মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

আশ্বাসের মুলায় জবির উন্নয়ন

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৯ এএম

অনেক দিন ধরে নানা অনিয়মে এবং দুর্ভোগে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হলবিহীন ছোট্ট ক্যাম্পাসকেই তারা করে নিয়েছে নিজেদের ঠিকানা। সমস্যায় জর্জরিত জবির শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাগবের জন্য রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ২০০ একর জবি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু আট বছরেও নির্মিত হয়নি সেই ক্যাম্পাস।

গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জবির শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপাচার্য নিয়োগ করা হয় যাতে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া পূরণ হয়; আবাসন সমস্যাসহ যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু তা হয়নি, ফলে শিক্ষার্থীরা আশাহত হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব উন্নয়ন কার্যক্রমই এখন ঝুলে আছে।

এমন পরিস্থিতিতে আবার আন্দোলন শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তিন দফা দাবিতে অনশন শুরু করেছিল তারা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা; শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা ও অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত অন্তত ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীকে আবাসনভাতা দেওয়া।

জবির শিক্ষার্থীরা এখন অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক (অ্যাকাডেমিক) ও প্রশাসনিক কাজে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এর আগে সারা দিন-রাত অনশন করে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সকাল থেকে সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছিল শিক্ষার্থীরা। এর আগে সেনাবাহিনীর কাছে সব নির্মাণকাজ হস্তান্তরসহ তিন দাবি পূরণে এক ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা।

এরপর সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ক্যাম্পাসের কাজের অগ্রগতির দেখা মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অগ্রগতির কোনো বার্তা শিক্ষার্থীরা পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পরিবর্তিত পরিপ্রেক্ষিতে অভিনব কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের সামনে গত ২২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারা তিনটি দাবি নিয়ে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। দাবিগুলো হলো ১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বাড়ানো এবং ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনবৃত্তি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা; ‎‎২. পুরান ঢাকায় হাবিবুর রহমান হল ও বাণী ভবনের নির্মাণকাজ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শুরু করা এবং ‎‎৩. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও হল নির্মাণের কাজের অগ্রগতি প্রতি ১৫ দিন পরপর মুক্তমঞ্চে ঘোষণা করতে হবে।

‎‎অনেক দিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও সুরাহা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল বিকেলে শিক্ষার্থীরা কাঁথা ও বালিশ নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করে এবং তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেয়।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য : তাদের আবাসনসংকটের সমাধান না করে প্রশাসনিক ভবনে ৪০ লাখ টাকা খরচ করে লিফটের কাজ চলছে। অথচ তাদের আবাসনসংকটজনিত ভোগান্তির দিকে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের নজর নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা ব্যঙ্গ করে মুলার ফলনের বিভিন্ন ছবি ব্যবহার করছে এবং বলছে প্রশাসন তাদের বরাবরের মতো মুলাই দেখিয়ে যাচ্ছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আলম দোলা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা সমস্যায় ভুগছি। আমাদের আবাসনের ব্যবস্থা এখনো করতে পারেনি প্রশাসন। আমাদের কয়েক ঘণ্টা বাসে জার্নি করে ক্যাম্পাসে আসতে হয়। অথচ প্রশাসনিক ভবনে লিফট বসছে। বারবার আমাদের মুলা দেখাচ্ছে প্রশাসন।’

ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমরা আর আশ্বাস চাই না। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ এবং ৭০ শতাংশ আবাসন নিশ্চিত করতে চাই। পরবর্তী বাজেটে যেন তা যুক্ত করা হয়। দাবি আদায় না হওয়া অবধি আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে ওপরমহলে দেনদরবার করতে হয়। সম্ভবত আমাদের প্রশাসন তা করতে পারছে না। যদি পারত তাহলে এত বড় আন্দোলনের পরও আমাদের অস্থায়ী আবাসন, আবাসন-ভাতার ব্যবস্থা করতে পারত। প্রশাসনের একটা অংশের মধ্যে গড়িমসি ভাব দেখা যাচ্ছে, যা আওয়ামী প্রশাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজটা এগিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া আছে। সেনাবাহিনী এ কাজের প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমি যতটুকু বুঝি কাজটা একবারে শেষ পর্যায়ে আছে। সরকারি কাজের অনেক স্টেপ আছে, পরিকল্পনা আছে। সংশোধিত আরডিপিপি পাস হওয়ার শেষ পর্যায়ে আছে। এরপরই ফিল্ডের কাজ শুরু হবে। বাণী ভবন ও হাবিবুর রহমান হলের অস্থায়ী আবাসনও হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগের প্রশাসনের সময় লিফট স্থাপনের জন্য বাজেট পাস হয়েছিল। এখন লিফটের বরাদ্দকৃত টাকা যদি লিফট স্থাপনের খাতে ব্যয় করা না হয় তাহলে টাকা চলে যাবে। লিফটের জন্য বরাদ্দ টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে লিফট স্থাপনের বিষয়ে অনিচ্ছুক ছিলাম। শিক্ষার্থীরা না চাইলে প্রশাসন লিফট বসাবে না।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত