএম

নাম বদলেছে। বদলে গেছে ভেতরের চিত্রও। বদলায়নি শুধু বাইরের পরিবেশ। মতিঝিল ও গুলিস্তানের কেন্দ্রে জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেতরে দীর্ঘ সময় ধরে চলছে সংস্কারকাজ। শুরুতে বাজেট ছিল ৯৮ কোটি টাকা। চার বছর ধরে ঢিমেতালে চলা সংস্কারের বাজেট বাড়তে বাড়তে ঠেকেছে ১৬০ কোটিতে। সংস্কারের শেষ পর্যায়ে এসে বেড়েছে কাজের গতি। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ইচ্ছা ১০ জুন এই মাঠেই হোক হামজা চৌধুরীর ঘরের মাঠে অভিষেক। সেই ইচ্ছে পূরণে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে মাঠ, গ্যালারিসহ অবকাঠামো সংস্কারের কাজ। এএফসির ম্যাচ কমিশনারের চাহিদাপত্র অনুযায়ী হচ্ছে কাজ। ১০ মের মধ্যে চাহিদা পূরণের একটা সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যদিও নতুন ফ্লাডলাইট স্থাপনের পুরো কাজ এখনই শেষ হবে না। তারপরও এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজনে ন্যূনতম যতটুকু আলোর প্রয়োজন সেটা নিশ্চিতে কাজ করছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

কেবল ফ্লাডলাইট নতুন নয়, ক্যানোপি (ছাদ) স্থাপনের কারণে মাঠে যাতে আলোর কমতি না থাকে তাই বাফুফের অনুরোধে সেখানেও লাইট বসানোর পরিকল্পনা করেছে ক্রীড়া পরিষদ। যদিও ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জাতীয় দলের ম্যাচের আগে ক্যানোপিতে লাইট স্থাপনের কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পরিষদের প্রকৌশলী। এদিকে ২০১১ সালে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য বসানো চেয়ারগুলো তুলে নিয়ে গ্যালারিতে বসেছে নতুন চেয়ার। সাধারণ গ্যালারি, ১৪টি হসপিটালিটি বক্স ও অন্যান্য স্ট্যান্ডে বসানো হচ্ছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার চেয়ার।

নতুন বসানো লাল-সাদা ক্যানোপি, চেয়ার, অ্যাথলেটিক ট্র্যাক আর সবুজ ঘাসের উপস্থিতিতে স্টেডিয়ামের ভেতরের চেহারা বদলে গেছে অনেকটাই। বদলেছে ড্রেসিং রুম, প্রেসবক্সের সুযোগ-সুবিধাও। প্রতিটি ড্রেসিং রুমে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০টি করা হয়েছে। পুরনোটা ভেঙে গড়ে ওঠা নতুন প্রেসবক্সের আসন সংখ্যা বাড়ানো হলেও নকশাবিদ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ভুলে প্রেসবক্সে রয়েছে বড় ত্রুটি। প্রেসবক্সের সামনে পিলার থাকায় ভেতরের সব জায়গা থেকে মাঠ শতভাগ দেখার সুযোগ থাকছে না।

ফ্লাডলাইট স্থাপন প্রসঙ্গে ক্রীড়া পরিষদের প্রকৌশলী কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘চারটি টাওয়ারে আমরা ফ্লাডলাইট বসানোর কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। এরপর এইমিং করার পর বোঝা যাবে কত লাক্স আলো পাওয়া যাবে। এএফসির ম্যাচ কমিশনারের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা বলেছি ১৬০০ থেকে ১৮০০ লাক্স আলো এ মুহূর্তে ফ্লাডলাইট দিতে পারবে। আমরা আশা করছি ২২ মের মধ্যে ফ্লাডলাইটসহ পুরো স্টেডিয়াম বাফুফের কাছে বুঝিয়ে দিতে পারব। ক্যানোপির লাইটগুলো স্থাপনের পর ২৫০০ লাক্স আলো পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’ এদিকে ম্যাচ কমিশনারের কক্ষের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এটা দ্রুতই করে ফেলা যাবে বলে জানিয়েছেন পরিষদের আরেকজন প্রকৌশলী।

মাঠ প্রস্তুতের কাজ পরিষদ দিন দশেক আগে দিয়েছে বাফুফেকে। অথচ মাঠের দায়িত্ব আরও আগেই চেয়েছিল ফুটবল প্রশাসন। শেষ মুহূর্তে পাওয়ায় খুব বেশি উন্নয়ন তারা করতে পারছে না। জানা গেছে, একেবারে শুরুতে ঘাস বাবদ তেমন বরাদ্দ রাখেনি ক্রীড়া পরিষদ। শুরুতে নিম্নমানের ঘাস বুনে ভীষণভাবে সমালোচিত হতে হয়। পরে সেগুলো উত্তোলন করে কয়েক জাতের ঘাস লাগানো হয়। ফলে মাঠের ঘাস নিয়ে একটা অসন্তুষ্টি থেকেই যাচ্ছে। বাফুফে শেষ মুহূর্তে দায়িত্ব পেয়ে কিছুটা জাতে তোলার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। একজন মাঠকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাঠের দায়িত্ব আমরা অন্তত ৩-৪ মাস আগে পেলে খুব ভালো পর্যায়ে নিতে পারতাম। এখন নানা জাতের ঘাস রেখেই আমাদের মাঠ প্রস্তুত করতে হচ্ছে। এত কাজ হলো, মাঠটা মনমতো হলো না, এটাই আক্ষেপ।’ ১৬০ কোটি টাকা বাজেটে যেখানে একটা নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা সম্ভব, সেখানে জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেতরে কেবল হয়েছে সংস্কারকাজ। বাইরের বাজারে সয়লাব পরিবেশ বরাবরের মতোই হতাশা জাগানিয়া। এ নিয়ে আক্ষেপ আছে খোদ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্তাদের মধ্যেও।  তারপরও ১০ জুন এই জাতীয় স্টেডিয়াম থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠ মাতাতে নামবেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ তারকা হামজা চৌধুরী। আরও কিছু প্রবাসী ফুটবলারকেও দেখা যেতে পারে খেলতে। হামজাকে নিজ আঙিনায় খেলতে দেখার ভক্তদের আকাক্সক্ষা পূরণে আউটার স্টেডিয়াম, বাফুফে ভবনসহ বেশ কিছু স্থানেও বড় স্ক্রিনে খেলা দেখানোর পরিকল্পনা জানিয়েছেন বাফুফে কম্পিটিশনস কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম গাউস।

এর সঙ্গে দুদলের নিরাপত্তা নিশ্চিতও তাদের বড় মাথাব্যথা। সব মিলিয়ে সংস্কার যেমনই হোক, দীর্ঘ বিরতির পর জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবলের প্রত্যাবর্তনটা হবে জমজমাট।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত