শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

শেষ বিকেলে তাইজুল ভেলকি

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৪ এএম

সারা দিনের হাঁসফাঁস, ঘাম, ব্যর্থতার পর বিকেলে হাসল বাংলাদেশ। শেষ সেশনে স্পিনারদের ঘূর্ণিতে লন্ডভন্ড হয়ে গেল জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং। তাইজুল ইসলামের পাঁচ উইকেটে অলআউট হতে হতে বেঁচেছে অতিথিরা। ৯০ ওভারে তাদের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২২৭।

বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকালে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। নতুন বল হাতে দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও টেস্ট অভিষিক্ত তানজিম সাকিব প্রথম সাফল্য এনে দিতে পারেননি। শুরু থেকেই বল হাতে আগ্রাসী ছিলেন তানজিম, কিন্তু উইকেটের মুখ দেখতে অনেক অপেক্ষা করতে হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে সচরাচর যা দেখা যায়, সিম মুভমেন্ট হলেও সেটা খুব ভয়ংকর নয়। আবার বাউন্স হলেও সেটা তুলনামূলক কম। ফলে পেসারদের বল সুইং করাতে শারীরিক পরিশ্রম একটু বেশি হয়।

ফলে পেসাররা যখন পারছিলেন না, তখন স্পিন আক্রমণে মেহেদী হাসান মিরাজ এনে দেন সম্ভাবনার আভাস। তবে সিøপে সাদমান ইসলামের সহজ ক্যাচ মিস সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। বরং প্রথম সেশনে শক্ত ভিত গড়ে তোলে জিম্বাবুয়ে, ২৮ ওভারে ৮৯ রান তোলে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে। তবে মিরাজের ওই ডেলিভারিতেই বোঝা গিয়েছিল স্পিনাররাই এখানে চালকের আসনে।

এমনিতেও চট্টগ্রামের টার্নিং উইকেটে বরাবরই স্পিনাররা বড় ভূমিকা রাখে। দুই পেসার দিয়ে শুরু করলেও দ্রুত স্পিনে ঝুঁকে পড়েছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত দিন বাঁচালেন স্পিনাররাই। এটা আবারও প্রমাণ করল, উপমহাদেশের কন্ডিশনে স্পিন আক্রমণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো সিলেট টেস্টে তিন পেসার নিয়ে খেললেও চট্টগ্রামে তিন স্পিনার নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। পরিকল্পনাতেও তারা সফল। জিম্বাবুয়ের ৯ উইকেটের ৮টিই আদায় করেছেন বাংলাদেশি স্পিনাররা। তাইজুলের একাই পাঁচটি।

দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান নিক ওয়েলচ ও শন উইলিয়ামস চোয়াল শক্ত করে ব্যাট হাতে লড়াই করেন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দুজনেই হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ওভারপ্রতি তিনের বেশি রান তুলে এগিয়ে নিতে থাকেন ইনিংস। ওয়েলচ দারুণ ব্যাট করলেও চট্টগ্রামের গরমের কাছে হার মানেন। ক্র্যাম্পের কারণে ৫৪ রানে ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে মাঠ ছাড়েন। বাংলাদেশের জন্য তা ছিল অদৃশ্য এক আশীর্বাদ।

শেষ সেশনে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। প্রথমে নাঈম হাসান অফস্টাম্পের বাইরের বল করে ক্রেইগ আরভিনকে ক্যাচ করান, এরপর দুর্দান্ত এক লাফানো ক্যাচে তানজিমের হাতে ধরা পড়েন শন উইলিয়ামস। এ দুই সেট ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়ার পর শুরু হয় জিম্বাবুয়ের পতন। এরপর মঞ্চে আসেন তাইজুল ইসলাম। ম্যাজিক দেখালেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ১৭ বলের মধ্যে তিন উইকেট-মাসাকাদজা এলবিডব্লিউ, এনগারাভাকে বোল্ড এবং প্রায় হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েও তা মিস করেন। তার ওপর রানআউটে মাসেকেসার বিদায়সব মিলিয়ে অল্প সময়েই ৪০ রানে ৭ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। তাইজুল ইনিংসে তুলে নেন পাঁচ উইকেট, টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৬তম বার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান। শেষ বিকেলে নিক ওয়েলচ আবার ব্যাটিংয়ে ফিরলেও প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান।

শুরুতে ফিল্ডিংয়ে ছন্নছাড়া ভাব, ক্যাচ মিস, সব কিছু মুছে গেছে তাইজুল-নাঈমের ঘূর্ণির জাদুতে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত