শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চীনের সহায়তায় রাজশাহীতে পদ্মার পানি শোধনের উদ্যোগ

আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম

রাজশাহী শহরের বাসিন্দাদের ক্রমবর্ধমান সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে পদ্মা নদীর পানি শোধন করে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের সহায়তায় ইতোমধ্যে পানি শোধনের প্রকল্পটির কাজ ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, ২০২৭ সাল নাগাদ পুরো কাজ শেষে দৈনিক ২০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যাবে রাজশাহীর গোদাগাড়িতে নির্মানাধীন এই শোধনাগার থেকে।

আজ সোমবার প্রকল্প এলাকায় এর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের পাশাপাশি আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতিতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ-চায়না এক সঙ্গে কাজ করছে, ভবিষ্যতে দুদেশের সম্পর্ক আরও উন্নয়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদুত।

তিনি বলেন, গতমাসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। আগামী মাসে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে আসবেন। এ ছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ব্যসায়িক সম্মেলনে চীনের ৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এভাবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।

china

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে লবণাক্ততা, বন্যাসহ নানা সমস্যার মুখেমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অনেক এলাকায় সুপেয় পানির অভাব। আগামী ৫০-১০০ বছরের মধ্যে পানির সংকট সমাধানে কাজ করছে সরকার।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আশা পোষণ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে রাজশাহীর বাসিন্দারা সুপেয় পানি পান করতে পারবেন।

এ ধরনের প্রকল্প দেশের অন্যান্য স্থানেও বাস্তবায়ন করা হবে। সেজন্য বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদার বিশেষ করে চীন সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান সরকারের এই যুগ্ম সচিব।

রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রেজাউল আলম সরকার বলেন, রাজশাহী ওয়াসা বরেন্দ্র অঞ্চলের আওতাধীন এলাকা। এখানকার পানির স্তর খুব নিচে চলে গেছে। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ায় জীব-বৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ছে। ভূ-উপরিস্থ পানি শোধন প্রকল্প রাজশাহীর পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্প পরিচালক এবং রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. পারভেজ মাহমুদ বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার এই প্রকল্পটির মাধ্যমে কাটাখালি, নওহাটা এবং গোদাগাড়ির ৩০টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নিরাপদ সুপেয় পানির সুবিধা পাবেন। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৫ সালে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ২০২৩ সালের জুন মাসে কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৪৮ মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করতে হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৭৪৮ কোটি ও হুনান কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে।

তারা আরও জানান, ২০৩৫ সালের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ২০ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের মাধ্যমে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পানির কাভারেজ ৮৪ হতে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। পাশাপাশি জনপ্রতি দৈনিক পানি ব্যবহার ৬৫ লিটার হতে ১৪০ লিটারে উন্নীত এবং পানির গুণগত মান উন্নত হবে। সেই সঙ্গে ২০৩৫ সালের মধ্যে ওই অঞ্চলে পানি সরবরাহ শতভাগ কাভারেজের আওতায় আসবে।

অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য দেন সরকারের ইকোনমিক রিলেশন ডিপার্টমেন্টের উপসচিব আব্দুল কাদের, প্রকল্পের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক যো হুয়াইয়েন, প্রধান প্রকল্প উপদেষ্টা শু জো প্রমুখ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত