শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় কারখানা বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। শিল্পমালিকদের সংগঠনটি বলছে, কারখানাগুলোতে ন্যায্যতার ভিত্তিতে গ্যাসের সরবরাহ করা না হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মিলকারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে শ্রমিকদের বেতনভাতা ও বোনাস পরিশোধে সংকট তৈরি করতে পারে। যা শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফওজুল কবির খানের কাছে গ্যাস সংকটে কারখানাগুলোর বর্তমান চিত্র তুলে ধরে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি মন্ত্রণালয়কে শিল্প খাতের জন্য ন্যায্য ও আনুপাতিক হারে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, গ্যাস সরবরাহ সংকট অব্যাহত থাকলে ব্যাপকভাবে কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
চিঠিতে উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, সম্প্রতি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ বাড়িয়েছে। এর প্রভাবে নোমান গ্রুপের ২৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই উৎপাদন প্রায় বন্ধের পর্যায়ে রয়েছে। বাকিগুলো উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যা এই শিল্পের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চিত্র, যা ব্যাপক উদ্বেগজনক।
চিঠিতে শওকত আজিজ বলেন, পেট্রোবাংলার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, তিতাস পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস শিল্প খাতে সরবরাহ করেছে, একই সময়ে বিদ্যুৎ ও সার খাতে গ্যাস সরবরাহ সেই পরিমাণে বেড়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আবাসিক খাতে গ্যাস সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার পরও শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ অনুপাতে কমানো হয়েছে।’ গ্যাস সরবরাহ সীমিত হওয়ায় রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল মিলগুলো প্রত্যাশিত উৎপাদন বজায় রাখতে পারছে না। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে অনেক টেক্সটাইল মিল চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার ফলে ঈদুল আজহার আগে শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস পরিশোধে বিঘœ ঘটবে।
সম্প্রতি জ¦ালানি উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো অন্য একটি চিঠিতে বিটিএমএ বলছে, দেশের টেক্সটাইল মিল মালিকরা ক্যাপটিভ পাওয়ার গ্যাস সংযোগের জন্য বাল্ক ভোক্তার সীমা বিদ্যমান ১০ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২০ মেগাওয়াট করার দাবি জানিয়েছেন। তারা ২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) নেওয়ার বাধ্যবাধকতাও প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।
শওকত আজিজ রাসেল তার চিঠিতে ক্যাপটিভ গ্যাস সংযোগের জন্য নিরাপত্তা জামানত সম্পর্কেও পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমানে দুই মাসের সমপরিমাণ বিলের সমান নিরাপত্তা জামানতের পরিবর্তে এক মাসের বিল সমপরিমাণ নিরাপত্তা জামানত এবং পুরো টাকার জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলারে বলা হয়েছে, ১০ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার গ্যাস সংযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির এনওসি আবশ্যক।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১০ মেগাওয়াটের সীমা পুরনো হয়ে গেছে এবং এনওসি সংগ্রহের প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় শিল্প সম্প্রসারণে অপ্রয়োজনীয় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশেরও বেশি টেক্সটাইল ও পোশাক খাত থেকে আসে, যার ৭০ শতাংশের বেশি অংশ বিটিএমএ-সদস্য মিলগুলোর দ্বারা পরিচালিত। এসব শিল্পকারখানা মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর ক্যাপটিভ পাওয়ার উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। তবে গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪২ টাকা হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে।