বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

কবি দাউদ হায়দার আর নেই

আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৮ এএম

জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশের কবি দাউদ হায়দার (৭৩) মারা গেছেন। গত শনিবার (স্থানীয় সময়) রাত ৯টায় বার্লিনে শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি বার্লিনের রাইনিকেডর্ফ এলাকায় একটি ভবনের ১২ তলায় একটি ফ্ল্যাটে একাকী বসবাস করতেন।

স্বজনরা জানান, দাউদ হায়দার গত ১২ ডিসেম্বর নিজ বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। দুর্ঘটনার দিন প্রথমে স্থানীয় রাইনিকেডর্ফ হাসপাতালে, পরে নয়েকোলন হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। সেই সময় কবির পরিচিত মাইন চৌধুরীকে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি সম্ভবত পড়ে গিয়েছিলেন এবং তার মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই সময় দাউদ হায়দারকে দুই সপ্তাহ হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল এবং কৃত্রিম উপায়ে নলের সাহায্যে খাবার খাওয়ানোর ও শ্বাস-প্রশ্বাসের চেষ্টা করা হয়।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাউদ হায়দারের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে এবং জ্ঞান ফিরলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না। পরে তাকে ‘কৃত্রিম কোমা’ থেকে সাধারণ কোমায় রাখা হয় এবং তার শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।

গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে কবি দাউদ হায়দারকে বার্লিন থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রাইফভাল্ডার শহরে নিউরোলজি বা স্নায়বিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, সেখানে তাকে অনেকটা সময় থাকতে হবে। কিছুটা সুস্থ হয় উঠলে দাউদ হায়দারকে গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বার্লিনের শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকে স্থানান্তরিত করা হয়। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ক্লিনিকেই তিনি মারা যান। দাউদ হায়দারের মারা যাওয়ার পরপরই শ্যোনেবের্গ ক্লিনিকের চিকিৎসক কবির এ মৃত্যুসংবাদ মাইন চৌধুরীকে ফোন করে জানান। বার্লিন ও জার্মানিতে কবির প্রবাসী বন্ধুরা নিয়মিত তার খোঁজখবর রাখছিলেন। খুব সম্ভবত কবি দাউদ হায়দারের মরদেহ বার্লিনেই দাফন করা হবে।

কবি দাউদ হায়দারের জন্ম ১৯৫২ সালে পাবনার দোহারপাড়া গ্রামে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, লেখক ও সাংবাদিক। ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে দাউদ হায়দার দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ শিরোনামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর একই বছরের ১১ মার্চ তিনি গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে আদালতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করা হয়। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

পরে ১৯৭৪ সালের ২১ মে দাউদ হায়দারকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রথমে তিনি কলকাতায় ছিলেন। পরে জার্মান নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সহযোগিতায় ১৯৮৬ সালের ২২ জুলাই জার্মানি এসে পৌঁছান। তখন থেকেই তিনি দেশটির বার্লিন শহরে বসবাস করে আসছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দাউদ হায়দারই প্রথম লেখক, যাকে নির্বাসনে যেতে হয়। ৫০ বছর ধরে কবি দাউদ হায়দার নির্বাসনে ছিলেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত